রাজবাড়ীতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে আবারো মামলা
প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ ,৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | আপডেট: ৫:৩৪ অপরাহ্ণ ,৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
রাজবাড়ী প্রতিনিধি।। “রাজবাড়ীর রেল চোর! আদালত জামিন দিলেও সৃষ্টিকর্তা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেন!” নিজের ফেসবুকে এমনটি লিখে- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।
৩রা সেপ্টেম্বর-২০ বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের (আইনজীবী সমিতি) সম্পাদক এ্যড. মোঃ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে দন্ড বিধির ২৯৫/২৯৫(এ)/২৯৮ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।বিজ্ঞ আদালত মামলার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসারকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৯/০৮/২০২০ইং তারিখে মৃত্যুবরণকারী এ্যাড.এম.এ খালেক ১৯৮৩ সালে আইনজীবী হিসেবে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনে যোগদান করার পর থেকে আমৃত্যু অত্যন্ত সুনাম ও সততার সাথে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি একজন ধর্মভীরু লোক ছিলেন। তিনি ২বার ওমরা পালনসহ স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। ইসলাম ধর্মের ফরজ কাজসহ রাসূলের হাদীস মেনে চলতেন। তিনি ২বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ গত মেয়াদে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। ওয়াজ মাহফিলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের পাশাপাশি তিনি সুপ্রীম কোট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য ছিলেন। মৃত্যুর পর তার ৩টি জানাযার নামাজ হয়। মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন।
কিন্তু সাংবাদিক প্রবীর শিকদার অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও ইসলাম ধর্মকে ঘৃণার চোখে দেখে বিদ্বেষাত্মকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য গত ০১/০৯/২০২০ইং তারিখ রাত ৩.টায় নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন- ‘রাজবাড়ীর রেল চোরকে আদালত জামিন দিলেও সৃষ্টিকর্তা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেন’ মর্মে প্রচার করেন। ইতিপূর্বেও তিনি তার ফেসবুক আইডিতে মরহুম এ্যাড.এম.এ খালেক সম্পর্কে অনেক কথাবার্তা লেখেছেন। দীর্ঘদিনের সহকর্মী হিসেবে আইনজীবীরা এতে মর্মাহত হন এবং গত ০২/০৯/২০২০ইং তারিখে অনুষ্ঠিত জেলা বার এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটির সম্পাদক হিসেবে এ্যাড. মোঃ আনিছুর রহমানকে বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়েরের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
মামলায় জেলা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাড. মোঃ শফিকুল আজম মামুন, সহ-সভাপতি এ্যাড. শেখ সাইফুল হক, সহ-সম্পাদক এ্যাড. মোঃ হাকিম খান রিপন, সহ-সম্পাদক এ্যাড. মোঃ তসলিম আহম্মেদ তপন, সদস্য এ্যাড. মোঃ রাসেল সুলতান, এ্যাড. মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ ও এ্যাড. মোঃ জাহিদ হোসেন মোল্লাকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এ মামলা দায়েরের পরেও সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের ফেসবুকে স্ট্যাটার্স থেমে নেই। তিনি আবারও লিখেছেন-
এরআগে, গত ৯/৭/২০২০ইং তারিখে “রাজবাড়ীতে রেলের জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে মামলা” শিরোনামে দৈনিক সমকালে প্রকাশাশিত হয়। এছাড়াও স্থানীয় সহ আরো বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদটি হয়।
সংবাদে প্রকাশ হয় যে- সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এ্যাড. এমএ খালেক ও তার ছেলে জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ পাভেলের বিরুদ্ধে সদর থানায় এই মামলা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী রেল স্টেশনের পেছনে রেলের স্যানেটারি ইন্সপেক্টরের অফিসের দেয়াল ও অফিস ভেঙ্গে শ্রমিক দিয়ে জোর করে ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ শুরু করে আসামিরা। রেলের কর্মকর্তারা রাস্তা নির্মাণে বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর মারমুখি আচরণ করেন। পরে ৭ই জুলাই রাজবাড়ী রেলওয়ের উপ-সহকারী (কার্য/আইসি) প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে রেলের জমি উদ্ধারে গেলে একজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে দন্ড বিধির ১৪৩/৪৪৭/১৮৬/৩৫৩/৪২৭/৫০৬ ধারায় রাজবাড়ী সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন- এ্যাড. এমএ খালেক, তার ছেলে এমএ খালেদ পাভেল ও স্থানীয় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর জলিল।
ওই মামলায় গত ৯ই জুলাই উক্ত ৩ জন আসামী রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে আত্মসমর্পন করে অস্থায়ী জামিন পান এবং গত ৫ই আগস্ট একই আদালতে তাদের জামিন স্থায়ীকরণ করা হয়।
এ বিষয়ে, রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস বলেন, রেলের জমি উদ্ধারে গেলে আমাদের একজন কর্মচারীকে মারধর করেছে তারা। আর মামলার বাদীকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আসামিরা।
তবে, মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে দবি এমএ খালেদ পাভেলের।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাড, এম.এ খালেক (৬৪) করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ১৩ই আগস্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন। ১৬ই আগস্ট তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। নমুনা দেয়ার দিন থেকেই তিনি কাঁশি ও জ্বর নিয়ে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ১৮ই আগস্ট দিনগত রাতে হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরদিন গত ১৯শে আগস্ট সকালে তাকে রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ হেলথ্ সাইন্সেস জেনারেল হসপিটালে(বিআইএইচএসএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ২৯শে আগস্ট রাত ১০টা ৪০মিনিটে তার মৃত্যু হয়।