রাজবাড়ীর বেড়িবাধঁ সরকারের, কিন্তু গাছগুলো কার? কেটে বিক্রি করছে, প্রশাসন বলছে আমাদের নয়!
প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ ,২৮ এপ্রিল, ২০২১ | আপডেট: ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ ,৩০ এপ্রিল, ২০২১
বিধান কুমার।। রাজবাড়ীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাধঁ-তো সরকারের, কিন্তু বেড়িবাধেঁর গাঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো কার? রাজবাড়ী জেলা সদরের মিজানপুর ইউপি চেয়ারম্যান এই গাছগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে, এ ব্যাপারে রাজবাড়ীর বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সদর উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলে তারা বলছে আমাদের নয়। স্থানীয় জনমনে একটাই প্রশ্ন তা হলে গাছগুলো কার?
রাজবাড়ী জেলা সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর স্লুইচগেট হতে ধাওয়াপাড়া গামী মহাদেবপুর বটতলার পাশে চেয়ারম্যানের জমির সাথে বেড়িবাধেঁর কড়ই গাছগুলো একের পর এক কেটে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত প্রায় লক্ষাধিক টাকা। বেড়িবাধেঁর গাছগুলো দির্ঘদিন ধরে এভাবে নিধন করে চললেও যেন দেখার কেউ নেই।
২১ শে এপ্রিল-২১ গত বুধবার দুপুর ১.টা ১৭ মিনিটে মহাদেবপুর বটতলার পাশে চেয়ারম্যানের জমির অভিমুখী বেড়িবাঁধের ঢালে রোপণ করা সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার তথ্য প্রাপ্ত হয়ে সংবাদ সংগ্রহে সরোজমিনে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের ছেলে মুন্নাফ উপস্থিত থেকে লেবার দিয়ে গাছ কাটাচ্ছেন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ততক্ষনাৎ সটকে পরে মুন্নাফ।
একই জমির সামনে হতে পূর্বেও বেশ কয়েকটি বড় বড় রেন্টি কড়ই গাছ কতৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ৩০-৩৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, শুধু এ গাছই নয় মহাদেবপুর বটতলার পাশে চেয়ারম্যানের জমি সংলগ্ন বেরিবাদের রাস্তার রেন্টি কড়ই গাছ গত কয়েক বছরে ৪-৫ টি বড় বড় গাছ কেটে নিয়েছে। বছর বছরই এক এক টি করে গাছ কাটেন চেয়ারম্যান। একেকটি গাছ ৩০-৩৫ হাজার করে বিক্রি করেছেন চেয়ারম্যান আতিয়ার।
সরোজমিনে উপস্থিত থেকে মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমানের ছেলে মুন্নার ফোনে কল করে সরকারী গাছ কাটর বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি এ প্রতিবেদককে উপঢৌকন দেবার অফার করেন।
গত ২১ শে এপ্রিল-২১ বুধবার দুপুর ১.২০ মিনিটে মুটোফনে বেরিবাধের গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, গাছের ডালপালা মরে যাওয়ার কারণে ও জমি থেকে বের হওয়ার পথ বের করার জন্য আমার ছেলে গাছ কাটছে। কোথাও থেকে কোনো অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এই সামান্য গাছ কাটার জন্য কোথাও থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তবে পত্রিকায় যাতে কোনো রিপোর্ট না হয় সেজন্য তিনি এ রিপোর্টারকে চা নাস্তা করার জন্য উপঢৌকনের অফার করেন।
এ বিষয়ে, রাজবাড়ী বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান- উক্ত স্থান বন বিভাগের জায়গার মধ্যে না। তাই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথাও তিনি বলেন।
