গোয়ালন্দের দেবগ্রামে ৮ মাস ধরে ভিজিডির চাল পাচ্ছেননা প্রায় অর্ধশত দূস্থ নারী, চাল গেল কোথায়?
![প্রতিবেদক](http://www.janatarmail.com/wp-content/uploads/2018/03/icon-1.png)
প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ ,১৯ মে, ২০২০ | আপডেট: ৫:৪৩ অপরাহ্ণ ,২০ মে, ২০২০
![গোয়ালন্দের দেবগ্রামে ৮ মাস ধরে ভিজিডির চাল পাচ্ছেননা প্রায় অর্ধশত দূস্থ নারী, চাল গেল কোথায়? গোয়ালন্দের দেবগ্রামে ৮ মাস ধরে ভিজিডির চাল পাচ্ছেননা প্রায় অর্ধশত দূস্থ নারী, চাল গেল কোথায়?](https://janotarmail.com/wp-content/uploads/2020/05/part-2.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদক।। প্রায় ৮ মাস ধরে চাল পাচ্ছেনা রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তালিকাভূক্ত ভিজিডি কার্ডধারী ১৬ জন দূস্থ নারী, আরেক তথ্যসূত্রে জানাযায়, চাল পাচ্ছেননা ৩৯ জন দূস্থ নারী। এই পাওয়া না পাওয়াদের তালিকা কোথায় এবং তাদের ৮ মাসের চাল কোথায়?
গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নে ১৬/৯/২০১৯ইং তারিখে অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর ১০/১০/১৯ তারিখ সকাল ১০.টায় শপথ গ্রহন করে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে দ্বয়িতভার গ্রহন করেন হাফিজুল ইসলাম। সে আবার ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতিও বটে। গত ১০/১০/২০১৯ তারিখে থেকে ১০/৫/২০২০ইং তারিখ পর্যন্ত প্রায় ৮ মাস যাবৎ ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে ইউনিয়নের সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি ভিজিডির চাল বিতরণ করে আসছেন তিনি। দেবগ্রাম ইউনিয়নে ভিজিডি কার্ডের সংখ্যা ৫০৫টি, আর ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ওই ইউনিয়নের নামে প্রতি মাসে বরাদ্দ (১৫.১৫০ মেঃ টন) ১,৫০,১৫০ কেজি করে চাল তোলা হয়।
গত ২০/৪/২০২০ তারিখ দুপুরে গোয়ালন্দ খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখাযায়, ২০১৯-২০২০ চক্রে ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নে এপ্রিল/২০২০ মাসে বিতরণের জন্য- গোয়ালন্দ উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ক্রমিকের ৬৪, ৭১, ১২৫, ১২৬, ১২৯, ২০১, ২২৭, ২২৮, ২৩৫, ২৭২, ৩৪৭, ৩৮৫, ৪৫৬, ৪৬৫, ৪৮৪, ৪৮৭ নংসহ মোট ৫০৫টি কার্ডের অনুকুলে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নামে প্রতি মাসে বরাদ্দ (১৫.১৫০ মেঃ টন) ১,৫০,১৫০ কেজি করে চাল তোলা হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ভিজিডি সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০৫ জন। প্রতি দূস্থ পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। গত বছরের জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর-২০২০ পর্যন্ত তারা এই সুবিধা পাবে ভিজিডি কার্ডধারীরা।
তথ্যসূত্রে জানাগেছে, দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জনাব হাফিজুল ইসলাম দায়ীত্ব গ্রহন করার পর পরই প্রায় অর্ধশত দুস্থ মহিলা সুবিধাভোগী ভিজিডি কার্ডধারী মাসে ৩০ কেজি হারে প্রায় ৮ মাস যাবত চাল পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে, ১০/৫/২০২০ তারিখ রবিবার দুপুরে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাতে কথা হলে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ করে বলেন- সে ইউনিয়ন পরিষদের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর জানতে পারেন যে, দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভিজিডি সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫০৫ জন। তাদের মধ্যে প্রকৃত ভিজিডি কার্ডধারীরা অনেকেই চাল পাচ্ছেননা। তাদের