করোনা মোকাবেলায় ধনীদের এগিয়ে আসতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দরকার
প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ ,২৮ মার্চ, ২০২০ | আপডেট: ৬:১৮ অপরাহ্ণ ,২৯ মার্চ, ২০২০
জনতার মেইল।। মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আতঙ্কে ও প্রতিরোধে দেশ ১০ দিনের জন্য লক ডাউনের ঘোষনা দিয়েছে সরকার। ২৬শে মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই নির্দেশনায় রাজবাড়ীতেও চলছে লক ডাউন। এই দূর্যগ মূহুর্তে জরুরী কাজ ছাড়া মানুষের বাড়ীর বাইরে চলাচল নিষেধ। সরকার বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় যেমন: চাল, ডাল, তেল বা মুদির দোকান, ওষুধের দোকান, মাছ-মাংসের দোকান ও কাঁচামালের খোলা থাকবে। বাকি সব দোকান বন্ধ থাকবে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে পুরো দেশ ঘরবন্দি। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- রাস্তা-ঘাট জনশুন্য প্রায় ফাঁকা। শুধু দেখা মেলে কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। ‘স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখতে হচ্ছে। বদলে গেছে জীবনচিত্র।
অবাক বিষয় হলো:-বহিঃশত্রুর আক্রমণ নেই, ভয়ঙ্কর কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগও নেই, শুধু এক ভাইরাসের তাণ্ডবে এভাবে যে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে, তা ভাবতেই অবাক লাগছে! ওই ভাইরাসকে কাবু করতে গেলে প্রথমে মেলামেশা বন্ধ করতে হবে, তার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি পালন।
এই করোনাভাইরাসের প্রধান ওষুধ হলো- সব বন্ধ করে আলাদা থাকতে হবে। ঘড় বা বাড়িবন্দি হয়ে। পরিবারের বাইরে আর কারও সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ নয়। যতই ছটফটানি হোক না কেন, গন্তব্য এখন নিজের শোওয়ার ঘর থেকে বারান্দা পর্যন্ত।
এই অবস্থায়, বিপদ তো শুধু এইটুকই নয়। সব চেয়ে বড় বিপদে গরিব মানুষ। লকডাউনের বাজারে তাঁরা কী করবেন? বিশেষ করে অন্যের বাড়িতে যারা ঝিঁয়ের কাজ ও দৈনিক মজুরিতে যাঁরা কাজ করেন? রাজ মিস্ত্রী, কাঠ মিস্ত্রী, পোষাক তৈরীর কর্মি, কামার, কুমার, জেলে, শীল, গার্মেন্টস কর্মি, হোটেল কর্মচারী, মিডিয়া কর্মি তারা কি করবেন? আর যাঁরা রাস্তার ধারে ছোট চায়ের দোকান করে বা রাস্তার মোড়ে, হাটবাজারে, ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, ফেরিতে ঘুরে ঘুরে বাদাম-চানাটুর, ডিম, ছোলা অথবা ঝাল-মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান।তাঁরাই বা ১০ দিন কী করে কাটাবেন? করোনায় লকডাউন কি তাঁর ক্ষেত্রে খাটে? না কি, ঘর থেকে বারান্দা, বারান্দা থেকে ঘরের মধ্যে তাঁদের আটকে রাখা যাবে? তারা কি স্বেচ্ছায় নিজেকে ১০ দিন অবরুদ্ধ করে রাখতে পারবেন?
এরপর যদি লক ডাউনের আরো সময় বাড়ানো হয়, তা হলেই বা তারা কি করবেন। ভাবতেই চোখে জ্বল এসে যায়। কিন্তু, উত্তর জানা নেই। করোনার থাবা থেকে সাধারণ মানুষ কী করে বাঁচবেন, কী করেই বা তাঁরা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং করবেন, ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন, তা বলা অসম্ভব। বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ লোকই অসংরক্ষিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। করোনার থাবা থেকে তাঁদের বাঁচানোটাও সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
*করোনাভাইরাসের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ মার্চ-২০২০ সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলার কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান হারিয়ে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা জীবিকার অসুবিধা হলে তাদের খাদ্য ও আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে। জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সহায়তা প্রদান করবেন।’ সচিব আরো বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হন, তাহলে সরকার তাকে সহযোগিতা করবে। সরকারের ‘ঘরে ফেরার কর্মসূচি’ মাধ্যমে তারা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে আয় বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন।’
সোমবার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশটি নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী প্রধানসহ রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ মহলের সঙ্গে আলোচনা করে দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী এসব সিদ্ধান্ত নেন।
*কথা হচ্ছে; দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র, ৫ শতাং মানুষ অতি দরিদ্র আর ৫ শতাংশ ধনী। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যেরে এই দেশে এত মানুষের অর্থ ও খাদ্যের যোগান দিয়ে সরকারই বা কতটুকু চালাতে পারবে? দুর্নীতিপ্রবণ দেশে সরকারের চেয়ে বেশী অর্থ রয়েছে দূর্নিতীবাজ ধনিদের কাছে। ৫% ধনীর কাছে জিম্বি রয়েছে ৯০% দরিদ্র মানুষ।
সময় এসেছে, এই দূযোগ মূহুর্তে দেশের সরকারের প্রতি ধনীদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ধনীরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এদেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সফলতা পাওয়া যেতে পারে। এ মূহুর্তে যে সকল ধনীরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসবেনা সরকারের উচিৎ লকডাউনের মতো তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করে অর্থ আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা। সুতরাং এসব বিষয়ে আমাদের সকলেরই মনোযোগী হতে হবে ও সরকারকে সহযোগীতা করতে হবে।
*রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইদুজ্জামানের উদ্যোগে ৩ দিন আগে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে কাজের জন্য রাজবাড়ীতে এসে রেল টার্মিনালে আটকা পড়া ব্যক্তিদের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়।
*রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর বাজার সংলগ্ন প্রায় ২ মাস ধরে বসবাস করছিল ৯টি বেদে পরিবার। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম হেদায়েতুল ইসলাম অবগত হওয়ার পর তিনি শনিবার দুপুরে ওই ৯টি বেদে পরিবারকে ১শত কেজি চাউল, ৩২ কেজি আলু, ১০ কেজি ডাউল, সাবান, তোয়ালেসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রদান করেছেন।
*রাজবাড়ীতে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে ২৮ মার্চ-২০২০ শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী রেল স্টেশন সংলগ্ন ফুলতলায় অর্ধশত দিন মজুরের মধ্যে রান্না করা খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে কৃষিকাজে আসা দিন মজুরগণ ট্রেন, বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে রাজবাড়ী রেল স্টেশন এলাকায় আটকা পরে আছে। অভুক্ত থাকা দিন মজুরদের খাদ্য প্রদানের ব্যবস্থা করেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম, শহর শাখার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মন্ডল। তারা বলেন, আটকে পরা দিন মজুরদের খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে।