আজ : বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী জেলা আ’লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে একের বিরুদ্ধে দশের অভিযোগ


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৮:০৪ অপরাহ্ণ ,৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ ,৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
রাজবাড়ী জেলা আ’লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে একের বিরুদ্ধে দশের অভিযোগ

হাইকমান্ডের নির্দেশ মানছেন না রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী কাজী ইরাদত আলী * ওর্য়াড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ * দীর্ঘদিনের নিবেদিত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা।

মোঃ আলমাস আলী ॥  সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল আওয়ামী লীগে স্বচ্ছ ভাবমূর্তিও নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনে হাইকমান্ডের নির্দেশনা মানছেন না রাজবাড়ীর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী কাজী ইরাদত আলী ওরফে মেঝোভাই। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী, জামায়াত-বিএনপি’র নেতা, দাগী তালিকা ভূক্ত আসামী, মোট কথা তার আস্থাভাজন ও বলয়ভিত্তিক নেতাদেরকে তিনি ওর্য়াড-ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। এতে বাদ পড়েছেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এসব কমিটির মাধ্যমে মেঝোভাইয়ের হাত ভারি হয়েছে মাত্র। তৃণমূলে শেখ হাসিনার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও শক্তি দুটোই কমে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে দলের কোনো লাভ হচ্ছেনা বলে সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী কাজী ইরাদত আলী ওরফে মেঝোভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য  আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীসহ ভোক্তভোগী ইউনিয়ন, থানা, পৌর ও জেলা কমিটির নেতার প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মীরা ৭ ই ডিসেম্বর-১৯ শনিবার দুপুরে জেলা শহরের পান্নাচত্বরে পালকী চাইনিজ হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

মাননীয় সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী এমপি গত নির্বাচনের সময় তারই আপন ছোট ভাই কাজী ইরাদত আলী কৌশলে তার নিকট থেকে লিখিত নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হয়েছেন। তার উপর জুলুম নির্যাতনের  যে রাম রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে সেই সর্ম্পকে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন। চলমান সাংবাদিক সম্মেলন বানচাল করাতে কাজী ইরাদত আলীর  ইশারায়  খায়রুল, শিমুল ও রুবেলের নেতৃত্বে বেশ কিছু সন্ত্রাসী টাইপের ছেলেরা পালকী হোটের সামনে এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচারন করে ও উত্তেজিত হয়।

                        

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এমপি। এছাড়াও, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আকবর আলী মর্জি, মহম্মদ আলী চৌধুরী, সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল রাজ্জাক মিয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও রাজবাড়ী পৌর মেয়র মহাম্মদ আলী চৌধুরী, হেদায়েত আলী সোহরাব ও বসন্তপুর ইউপি চেয়ারমান বাবু মির্জাসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কমীরা।

লিখিত বক্তব্যে কাজী কেরামত আলী বলেন- রাজবাড়ী পৌরসভাসহ ৬টি সাংগঠনিক থানা, ২টি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়ন আঃলীগের ত্রির্বাষিক সম্মেলন হয়। উক্ত কাউন্সিলের দিন-তারিখ ও কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটর তালিকা তৈরী না করে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব জিল্লুর হাকিম এমপি ও ভারপ্রাপ্ত সেত্রেুটারী কাজী ইরাদত আলী ষড়যন্ত্র মূলক একতরফা ভাবে কাউন্সিল করে যাচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কথা উপেক্ষা করে জামাত, বিএনপি, ফ্রিডমপাটিসহ অন্যন্য দল থেকে হাইব্রিডদেরকে নিয়ে কমিটি গঠন করছেন। যা দলের নিয়ম পরিপন্থি।  অধিকাংশ ইউনিয়ন-ওর্য়াড এলাকায় নির্বাচন পাশ কাটিয়ে পকেট কমিটি ঘোষণা দেয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ চলছে। অনেক স্থানে নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ছেন। সুলতানপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বির্তকিত ব্যাক্তিদেরকে সভাপতি-সেক্রেটারী করা হয়ছে। রাজবাড়ী রাজাকার ফ্যামিলীর সদস্য রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি জহুরুল খানকে পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিসহ রাজবাড়ী কোর্টের এপিপি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা ব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা ঝড় তুলেছে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দল থেকে যোগদান করা নেতাকর্মীদের নামের তালিকা দলটির কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করছে বলেও সম্মেলনে স্থান পায়। রাজবাড়ী সুলতানপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা বেশ কিছু নামের একটি তালিকা পাওয়া গেছে।তারই মধ্যে কিছু অংশের নাম উল্লেখ করা গেলে। সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ১নং ইউনিটের নব্য সভাপতি বাকাউল হোসেন বকু, তিনি ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত পরিবারের সদস্য, তিনি ২০১৪ইং সালে বিএনপি’র নেতা থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সদ্য উক্ত ১নং ইউনিটের পকেট কমিটিতেও তিনি সভাপতি হিসাবে কৌশলে নিযুক্ত হয়েছেন। বাকাউল হোসেন বকুসহ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে রয়েছে আরো অনেকের নাম। ২নং ইউনিটের নব্য পকেট কমিটির সভাপতি আফছার উদ্দিন মিঠু একজন বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্মিলিত কাজী কেরামত আলীর নির্বাচিনী পোষ্টার পায়ের নীচে ফেলে এই আফছার উদ্দিন মিঠু মুড়িয়েছিলেন। ততকালিন ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ঘটনাটি প্রতিবাদ করায় তিনি আফছার উদ্দিন মিঠু গ্রুপের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ২নং ইউনিটের সদ্য পকেট কমিটির মাধ্যমে সাধারন সম্পাদক পান্নু  আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি একজন মাদ্রক ব্যবসায়ী, মাদ্রক মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন, তার নামের মাদ্রক মামলা নম্বর-জিআর ৬০৯/১৮। ৩নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি তালেব সরদার তিনি দলে অনুপ্রবেশকারী। ২০১৪ইং সালে সুলতানপুর বাজারের একটি দলীয় অফিস হিসাবে দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সেজেযান। তিনি বিএনপি পরিবার থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৪নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সদ্য পকেট কমিটির সাধারন সম্পাদক মুন্নু মিয়া তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালিন অর্থ আত্মসাত করে দুর্নীতিতে অংশ গ্রহন করেন।সম্ভাব্য আইনী ঝামেলা এড়াতেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৫নং ইউনিট আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সভাপতি মিন্টু ঠাকুর তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোক হওযা সত্তেও তিনি বিএনপি’র সাথে জড়িত। গত ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ধানের শীর্ষ প্রার্থীর নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমান বিচারধীন। ৫নং ইউনিট আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সাধারন সম্পাদক শাহজাহান শেক। তিনি ২০১৪ইং সালে দলে অনুপ্রবেশকারী। ৬নং ইউনিট আওয়ামী লীগের পকেট কমিটির সভাপতি রোকনউ্িদ্দন তিনিও দলে অনুপ্রবেশকারী। তিনি দোর্দন্ত প্রকৃতির লোক। হত্যাসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা বির্চারধীন। ৭নং ইউনিটের পকেট কমিটির সভাপতি ইয়াছিন তালুকদার। তিনি অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত। নানবিধ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী।

৯নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মোল্যা। তিনি বিএনপি থেকে দলে অনুপ্রবেশকারী। ৯নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আঃ গফ্ফার সরদার। তিনি দলের অনুপ্রবেশকারী। তিনি কখনোই দলীয় কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নন।

সুলতানপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহেদী সাহিদুজ্জামান রুমি ও সাধারন সম্পাদক লুৎফর রহমান চুন্নু মিয়ার হাত ধরে উল্লেখিত সকল অনুপ্রবেশকারী দলে যোগদান করেন।

Comments

comments