এই গাছ কাটার বিষয়ে ২৮ শে এপ্রিল -২১ বুধবার দুপুর ১২ টা ৪৭ মিনিটে রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান- বেঁরড়িবাধের এ জায়গা উপজেলার খাঁস সম্পত্তি নয়। এই জায়গার গাছ যদি উপজেলার খাঁস সম্পত্তি মধ্যে হতো, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হত। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি। পানি উন্নয়ন বোর্ড উপজেলা দপ্তরের সাথে সম্পৃক্ত না। আপনি রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কে জানালে তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এ বিষয়ে, রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক্সেন আদ্বুল আহাদ কে জানালে তিনি জানান- বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বি/এস রেকর্ডিও সম্পত্তি ও একোয়ার জায়গা । কিন্ত গাছ একোয়ার কৃত সম্পত্তির উপর কিনা তা জানার জন্য প্রতিনিধি পাঠাবো। আমাদের বাঁধের রাস্তার দু পাশের গাছ ওয়ার্ক শোনে বিক্রির জন্য দপ্তরে চিঠি প্রঠিয়েছি। টেন্ডারের মাধ্যমে সেটা বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেওয়া হবে। আর এ গাছ কাটার বিষয়ে তথ্য অনুজায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারিরা সরেজমিনে ৩ জনকে পাঠালে তদন্ত করে দেখা যায়, গাছটা পনিউন্নয়ন বোর্ডের নয়। আমাদের যা গাছ আছে তা বিক্রির জন্য মার্ক করা হলেও নালিশি গাছ টি মার্ক করা নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৭/০৪/২০২১ইং তারিখে (পর্ব-২) রাজবাড়ীর মিজানপুর ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসুচি প্রকল্পের নামে ‘হরিলুট’। প্রশাসন নিরব! শিরোনামে ও গত ১৩/০৪/২০২১ইং তারিখে “মিজানপুর ইউনিয়নে নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা আত্মসাৎ(পর্ব-১)” শিরোনামে জনতার মেইলে সংবাদ প্রকাশের পর ও মৌখিকভাবে অবগতি করা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তারা। না-কি দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভাগ-বাটোয়ারায় জড়িত? এমন প্রশ্ন থেকে যায় জনমনে।
৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের কাগজ পত্রে ৩২-৩৮ জন জনবল দেখিয়ে মাঠ পর্যায়ে ১২-২০ জন জনবল দিয়ে কাজ করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ‘হরিলুট’ করে যাচ্ছে রাজবাড়ী জেলা সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। গত ১৩/০৪/২০২১ইং তারিখে “মিজানপুর ইউনিয়নে নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা আত্মসাৎ(পর্ব-১)” শিরোনামে জনতার মেইলে প্রকাশের পর ও অবগতি করা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তারা। না-কি দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভাগ-বাটোয়ারায় জড়িত? এমন প্রশ্ন থেকে যায় জনমনে।
অনুসন্ধানকালে, মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (টি,আর), কাবিখা-কাবিটা, ৪০ দিনের কর্মসুচি ও এল.জি.এস.পি- ৩, পিবিজি, জিওবি, বিবিজি সহ সকল প্রকার প্রকল্পের মধ্যে নানা প্রকল্প দেখিয়ে কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে ১৬-১৭ অর্থ বছর হতে ২০-২১ অর্থ বছর পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া যায়। ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কাগজে-কলমে ৩২ থেকে ৩৮ জন জনবল দেখিয়ে মাঠ পর্যায়ে ১২ থেকে ২০ জন জনবল দিয়ে কাজ করিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে মিজানপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। এছাড়াও, সরকারি খাঁস জমি বন্দবস্ত, ভিজিডি-ভিজিপি চাউলের কার্ড, বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধিদের উপবৃত্তি, মাতৃত্বকালীন ভাতা, হিজরা ভাতা সহ সকল কাজেই অনিয়ম-দূর্ণীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জরিত ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান ও মেম্বারা। বয়স্ক ভাতা কার্ড সহ সকল প্রকার কার্ড করার জন্য চেয়ারম্যানের যোগসাজশে কয়েকটি ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের নিকট হতে মেম্বারদের অর্থ আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। বয়স্ক ভাতা কার্ড করতে হলে পুরুষের বয়স হতে হবে ৬৫ বছর আর মহিলাদের হতে হবে ৬২ বছর। কিন্তু ৫০ হতে ৬০ বছর বয়সীদেরকেও কার্ড করে দিয়েছেন, প্রতিটি কার্ড করে দেওয়া বাবদ নিয়েছেন ৪/৫ হাজার টাকা।
মিজানপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু লোকের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান- আমরা যদি কখনও চেয়ারম্যানের কাছে কোন কিছুর জন্য যাই, চেয়ারম্যান আমাদেরকে বলেন, বর্তমান দল ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। আর আমি বিএনপি থেকে চেয়ারম্যান হয়েছি। এ কারণে আমার পরিষদে সকল ধরনের বরাদ্দ খুবই কম। তাই আমি তোমাদেরকে কিছু দিতে পারলাম না। চেয়ারম্যানের কাছ থেকে করোনাকালীন সময়ও আমাদের মত হতদরিদ্ররা তেমন কিছু পায়নি। এরকম চেয়ারম্যান থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
গত ১৪.০৪.২১ তারিখ হতে ১৭.০৪.২১ তারিখ পর্যন্ত ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ সরোজমিন পরিদর্শনে ৩ দিন গেলে, দেখা যায়- ৪নং ওয়ার্ডে দেলোয়ার মেম্বার কাজ করাচ্ছে ৩ দিনের চিত্রে যথাক্রমে ২৬-২২-২৫ জন দিয়ে। হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে নানা তাল বাহানা দেখান মেম্বার দেলোয়ার। এ ব্যাপারে মেম্বার এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ৩৮ জন জনগণের তালিকা দেওয়া আছে, জন সংকটের কারণে ২৬ জন দিয়ে কাজ করাচ্ছি।
কাজের সর্দার শুকুর আলী জানান- হাজিরাখাতা থাকে ফিরোজের নিকট, তাদের ইচ্ছামত কাজ হয়ে যাওয়ার পর, একদিনে সব সই করিয়ে নেন।
২নং ওয়ার্ডে কাগজ-কলমে ৪২ জন জনবল দেখিয়ে, মিন্টু মেম্বার মাঠে কাজ করাচ্ছে ২৪ জন দিয়ে। সেখানেও হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে নানা অজুহাত দেখান সর্দার এবং মেম্বার। সর্দার আদ্বুল মোতালেব বলেন, আমার ২৮ জন জনবল নিয়ে কাজ করাচ্ছি তার মধ্যে ২৬ জন আছে। ৩ দিনের চিত্র যথাক্রমে ২৬-২২-২৩ জন আছে। অতিরিক্ত ১৬ জনের কথা জানিনা। তবে এই টাকার মধ্যে ২ টা লেবারের টাকা দলিয় ফাও আর বাকি সব মেম্বার চেয়ারম্যান খায়। মহিলা শ্রমিক কাজলি জানান, আগে আমাদের টাকা কেটে রাখতো এখন রাখে না।
৩নং ওয়ার্ডে মাষ্টার রুলে ৩৮ জন জনবল দেখিয়ে মোস্তফা মেম্বার ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজ করে যাচ্ছেন মাত্র ১৮ জন জনবল দিয়ে। ৩ দিনের চিত্রে যথাক্রমে ১৮-১৭-১৭ জন শ্রমিক পাওয়া যায়। এবং মাটি কেনার কথা বলে কিছু ব্যাক্তির নিকট হতে ৪-৫ হাজার করে টাকাও নিয়েছেন। এ খানেও হাজিরা খাতা পাওয়া যায় নাই। টাকা নেওয়ার বিষয়ে আনসার সিকদার বলেন, মাটি কেনার কথা বলে আমার নিকট থেকে শফিকের মাধ্যমে মোস্তফা মেম্বার ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে, রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ বা কাজের তদারকির যেনো কোনো বালাই নেই। রাজবাড়ী সদর উপজেলার পি,আই,ওর দপ্তরে আর্থিক যোগসাজশের কারণে শুধু ৪০ দিনের কর্মসূচিই নয় সকল প্রকার প্রকল্পের কাজ নয়-ছয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজেরা। এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও পি,আই,ওকে কাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানালেও এখন তরি কার্যকরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে, ১৭/০৪/২০২১ইং তারিখে বিকেল ৫ টা ১৩ মিনিটে পিআইও বিজয় কুমার কে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
উল্লেখ্য, সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মিজানপুর ইউপি’র দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতি করার সুযোগ পায় কি-ভাবে ? দেশ উন্নয়নের স্বার্থে প্রশ্ন রেখে গেলাম সচেতন জনসাধারনের কাছে।
