আজ : শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রভাবশালী নেতার কব্জায় রাজবাড়ীর তৃণমূল আওয়ামী লীগ


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ ,৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | আপডেট: ৫:২৭ অপরাহ্ণ ,৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
প্রভাবশালী নেতার কব্জায় রাজবাড়ীর তৃণমূল আওয়ামী লীগ

মোঃ আলমাস আলী॥  রাজবাড়ী সদর উপজেলার সকল ওর্য়াড কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনে অনিয়ম। হাইকমান্ডের নির্দেশ আমান্য করায় উপজেলা কাউন্সিল স্থগিত। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল আওয়ামী লীগে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনে হাইকমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকাংশ নেতারা কমিটি গঠন করায় সম্প্রতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাউন্সিল কেন্দ্রে থেকেই স্থগিত করা হয়েছে।

ইউনিয়ন পর্যায়ের জনবিছিন্ন কতিপয় নেতা সভাপতি-সেক্রেটারী হওয়ার আশায় তাদের আস্থাভাজন ও বলয়ভিত্তী ব্যাক্তিদেরকে ওর্য়াড কমিটিতে স্থান দিয়েছিলেন। এ ধরনের পকেট কমিটি করায় বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এসব পকেট কমিটির মাধ্যমে প্রভাবশালীদের হাত ভারি হয়েছিল মাত্র। সার্বিকভাবে দলের কোনো লাভ হচ্ছে না। তৃণমূলে শেখ হাসিনার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও শক্তি দুটোই কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন ও ওর্য়াড কমিটি গঠনে অনিয়ম-দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা হওয়ায় তৃনমূল থেকে অভিযোগ উঠে আসে। বিষয়টি রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর নজরে আসে।

“আওয়ামী লীগের এসব পকেট কমিটি রুখতে বিষয়টি নিয়ে জেলা কমিটির মাসিক মিটিংয়ের আলোচনায় স্থান পায়। সম্প্রতি, মাননীয় সংসদ সদস্য’র চেষ্টায় গত ৩/১২/১৯ইং তারিখে ধার্য্যকৃত থানা কমিটির সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।

বেশীরভাগ ইউনিয়নে নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে পকেট কমিটি ঘোষণা দেয়ার স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ও বিরোধ চলছে। অনেক স্থানে নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। এ ধরনের কমিটিকে কেন্দ্র করে গোয়ালন্দ উপজেলায় দেবগ্রাম ইউনিয়নে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে মার্ডার পর্যন্ত হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের ঘোষণা অমান্য করে দেবগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি করা হয়েছে ওই ইউনিয়নেরই চেয়ারম্যানকে।

