রাজবাড়ীর ইন্দ্রারায়নপুরে অতিরিক্ত জমি মিউটেশন ও প্রতারনা করে বিক্রি করলো আফরোজা চৌধুরী!বিপদে পড়েছে ক্রেতা।
![প্রতিবেদক](http://www.janatarmail.com/wp-content/uploads/2018/03/icon-1.png)
প্রকাশিত: ৫:০৭ অপরাহ্ণ ,১২ মার্চ, ২০২৪ | আপডেট: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ ,১৩ মার্চ, ২০২৪
![রাজবাড়ীর ইন্দ্রারায়নপুরে অতিরিক্ত জমি মিউটেশন ও প্রতারনা করে বিক্রি করলো আফরোজা চৌধুরী!বিপদে পড়েছে ক্রেতা। রাজবাড়ীর ইন্দ্রারায়নপুরে অতিরিক্ত জমি মিউটেশন ও প্রতারনা করে বিক্রি করলো আফরোজা চৌধুরী!বিপদে পড়েছে ক্রেতা।](https://janotarmail.com/wp-content/uploads/2024/03/A-T-420.jpg)
স্টাফ রিপোর্টার।। ৫.০৫ শতাংশ জমি কিনে অতিরিক্ত ২.৮৯ শতাংশ সহ অবৈধভাবে ৭.৯৪ শতাংশ মিউটেশন করে খাজনা দিয়ে তাহা মোঃ জাহিদ নামের এক ব্যক্তির নিকট পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকয় বিক্রি করেছে আফরোজা চৌধুরী নামের এক প্রতারক। এখন বিপদে পড়েছে ক্রেতা জাহিদ, তার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এদিকে এই অবৈধ মিউটেশনে সহযোগিতা করেছেন আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক তহশীলদার এস, এম রেজাউল করিম। তিনি ছিলেন তদন্তকারী অফিসার। বর্তমানে তিনি পাচুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত আছেন।
১০/৪/২০১২ তারিখে রাজবাড়ী সদর সাব রেজিস্টার কার্যালয় হতে রেজিস্ট্রেশনকৃত ২৮৫৮ নং সাফ কবলা দলিল-পত্রে উল্লেখ, গ্রহিতা: আফরোজা চৌধুরী, এনআইডি নং ৮২২৭৬০৪১১৩৩৭৮। তিনি সরকারী চাকরি করেন।
দলিলসূত্রে দেখা গেছে; দাতাঃ মো. জিয়াউর রহমান শিকদার, মো. দেরাজ শিকদার, মো. শফিক শিকদার, মোছা. নাজমা বেগম, সর্ব পিতা- মৃত ফজলুর রহমান শিকদার ও মাতা মোছা. রহিমন নেছা, এবং রহিমন নেছা, স্বামী: ফজলুর রহমান শিকদার, সর্ব সাং- ইন্দ্র নারায়নপুর, পোঃ হমদমপুর, রাজবাড়ী সদর রাজবাড়ী।
উক্ত দাতারা সকলে মিলে জমি বিক্রী করছে, (ক) বিএস ২৪৭ নং খতিয়ানের ৪৪৭ নং দাগের ৯ শতাংশের মধ্যে ৫.৭০ শতাংশ বিক্রিত।
(খ) বিএস ২৪৪ নং খতিয়ানের ৪৪৬ নং দাগের ২ শতাংশর মধ্যে ১.২৫ শতাংশ বিক্রীত। এবং (গ) বিএস ২৪৬ নং খতিয়ানের ২৪২ নং দাগের ১৮ শতাংশের মধ্যে কাত ৯শঃ এবং ৪৪৩ নং দাগের ১৫ শতাংশের কাত ৭.৫০ শঃ, দুই দাগ মিলে মোট (৯+৭.৫০)= ১৬.৫০ শতাংশের কাত ৮ শতাংশ, ইহার মধ্যে ৫ শতাংশ ৫ লিংক বিক্রীত। উল্লেখিত, সকল দাগ হতে জমি বিক্রীত (৫.৭০শঃ + ১.২৫শঃ + ৫.৫শঃ) = মোট ১২ শতাংশ।
যার মধ্যে প্রতারণার মূল বিষয়টি হলো, ২৪৬ নং খতিয়ানের ৪৪২ ও ৪৪৩ নং দাগ হতে গ্রহীতা আফরোজা চৌধুরী ক্রয় করেছে ৫ শতাংশ ৫ লিংক। কিন্তু সে ৪৪২ নং দাগ হতে ৩.১৮শঃ ও ৪৪৩ নং দাগ হতে ৪.৭৬শঃ সহ মোট ৭ শতাংশ ৯৪ লিংক জমি। যাহা ২.৯৪ শতাংশ বা প্রায় ৩ শতাংশ অবৈধ মিউটেশন করে অনলাইনে খাজনা দিয়েছে এবং সেটা দিয়েই জমি বিক্রি করেছে।
এ ব্যাপারে, ভুক্তভোগী মোঃ জাহিদ বলেন, জমিটি আমি ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আফরোজা চৌধুরীর নিকট থেকে অফেরত যোগ্য পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করে নিয়েছি। এবং বিক্রির ঘোষণা দেই। তারপর থেকে বিভিন্ন সময় খরিদ্দাররা জমি দেখে জমির কাগজপত্র দেখে পিছিয়ে যায়, তারা পরে বলে কাগজপত্র ঠিক নেই।