বিশেষ মন্তব্য:- সাংবাদিকের দাত্বায়িত্ব হচ্ছে অপকর্ম সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা, আর প্রশাসনের দ্বায়িত্ব হচ্ছে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন- সংবাদপত্র হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। একটি রাষ্ট্রে যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকে তাহলে ওই রাষ্ট্রে আমবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে। সে দেশের গণতন্ত্র হয়ে পড়ে মূল্যহীন।।
১। প্রথম স্তম্ভ হল আইন সভা, মানে বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা। এঁরা আইন তৈরি করবেন। ঠিক করবেন আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতি কেমন ভাবে চলবে।
২। দ্বিতীয় স্তম্ভটা হল বিচার ব্যবস্থা। নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালত, সর্বোচ্চ আদালত। এরা দেখবেন, বিচার করবেন আইন ঠিক ভাবে পালন হচ্ছে কিনা, কেউ দোষ করলে তার শাস্তি বিধান করবেন।
৩। তৃতীয় স্তম্ভ হল প্রশাসন। পুলিশ আমলা সরকারি কর্মচারী যারা এই আইনকে প্রয়োগ করবেন। আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন, মানুষকে নিরাপত্তা দেবেন। জেলার থেকে এসপি, এই স্তম্ভের অংশ।
৪। চতুর্থ স্তম্ভ হল মিডিয়া, প্রেস, সংবাদ মাধ্যম। তাদের কাজ হল সরকারকে, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমলা পুলিশকে প্রশ্ন করা, তাদের ভুল সবার সামনে আনা। দুর্নীতি থেকে ভাল কাজ মানুষের সামনে আনা। সেই প্রশ্ন করার অধিকার তাদের সংবিধান দিয়েছে।
সাংবাদিকতা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ন পেশা ও সন্মানজনক পেশা
সাংবাদিকতা সহজ নয়, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্মানজনক পেশা! তবে এটা সবার জন্য না। আমরা মানুষ শুধু চাওয়া পাওয়া নিয়ে হিসাব করি, সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরই রয়েছে না পাওয়ার বেদনা। সাংবাদিকসহ সকল জনসাধারণের সচেতনতার অভাবে বাড়ছে বিভিন্ন জটিলতা। মানুষের অভিযোগের শেষ নেই, সকল পেশার মানুষেরই সমস্যা রয়েছে। সচেতন মহলের দাবি-জনসচেতনতার অভাবে অপরাধমুলক কর্মকান্ডও বাড়ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে অনেক মা বোনের ইজ্জত দিতে হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা ও স্বাধীনতা পেয়েছি আমরা, কিন্তু বেঈমান ও কিছু দুষ্টুলোকের কারণে মানবতার কল্যাণে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অনেকেরই অভিমত।
আইনজীবী, পুলিশ, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিসহ সকল পেশায় কিছু বেঈমান ও দুষ্টু প্রকৃতির লোক থাকে, তারা মানুষের সাথে প্রতারণা করার কারণে প্রকৃত ভালো মানুষের বদনাম হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, কোনো দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম থাকলে সে দেশে দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে না। যুগ যুগ ধরে মানুষ সংবাদ, সংবাদপত্র, স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, আবার এটিও উপলব্ধি করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয় অথবা সংবাদমাধ্যম যদি কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে অসত্য বা অর্ধসত্য সংবাদ প্রচার করে, তা দেশ, জাতি ও সমাজের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশে সেই ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমল পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে সরকারের অনেক কর্মকর্তা ও নেতানেত্রীর বেশ কিছু অপকর্ম আমাদের সংবাদমাধ্যম তুলে ধরেছে। এর ফলে জনগণ উপকৃত হয়েছে এবং সরকারও তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করেনি। সে কারনে, সাংবাদিকের দত্বায়িত্ব হচ্ছে অপকর্ম সংবাদমাধ্যম তুলে ধরা, আর প্রশাসনের দ্বায়িত্ব হচ্ছে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া।