চাল খাচ্ছেন অন্যান্য লোকজন। খুঁজে খুঁজে এমন ২৯টি ভিজিডি কার্ড ক্লোজ করা হয়েছে, যা প্রকৃত মালিকদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ২০১৭-১৮ চক্রে ভিজিডি উপকারভোগীর তালিকায় নাম ছিল, এবার আবার ২০১৯-২০২০ চক্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নাম থাকায় যথাক্রমেঃ- ৬৪, ৭১, ১২৬, ১২৯, ২০১, ২২৮, ২৩৫, ৩৪৭, ৩৮৫, ৪৫৬ নংসহ ১০টি ভিজিডি কার্ডধারীর নাম পরিবর্তনের জন্য দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর ২৫/৮/১৯ইং তারিখে একটা চিঠি দিয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা। সে কারনে ১০ জনের নাম পরিবর্তনের জন্য তাদের নামীয় ভিজিডি কার্ড আটক করা হয়েছে ও তাদের চাল দেওয় বন্ধ করা হয়েছে।
তবে ক্ষিপ্ত কন্ঠে চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে বার বার জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনাদের নিকট এই অভিযোগ কে করেছে ? চেয়ারম্যান বার বার তার সেক্রেটারী লিটনের হাত থেকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসারের পাঠানো চিঠিটি নিয়ে দেখাচ্ছিলেন তিনি।
*চিঠিতে দেখা যায়, ২৫/৮/২০১৯ ইং তারিখের গোয়ালন্দ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কতৃক প্রেরিত পত্রের বিষয়টিতে লেখা রয়েছেঃ- ভিজিডি উপকারভোগী বাছাই/ নির্বাচন সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ি ২০১৯-২০২০ চক্রের ভিজিডি কর্মসূচিতে প্রকৃত উপকারভোগী তালিকাভূক্ত করণ প্রসঙ্গে। যাহার স্মারক নং- ৩২.০১.৮২২৯.০০১.২০.০১৭.১৮- ৬৯৫।
এ সময় চেয়ারম্যান আরো বলেন- নিয়ম-নিতি না মেনে এই ভিজিডির তালিকা করে গেছেন সাবেক চেয়ারম্যান আতর আলী। তার আমলেই ২৯ জন কার্ডধারীর চাল খাচ্ছেন অন্য লোকজন। এভাবে সে অনেক দূর্নিতী করে গেছেন, এই পরিষদের দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি সেগুলো খুঁজে বের করছি মাত্র। আপনারা সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করুন, অনেক দূর্নিতী পাবেন, সে একজন দূর্নিতীবাজ। তিনি আরো বলেন- সারা এলাকায় মাইকিং করে আমি চাল বিতরণ করেছি, এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন, আমি কোন দূনিতী করিনা।
*লক্ষনিয় বিষয় হলো, ৮ মাস ধরে চাল না পাওয়া ওই ১০ জন দুস্থ মহিলাদের নাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) তালিকায় রয়েছে। যাহা সরকারী ওয়েবসাডের- http://debugramup.rajbari.gov.bd/site/page/fd491d59-2012-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%BF লিংকে ও গোয়ালন্দ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের তালিকায় এখোনো পর্যন্ত রয়েছে।
এ সময় চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামের সাথে জনতার মেইলের প্রতিবেদকের কথপোকথনের আরো কিছু অংশ তুলে ধরা হলো, যাহা এ প্রতিবেদকের নিকট অডিও/ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।
প্রতিবেদকের প্রশ্নঃ- একটু আগে বললেন, তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য যে ১০ জনের কার্ড আটক করেছেন এবং চাল দেওয়া বন্ধ রেখেছেন, তাদের ৮ মাসের চাল কোথায়?
চেয়ারম্যানের উত্তরঃ- আমি-তো আগেই বলেছি, নাম পরিবর্তনের জন্য তালিকাভূক্ত যে ১০ জনের কার্ড আটক করে ৭/৮ মাস ধরে চাল দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, তাদের চাল তালিকার বাইরের অন্য নতুন ১০জনকে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদকের প্রশ্নঃ- বিগত দিনে ২৯ জন দুস্থ নারীর ভিজিডি কার্ডের উত্তলণকৃত ৮ মাসের চাল যাদেরকে প্রদান করা হয়েছে মর্মে তাদের তালিকা এবং ৭/৮ মাস ধরে নতুন যে ১০ জনকে চাল দিচ্ছেন, তাদের নামের তালিকাটা একটু দেখানো যাবে কি?
