আজ : রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীর বেলগাছিতে আদিবাসি বাগদী সম্প্রদায়ের দুর্বিসহ জীবনযাপন।


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ ,১৬ আগস্ট, ২০২১ | আপডেট: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ ,২২ আগস্ট, ২০২১
রাজবাড়ীর বেলগাছিতে আদিবাসি বাগদী সম্প্রদায়ের দুর্বিসহ জীবনযাপন।

স্টাফ রিপোটার।। রাজবাড়ী জেলার সদর থানাধীন খানগঞ্জ ইউনিয়নের অদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা অর্ধাহার-অনাহারে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। সহায়-সম্বল বলতে স্যেৎসেতে নর্দমা ও নোংরা পরিবেশে জরাজীর্ণ ঘরটুকুই যাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তারা মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনমানহীন ও কর্মহীন সময় কাটাচ্ছে বছরের পর বছর। একটু সাহায্যের আকুতিও যেন কারো কর্ণগুহরে প্রবেশ করছে না। সেই আক্ষেপ নিয়ে জীবনমৃত হয়ে বেঁচে আছেন সারাটি জীবন ধরে। করোনা মহামারী য়েন শেষ ধ্বংসটুকু নিশ্চিত করে গেছে।বাগদীরা রাজবাড়ী জেলার রঘুনাথপুর, বাসুদেবপুর, দারচি, পাংশা, বেলাগাছি, সোনাপুর এলাকায় বসবাস করে। খানগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুনাথপুরে প্রায় ৩৫০টি পরিবারে ২ হাজার আদিবাসির বসবাস। অনেকটা সনাতন ধর্মাবলম্বি কৃষ্টি-কালচারে অভ্যস্ত সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠী এই আদিবাসি বাগদী সম্প্রদায়। হাতে বুনা ও হাতে তৈরী সরঞ্জামাদির সাহায্যে বংশানুক্রমে তারা ধান খোটা, কুইচা, কচ্ছপ, কাঁকড়া ধরা, শামুক-ঝিনুক টোকানো এবং ছোটমাছ ধরে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অপ্রতুলতা ও প্রতিকুলতাই য়েন তাদের বাঁচার আশা ক্ষীণ করে দিয়েছে। যার কারনে জীবিকার তাগিদে শিক্ষা-অভিজ্ঞতাহীন দিনমজুর হিসেবে সামান্য পারিশ্রমিকে তাদের আদি পেশা ছেড়ে অনেকে প্রতিনিয়ত পেশা বদল করে খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমতে টিকে থাকার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাকিটা ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছে।
গীতা বাগদী বলেন, না খেয়ে খেয়ে শরীর কাঁপছে। দাঁড়াতে পারছি না। ক্ষুধার জ্বালা আর সয় না। নিরাপদ বাগদী বলেন, সকাল থেকে কুইচা ধরতে গিয়ে না পেয়ে ফেরত আসি। সারা দিন পরিবার নিয়ে কি খাব জানি না। সবলা বলেন, ভাঙ্গা ঘর আর নোংরা পরিবেশে থাকতে আর ভাল লাগেনা। লালন কুমার বিশ্বাস বলেন, আয় রোজগার নাই, করোনায় বাইরে যেতে পারি না, কাজ নাই, কি করব কিভাবে চলব। আমরা অসহায় আমাদের খোঁজ কেউ রাখে না। কোন সাহায্য সহযোগীতা পাই না।
খানগঞ্জ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তক্দীর বলেন, আমাদের খানগঞ্জ ইউনিয়নের রঘুনাথপুর, বাসুদেবপুর ও দাদপুর অঞ্চলে আমাদের এই আদিবাসীদের বসবাস। এই নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় এরা প্রায় ৫০-৬০ বছর যাবৎ বসবাস করছে। এরা পূরুষরা কুলি মজুরের কাজ করে এবং মেয়ে ছেলেরা নদীতে মাছ মারে। বিশেষ করে কুইচা মাছ বিক্রী করে। এদের জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। এদের বসবাসের জায়গা ছাড়া মাঠে কোন জায়গা জমি নেই। এদের শরীরই একমাত্র তাদের সম্পদ। যা তারা প্রতিদিন দিন আনে দিন খায়। সেই হিসাবে এদের যে অবকাঠামোগত যে বিষয় সেটা গনপ্রজাতণ্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওনাদেরকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘর দিয়েছে। কিন্তু এখানে প্রায় সাড়ে ৩শ উপরে পরিবার বসবাস করে। ১২শ থেকে ১৫শ সদস্য তাদের আছে। প্রায় ৫০০ উপরে ভোটার আছে। তাদেরকে যে সাহায্য দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। ইতিমধ্যে নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই লেখাপড়া, কাঠের কাজ, নরসুন্দরের কাজ এই সমস্ত কাজে তারা জরিত হয়ে জীবন মানের উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনেক অভাবের মধ্যে তারা সবসময় থাকে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফাহমি মো. সায়েফ বলেন, একটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী আছে রাজবাড়ী সদর উপজেলায়। তাদের জন্য গত অর্থ বছরে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের জন্য কিছু বরাদ্ধ এসেছিল। সেখান থেকে আমরা ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১১ জনকে শিক্ষা উপকরন দেয়া হয়েছে এবং ২৭ জনকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের কিছু ঘরের বরাদ্ধ এসেছিল এই ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী জন্য সেখান থেকে ১০টি ঘর খানগঞ্জে করা হয়েছে। আর ২০২১-২২ এই অর্থ বছরেও আমরা তাদের জন্য ৮০ টি ঘরের চাহিদা পাঠিয়েছি এবং ৪০ জনকে শিক্ষা বৃত্তি দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এবং সেটি এখনও আসেনি আসলে ইনসাল্লাহ্ আমরা সেটি তাদের মাঝে আমরা বিতরন করব। তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য যা যা করনীয় আমরা প্রতিনিয়ত ওখানে যাচ্ছি এবং তাদের কথা আমরা শুনছি এবং তারা যেভাবে যা চাচ্ছেন আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে সেই সহায়তাটুকু করার জন্য।

Comments

comments