সুলতানপুরঃ সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিদ্দিক খানসহ একধিক নেতা-কর্মীরা জেলা কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ পর্যন্ত দিয়েছেন। সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে রুমি মিয়াকে সভাপতি ও চুন্নু মিয়াকে সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে। তারা দুই জনই ব্যবসায়ীক পার্টনার। ভোট ছাড়াই তাদের দুই জনের নাম ঘোষনা করা হয়। সমপ্রতি, সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশ ও বহিরাগতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, জাপা থেকে নব্য আওয়ামী লীগে যোগদান কারিদের তালিকা করেছে দীর্ঘদিনের নিবেদিত কোণঠাসা নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফ এ তালিকা প্রকাশ করেন। বহিরাগত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বহিরাগতদেরকে দল থেকে বহিস্কারের দাবীতে সোচ্চার ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির স্বাক্ষরে জামায়াত-বিএনপি-জাপা থেকে নব্য যোগদানকারীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দল থেকে যোগদান করা নেতাকর্মীদের নামের তালিকা দলটির কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করছে। রাজবাড়ী সুলতানপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা বেশ কিছু নামের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। যার মধ্যে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের *১নং ইউনিটের নব্য সভাপতি বাকাউল হোসেন বকু, তিনি ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত পরিবারের সদস্য, তিনি ২০১৪ইং সালে বিএনপি’র নেতা থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সদ্য উক্ত ১নং ইউনিটের পকেট কমিটিতেও তিনি সভাপতি হিসাবে কৌশলে নিযুক্ত হয়েছেন। বাকাউল হোসেন বকুসহ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে রয়েছে আরো অনেকের নাম। *২নং ইউনিটের নব্য পকেট কমিটির সভাপতি আফছার উদ্দিন মিঠু একজন বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্মিলিত কাজী কেরামত আলীর নির্বাচিনী পোষ্টার পায়ের নীচে ফেলে এই আফছার উদ্দিন মিঠু মুড়িয়েছিলেন। ততকালিন ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ঘটনাটি প্রতিবাদ করায় তিনি আফছার উদ্দিন মিঠু গ্রুপের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। ২নং ইউনিটের সদ্য পকেট কমিটির মাধ্যমে সাধারন সম্পাদক পান্নু  আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি একজন মাদ্রক ব্যবসায়ী, মাদ্রক মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন, তার নামের মাদ্রক মামলা নম্বর-জিআর ৬০৯/১৮। * ৩নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি তালেব সরদার তিনি দলে অনুপ্রবেশকারী। ২০১৪ইং সালে সুলতানপুর বাজারের একটি দলীয় অফিস উপহার দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ হয়েছেন। তিনি বিএনপি পরিবার থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। * ৪নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সদ্য পকেট কমিটির সাধারন সম্পাদক মুন্নু মিয়া, তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালিন অর্থ আত্মসাত করে দুর্নীতিতে অংশ গ্রহন করেন। সম্ভাব্য আইনী ঝামেলা এড়াতেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। * ৫নং ইউনিট আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সভাপতি মিন্টু ঠাকুর, তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোক হওযা সত্তেও তিনি বিএনপি’র সাথে জড়িত। গত ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ধানের শীর্ষ প্রার্থীর নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমান বিচারধীন। * ৫নং ইউনিট আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহজাহান শেক। তিনি ২০১৪ইং সালে দলে অনুপ্রবেশকারী। * ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সভাপতি রোকনউদ্দিন, তিনিও দলে অনুপ্রবেশকারী। তিনি দোর্দন্ত প্রকৃতির লোক। হত্যাসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা বির্চারধীন। * ৭নং ইউনিটের পকেট কমিটির সভাপতি ইয়াছিন তালুকদার। তিনি অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত। নানবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। *৮নং ইউনিটের পকেট কমিটির সাধারন সম্পাদক। তিনি ইট ভাটার ডেইলী লেভার। দল পরিচালনার কোন দক্ষতা তার নেই বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। *৯নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মোল্যা। তিনি বিএনপি থেকে দলে অনুপ্রবেশকারী। ৯নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আঃ গফ্ফার সরদার। তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি কখনোই দলীয় কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নন। তিনি চায়ের দোকান্দার। এই দোকানটিই তার একমাত্র উপার্জনের উৎস মাত্র। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সুলতানপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহেদী সাহিদুজ্জামান রুমি ও সাধারন সম্পাদক লুৎফর রহমান চুন্নু মিয়ার হাত ধরে উল্লেখিত সকল অনুপ্রবেশকারী দলে যোগদান করেন মর্মে সূত্রটি জানায়। তাদের দলীয় অবস্থান টিকিয়ে রাখতেই উল্লেখিত অনুপ্রবেশকারীদেরকে দলে যোগদান করানো হয়েছে মর্মে অভিযোগ দলীয় ত্যাগি নেতা-কর্মীদের। রাজাকার পরিবারের লোকসহ বিএনপি দলের নেতা-কর্মীদেরকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে নেয়ায় সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়াও উল্লেখিত অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে যোগদান করা নিয়ে ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিত্রিুয়া দেখা দিয়েছে। সুলতাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি স্বাক্ষরিত পত্রে এসব নব্য যোগদানকারী নেতাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দ্রুত এ জামায়াত-বিএনপি থেকে নব্য যোগদানকারীদের দল থেকে বহিস্কারের দাবী জানান। সাবেক সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে এ তালিকা হচ্ছে।

                        

রাজবাড়ীতে চলমান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে সেচ্ছাচারীতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন হবার আগ পর্যন্ত রাজবাড়ীর উপজেলা গুলোর কাউন্সিল স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ।২রা ডিসেম্বর-১৯ সোমবার বিকালে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী এক স্বাক্ষাতকারে সাংবাদিকদেরকে এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ২৫ বছর সততার সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মিলেমিশে করে কাজ করছেন। অক্টোবর মাসের জেলা আওয়ামী লীগের সভায় কয়েকটি অভিযোগে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নুরুল ইসলাম মন্ডল ও কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলামকে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়, যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এবং নভেম্বরের সভায় তাদেরকে ডুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাদের বিষয়ে রেজুলেশন করে কেন্দ্রে পাঠানোর পর সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। এছাড়া সম্প্রতি ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে অনিয়ম ও কোন অতিথি ছাড়াই কাউন্সিল সম্পন্ন করা হয়েছে। দলীয় এমপি হিসেবে তাকেও জানানো হয়নি।
এসব কারণ নিয়ে গত ১লা ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় তার নের্তৃত্বে জেলার নেতারা রাজবাড়ী জেলার দ্বায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে দেখা করেন এবং জেলার সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। এরপর নওফেলসহ তারা দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের সাথে স্বাক্ষৎ করে বিস্তারিত বলেন। পরবর্তীতে ওবায়েদুল কাদের নওফেলের মাধ্যমে টেলিফোনে জেলার নেতাদের ৩রা ডিসেম্বর আয়োজিত হতে যাওয়া সদর উপজেলা কাউন্সিলসহ অন্যান্য উপজেলা ও পৌর কাউন্সিল বন্ধ ঘোষনার নির্দেশ দেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবার পর উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবার আগে আর জেলা কাউন্সিল হবার সুযোগ নাই। তাই জানুয়ারীতে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে এবং উপজেলা আর জেলা যে কাউন্সিলই হোক না কেনো কেন্দ্রীয় নেতা ছারা রাজবাড়ীতে আর কোন কাউন্সিল হতে দেওয়া হবে না।
কাজী কেরামত আলী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলে তার কাছে কাউন্সিলসহ জেলার সার্বিক বিষয় তুলে ধরবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলার বিষয় কিছু বলা হয়নি।

Comments

comments