চেয়ারম্যানের উত্তরঃ- তালিকা তো আমার কাছে নাই, তাছাড়া সবার নামও মনে নাই। তালিকা আছে আমাদের সচিব লিটনের কাছে। সেতো এখানেই ছিল, আপনারাতো দেখলেন এইমাত্র সে বেড়িয়ে গেল, মনে হয় গোয়ালন্দ চলে গেছে। তবে সমস্যা নাই ২ দিন পরে আসেন তালিকা দেখানো যাবে। এ কথা বলে চেয়ারম্যান নিচের দিকে শুধুমাত্র নাম স্বাক্ষর করা নাম/ ঠিকানাবিহীন ভিজিডির ১০টি সাদা আবেদনপত্র প্রদর্শন করেন। যার একটির ছবি তুলে রাখা হয়।
এরপর, চেয়ারম্যানের থেকে বিদায় নিয়ে তার রুম থেকে বেড়িয়েই দেখা যায় পাশের রুমে সচিব সাহেব বসে আছেন। কথা হয় তার সাথে। ৪৯ জন দুস্থ নারীর ভিজিডি কার্ডের উত্তলণকৃত ৮ মাসের চাল যাদেরকে প্রদান করা হয়েছে মর্মে তাদের তালিকা এবং ৭/৮ মাস ধরে নতুন যে ১০ জনকে চাল দিচ্ছেন, তাদের নামের তালিকাটা একটু দেখান।চেয়ারম্যান সাহেব দেখাতে বলেছেন, এ কথা প্রতিবেদক বলায়- ইউপি সেত্রেুটারী লিটন বলেন, সত্য বলতে কি? তাদের তালিকা এখনো করা হয় নাই। দুইদিন পর এসে তালিকা নিয়ে যায়েন।
৩৯ জন ভিজিডি কার্ডের চাল কোথায় গেলো? এ বিষয়ে, ১০/৫/২০২০ তারিখ দুপুর দেড়টার দিকে অফিসে সাক্ষাৎকালে জানতে চাইলে ইউপি ভিজিডি মহিলা বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও মহিলা বিষয়ক অফিসার আব্দুস সালাম সিদ্দিক বলেন- ট্যাগ অফিসার এবং চেয়ারম্যানই ভালো জানেন বলে তিনি জানায়। তিনি আরো জানান- রাজবাড়ী টিআইবি সংস্থা তদন্তপূ্র্বক দেবগ্রামের ১০ জন ভিজিডিকার্ডধারীর নাম পরিবর্তনের জন্য, সেটা ফরওয়ার্ড করে দেবগ্রাম ইউপি পরিষদে দিয়ে দিয়েছি।
[ তালিকাভুক্ত ওই ১০ জনের নামের চাল তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয় এমন অন্য ১০ জনকে চাল দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৮ মাস ধরে। তালিকায় নাম থাকা পর্যন্ত তাদের কার্ড আটক ও চাল বন্ধ করার কোন নিয়মনিতি আছে কি-না? দেখা যাক ভিজিডি কর্মসূচির পরিপত্রের নিতিমালায় কি আছে ? ১০/০৯/২০১৮ইং তারিখের ৩২.০০.০০০০.০৫৭.১৪.০২১.১৮-১৭০ নং স্মারকে উল্লেখিত বিষয়ঃ- দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট- ভিজিডি) কর্মসূচির আওতায় ১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ চক্রের ভিজিডি উপকারভোগী বাছাই/নির্বাচন এবং ভিজিডি খাদ্য বিতরণ সংক্রান্ত পরিপত্রের নিউজ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনিয় সারাংশে দেখাযায় যে:- উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা অনুমোদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফরম -৩ অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত পূর্ণাঙ্গ তালিকার প্রতিটি পাতায় স্বাক্ষর করেন। চূড়ান্ত স্বাক্ষরিত তালিকা ইউনিয়নে প্রেরণ করা হয়। (ক) ছক-২ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নোটিশবোর্ডে চূড়ান্ত তালিকা প্রদর্শন করবেন।