একইভাবে গত দুই সপ্তাহ আগে এক খরিদ্দার দেখার পর কাগজপত্র নিয়ে চেক করে এসে বলে যে, আপনার দলিলে জমি আছে ৫.৫ শতাংশ আর মিউটেশনে আছে ৭.৯৪ শতাংশ, অতএব দলিলের চেয়ে মিউটেশনে বেশি আছে ২.৮৯ শতাংশ। কাগজপত্র ভ্যাজাইলা জমি কেনা যাবেনা। পরে কাগজপত্র গুলো মুহুরি ও কোর্টের আইনজীবীদেরকে দেখাইলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একই কথা বলেন। তারা বলেছেন, বিএস ২৪৬ নং খতিয়ানের ২৪২ ও ২৪৩ নং দাগ হতে আফরোজা চৌধুরি জমি কিনেছে ৫ শতাংশ ৫ লিংক, আর মিউটেশন করে নিয়েছে ৭ শতাংশ ৯৪ লিংক। প্রায় ০৩ শতাংশ জমি বেশি মিউটেশন করে প্রতারণা করেছে। তবে তহশিলদার এটা কিভাবে করলো বোধগম্য নয়! বিষয়টি নিয়ে আপনি আদালতে প্রতারণা মামলা করতে পারেন। ভুক্তভোগী জাহিদ এ প্রতিবেদককে আরও বলেন, আমার ক্ষতিপূরণ পেলে আমি মামলা করব না, আর না পাইলে প্রতারণা মামলা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী জাহিদ আরও বলেন, মিউটেশন করেছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমরা তো তাদেরকে বিশ্বাস করি, তারা মিউটেশনে হেরফের করলে আমাদের সাধারণ মানুষের তো কিছু করার নাই। তাছাড়া যে মিউটেশন করিয়েছে সেও তো একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ও সরকারি কর্মচারী।
এ বিষয়ট, আলিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে তহশীলদার রেকর্ড বুক দেখে জানান, দলিলে আছে ৫.০৫ শতাংশ, আর মিউটেশনে রয়েছে ৭.৯৪ শতাংশ। মিউটেশনে অতিরিক্ত ২.৮৯ শতাংশ জমি রয়েছে। তবে ২৮৫৮ নম্বরের ১টি দলিল দ্বারা মিউটেশন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে, ৬/৩/২০২৪ তারিখ দুপুরের দিকে মুঠো ফোনে কথা হলে জমি বিক্রেতা আফরোজা চৌধুরী বলেন, আমি আবেদন করে যেভাবে মিউটেশন পেয়েছি সেভাবে বিক্রি করেছি।
এ প্রসঙ্গে, ০৬/০৩/২০২৪ তারিখ দুপুর ৩ টার দিকে পাচুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ প্রতিবেদক সাক্ষাতকালে আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক তহশিলদার এস,এম রেজাউল করিম জমির দলিল ও মিউটেশন দেখে-শুনে বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয় আমারও হয়েছে, তাছাড়া এ ভুলের সাথে আমি তো একা জড়িত নই এসিল্যান্ড অফিসের অনেকেই জড়িত।
তিনি বলেন, মূল দোষ আবেদনকারীর, আমি না হয় বেশি দিলাম সে নিল কেন? ভুক্তভোগী আবেদনকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি রাষ্ট্রের গোপন বিষয় আপনি (সাংবাদিক) মিডিয়ায় প্রকাশ করতে পারবেন না। তিনি আবার বলেন, তার অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকের কাছে কোন বক্তব্য দিবেন না, অফিস কর্তৃপক্ষ যদি কোন লিখিত জবাব চায় সে ক্ষেত্রে তিনি জবাব দিবেন। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আপনি কিছু লিখবেন না বলেও নিষেধ করেন।
এই অপ্রত্যাশিত আলোচিত ঘটনায়, জনসাধারণের মনে এখন প্রশ্ন হলোঃ এ প্রতারণার দায়ভার কার? জমির মালিকের নাকি ভূমি অফিসারের?