স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে বাঙালির হৃদয়ে নাম লেখালেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ ,২৫ জুন, ২০২২ | আপডেট: ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ ,২৬ জুন, ২০২২
স্টাফ রিপোর্টার।। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ-উদ্বোধন হয়েছে আজ। শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১২ ঘটিকায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী মঞ্চের বেদিতে বাটন চেপে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উম্মোচন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে বেলা পৌনে ১২.টার দিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
৩০ হাজার ১শত ৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে রোববার সকাল ৬.টা থেকেই।
তার আগে সকাল সাড়ে ৯.টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা হয়ে সকাল ১০.টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সুধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি।
মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ”শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
”অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে আছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমসাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।”
শেখ হাসিনা বলেন, ”সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। আশা করা হচ্ছে এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১.২-৩ শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক ৮-৪ শতাংশ হারে দারিদ্র বিমোচন হবে।”
সুধী সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি গাড়িবহর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা অতিক্রম করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি পদ্মা সেতুর প্রথম টোল প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রীর এ গাড়িবহর যাত্রার মধ্যে দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়ে যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা।
সেতুর মাঝে দাঁড়িয়ে বিমানবাহিনীর মহড়া প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় পদ্মা নদীর ওপরে বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান ও হেলিকপ্টার বাংলাদেশের পতাকা বহন মনোমুগ্ধকর মহড়া দেয়। তখন প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ক্যামেরা দিয়ে সেই দৃশ্য ধারণ করেন। প্রায় মিনিট দশেক সেতুতে অবস্থানের পর গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে মাদারীপুরের শিবচরে জনসভাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন ৩ হাজার ৫০০ জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথি। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কর্মকর্তারা রয়েছেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সরকারি আমলা, রাজনৈতিক নেতারা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ নানা উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া রয়েছেন সেতুর কাজে যুক্ত থাকা বিদেশি এবং দেশের বড় বড় প্রকৌশলী।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে “জনতার মেইল”এর প্রকাশক ও সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজুল করিম মন্তব্য করে বলেন,- গতকাল যাহা ছিল স্বপ্নের সেতু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কতৃক উদ্বোধনের পর আজ তা হলো ঐতিহাসিক “পদ্মা সেতু”। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্যো দিয়ে মহান স্বাধীনতার মহানায়ক হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তো তিনি বঙ্গবন্ধু। আজ তারই কন্যার নেতৃত্বাধিন সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশে “পদ্মা সেতু” নির্মান করে বাঙালির হৃদয়ে নাম লেখালেন। যিনি সেতু নির্মানের স্বপ্ন দেখালেন, স্বপ্ন জয় করলেন, স্বপ্ন পূরন করলেন। তাই তো তিনি আজ বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, ৬.১৫ কিমি দৈঘ্যের পদ্মা সেতু হলো একটি বহুমুখী সড়ক-রেল সেতু; যা বাংলাদেশের লৌহজং, মুন্সীগঞ্জকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের সাথে সংযুক্ত করছে, এছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে তা সংযুক্ত করবে। স্বপ্নের এ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা আর সেতুর নিচতলার রেললাইন ঘিরে রাজধানী ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত চলমান রেল লিঙ্ক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে পিলার ও স্প্যানের মাঝে প্রতিটি ১০০ টন ওজনের ৯৬টি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে এর আগে এত বড় বিয়ারিং আর কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। এখন রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে সেতুটি।
কাকতালীয় বিষয় হলো- পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, দিনটি ছিল শনিবার। আর আজ উদ্বোধনের দিনটিও শনিবার।