ভিজিডি তালিকায় কোনো অনিয়ম/আপত্তি/অভিযোগ পরিলক্ষিত হলে উপজেলা ভিজিডি কমিটি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক দুই/তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি) সরজমিন তদন্ত করা হয়।
অনুমোদিত তালিকা ও বিতরণকৃত কার্ড অনুযায়ী ২৪ মাসব্যাপী প্রতি মাসে ৩০ কেজি গম/চাল প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও নির্বাচিত এনজিও কর্তৃক আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
পরিপত্রের ৫ এর(খ) এর ১ ক্রমিকে দেখা যায় যে, চুড়ান্তভাবে অনুমদিত কোন ভিজিডি উপকারভোগী নির্বাচনের শর্তাবলী পূরণ না করে থাকলে, ভিজিডি তালিকা হতে সেই উপকারভোগীর নাম বাদ দেয়া হবে এবং তার অনুকুলে বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড সরাসরি বাতিল হবে। অপেক্ষামান তালিকা থেকে থেকে শর্ত পূরন করে এমন উপকারভোগী নির্বাচন করা যাবে।]
জনতার মেইলের বক্তব্য- 1. চেয়ারম্যান সাহেব অপেক্ষামান তালিকা থেকে কোন নাম দেখাতে পারেন নাই আবার ভিজিডির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন যে ১০ জনের ৮মাস ধরে চাল দিচ্ছেন তাদের নামও দেখাতে পারেন নাই।
2. অপরদিকে, চেয়ারম্যান নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান হিসেবে জাহির করেছেন। অনিয়ম-দূর্নীতি থেকে নিজেকে আড়াল করতে সাদা কাগজে ও সাদা আবেদন ফরমে কিছু সাধারন পাবলিকের স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছেন। সেই গুলোকে তিনি তার দূর্নীতির ডাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে প্রমান পাওয়া যায়।
3. চেয়ারম্যানে মূখের কথা সে মোট ৩৯টি কার্ড আটক করেছে, যার মধ্যে ২৯ জন দুস্থ নারীর ভিজিডি কার্ডের চাল যে অন্য লোকজনের খাওয়ার কথা বলেন, সেই অন্য লোকের তালিকা এবং আটক ভিজিডি কার্ডধারীদের তালিকা দেখাতে পারেননাই। এবং তাদের ৮ মাসের চাল কোথায়?
4. চেয়ারম্যান সাহেব ইউনিয়ন পরিষদ নোটিশবোর্ডে ভিজিডির চূড়ান্ত তালিকা প্রদর্শন করেননাই।
5. গত ১৭/৫/২০২০ তারিখে ”দেবগ্রাম ইউনিয়নের অর্ধশত দুস্থ নারীর ৮ মাসের ভিজিডি’র চাল আত্মসাতের অভিযোগ (পর্ব-১)” শিরোনামে জনতার মেইলে সংবাদ প্রকাশের পর ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭/৫/২০২০ তারিখ দুপুর ২.টা ১৮মিনিটের সময় মোবাইল ০১৭১৫-৮৪৮৯৮১ নং মোবাইল থেকে এ প্রতিবেদকের ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২ নং মুঠোফনে দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে গালিগালাজ করেন। নিউজ তার বিপক্ষে গেল কেন এমন প্রশ্ন করেই মারধর সহ প্রানে মারার ও উল্টা-পাল্টা মামলা হুমকি-ধামকি দেয়। সে বলে, তোর আগের বাবার (চেয়ারম্যান) নাম বাদ রেখে আমার বিরুদ্ধে লিখলি কেন? তুই দেবগ্রামে আয়, গোয়ালন্দ বা দেবগ্রামে পেলে তোর হাড়গোর চুরমার করে ফেলার কথা বলে। আরো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। প্রশ্ন হলো, তার খুঁটির জোড় কোথায় ?
এ বিষয়টি, অবগত করার জন্য একইদিন দুপুর ২.টা ৫৬ মিনিটের সময় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিপলু হায়াতকে ফোন করলে রিং ঢুকলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চেয়ারম্যান যে নামগুলো পরিবর্তনের জন্য চিঠি পেয়েছেন তারা হলেন যথাক্রমেঃ- ৬৪নং ভিজিডি কার্ডধারী মোছাঃ মনোয়ারা বেগম, ৭১নং কার্ডের- হোসনেয়ারা বেগম, ১২৬নং কার্ডের- জমিরন বেগম, ১২৯নং কার্ডের-কমেলা বেগম, ২০১নং কার্ডের- সুফিয়া বেগম, ২২৮নং কার্ডের- নার্গিস আক্তার, ২৩৫নং কার্ডের- রুমা বেগম, ৩৪৭নং কার্ডের- লাইলি বেগম, ৩৮৫নং কার্ডের- মোছাঃ লিপি বেগম, ৪৫৬নং কার্ডের- মোছাঃ আনোয়ারা বেগম। এই ১০ জনের ভিজিডি কার্ড আটক করা হয়েছে।
এর ঘটনায়, ৮ মাস ধরে চাল না পাওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে জনতার মেইল.কম কতৃক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যথাক্রমে:- *১.মোছাঃ মনোয়ারা বেগমের নামে ৬৪ নং কার্ড, ২.হোসনেয়ারা বেগমের নামে ৭১ নং কার্ড, ৩.ছালেহা বেগমের নামে ১২৫ নং কার্ড, ৪.জমিরন বেগমের নামে ১২৬ নং কার্ড, ৫.কমেলা বেগমের নামে ১২৯ নং কার্ড, ৬.সুফিয়া বেগমের নামে ২০১ নং কার্ড, ৭.গোলাপী বেগমের নামে ২২৭ নং কার্ড, ৮.নার্গিস আক্তারের নামে ২২৮ নং কার্ড , ৯.রুমা বেগমের নামে ২৩৫ নং কার্ড, ১০.ময়না বেগমের নামে ২৭২ নং কার্ড, ১১.লাইলি বেগমের নামে ৩৪৭ নং কার্ড, ১২.মোছাঃ লিপি বেগমের নামে ৩৮৫ নং কার্ড, ১৩.মোছাঃ আনোয়ারা বেগমের নামে ৪৫৬ নং কার্ড, ১৪.ঝর্না খাতুনের নামে ৪৬৫ নং কার্ড, ১৫.মোছাঃ হোসনা বেগমের নামে ৪৮৪ নং কার্ড, ১৬.সালমা বেগমের নামে ৪৮৭ নং কার্ড রয়েছে।*
৮ মাস ধরে চাল না পাওয়া দুস্থ নারীদের অভিযোগ। যার ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষণ করা রয়েছে।
# ২৩/৪/২০২০ তারিখে ৩৮৫ নং ভিজিডি কার্ডধারী, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৬-নং ওয়ার্ডের পূর্ব তেনাপচা গ্রামের বাসিন্দা আলম মোল্লার স্ত্রী মোছাঃ লিপি বেগম (৩৯) জনতার মেইলকে বলেন- আমার নামে একটা ভিজিডি কার্ড আছে, ৯ মাস চাল পেয়েছি, ৩০ কেজি করে বিনামূল্যে। আমার এখন আর চাল দেয়না, আমার কার্ড চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছে। কার্ড পাওয়ার জন্য বহু অনুরোধ করে চেয়ারম্যানকে বলেছি, সে বলেছে এ কার্ড দেওয়া যাবেনা, অন্য জনের নামে খাওয়ানো হবে, উপজেলা অফিসে জমা রেখে দিয়েছে। এ সময় তিনি বলেন- দেখেন প্রতিবন্দি অসুস্থ মেয়ে নিয়ে আমি খুব কষ্টের মধ্যে আছি, বিভিন্ন মানুষের সাহায্য নিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করতে করতে আমি নিস্ব হয়ে গেছি। ভিজিডি কার্ডের চাল পেলে বেঁচে থাকতে পারতাম, কিন্তু এখনতো আমার কার্ড-ই নাই। তিনি ভিতসম্ভ্রন্ত হয়ে আরো বলেন- আপনাদের কাছে জানালাম, দেইখেন পরে যেন আমাদের কোন অসুবিধা না হয়।
# ২/৫/২০২০ শনিবারদিন ৪৬৫ নং ভিজিডি কার্ডধারী, দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৯-নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রহিম শেখের স্ত্রী ঝর্না খাতুন (৩১) বলেন- আমার নামে ৩০ কেজি চালের একটা ভিজিডি কার্ড ছিল, কিন্ত আমার কার্ড আটকে দিয়েছে চেয়ারম্যান। বলছে সে কার্ড না-কি বাতিল হয়ে গিয়েছে। ঝর্নার স্বামী রহিম শেখ বলেন- আমার স্ত্রীর গত কয়েকদিন আগে সিজার করিয়েছি, সে এখন খুবই অসুস্থ, আমি খুবই গরিব মানুষ, এখন তার চিকিৎসা করাবো কি দিয়ে, আর খাবো কি? কার্ড আনার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গিছিলাম, কার্ড দেয়নাই, তার লোকজন লালচাঁদ ও জাহাঙ্গীর বলছে ২৫শত টাকা দিলে কার্ড দেব। ২৫শ টাকা দিতেও পারিনাই আমার স্ত্রীর কার্ডও দেয়নাই, কি করবো? পরে চলে আইছি। তিনি আরো বলেন- কার্ড না পাই তবুও ভাল, কিন্তু আপনাদের কাছে বলাতে আমার যেন কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সেদিকটা দেখেন।
# ৪/৫/২০২০ তারিখ সোমবার ৪৫৬ নং ভিজিডি কার্ডধারী, দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৮-নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিদ্দিক মন্ডলের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৮) বলেন- আমার নামে ৩০ কেজি চালের ভিজিডি কার্ড ছিল, ৯ বার চাল পাইছি। আতোর চেয়ার্যান থাকাকালীন দিছিল ৬ বার, আর হাবি চেয়ারম্যান হওয়ার পর দিছে ৩ বার। তারপর আর চাল দেয়না, হাবি চেয়ারম্যান আমার কার্ড আটকা দিছে। কাছে অনেক কাঁদাকাটি করছি তার পরেও কার্ড দেয়নাই। হাবি চেয়ারম্যান বলছে দেওয়ার কায়দা নাই, উপজেলা অফিস থেকে কার্ড বাতিল করে দিছে। তিনি আরো বলেন- আপনারা নিজে চোখেই দেখেন, আমি অসুস্থ অবস্থায় এই মুরগীর হ্যাচারীকে কাজ করি, আমার ২টা মেয়ে ১টা ছেলে নিয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। আমার মতো অসহায় মানুষের কার্ড আটকে দিছে, এটা কি কেউ সহ্য করবি ?
# ১২/৫/২০২০ তারিখ মঙ্গলবার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৯-নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের ৪৮৪ নং ভিজিডি কার্ডধারী মোছাঃ হোসনা বেগম (২৯) বলেন- আমার নামে ভিজিডি কার্ড আছে, কিন্তু আমি চাল পাইনা, কার্ড আমার কাছে নাই। #সমিরুন বেগম (৩১) স্বামী সাত্তার খাঁ, ওয়ার্ড নং-৪, গ্রাম কাউজান (কার্ড নং-১২৬) বলেন- দুনিয়াতে কোন বিচার-আচার নাই, আমার মতো গরীব মানুষের চাইল খাইছে চেয়ারম্যান। একই ধরনের কথা বললেন আনোয়ারা বেগম (৪৮) স্বামী সিদ্দিক মন্ডল ওয়ার্ড নং-৮, গ্রাম তেনাপচা, আশ্রায়ন-২ (কার্ড নং-৪৫৬)। ঝর্ণা খাতুন (৩১) স্বামী রহিম শেখ ওয়ার্ড নং- ৯, সাং দক্ষিন চর পাচুরিয়া, (কার্ড নং-৪৬৫)। গোলাপী স্বামী আবু সাত্তার ওয়ার্ড নং- ০৫, সাং দেবগ্রাম,(কার্ড নং-(২২৩)। ময়না (৪১) স্বামী ফেলু শেখ ওয়ার্ড নং-৬, সাং তেনাপচা কার্ড নং-২৭১, একই কথা বলেন ৯নং ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা দক্ষিণ চর পাচুরিয়া গ্রামের ৪৮৭ নং ভিজিডি কার্ডধারী সালমা বেগম (৩৪) সহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি এমন বুঝাছিল যে অর্ধশত দুস্থ নারীর ভিজিডির ৮মাসের চাল তিনিই আত্মসাত করেছেন! তবে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে মর্মে এলাকার সচেতন মহল জোড় দাবী করেন।