আজ : মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ী বালিয়াকান্দিতে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যের তাঁত।


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ ,১৩ আগস্ট, ২০২১ | আপডেট: ১১:৪৪ অপরাহ্ণ ,২৮ আগস্ট, ২০২১
রাজবাড়ী বালিয়াকান্দিতে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যের তাঁত।

বালিয়াকান্দি প্রতিনিধি।। বাংলাদেশের তাঁতশিল্প ও তাঁতশিল্পী আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের সংস্কৃতি। তাঁতীদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম এই তাঁতবুনন। রাজবাড়ী জেলা বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া, পাটকিয়াবাড়ি, খালিয়া, মধুপুর ও গঙ্গারামপুর সহ ১৫ টি গ্রামে প্রায় ১২ হাজার তাঁতী পরিবারে প্রায় ১৫ হাজার তাঁতকল চালু ছিল। তাঁতশিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল সুতা ও রং।শুক্রবার ১৩ ই আগষ্ট, বালিয়াকান্দির তাঁতীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই সুতা রং এর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমিকের মুজুরী বৃদ্ধির ফলে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁতীদের। বিক্রীর তুলনায় তৈরী খরচ বেশী হওয়ায় তাঁতীরা তাঁতশিল্পে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে তাঁতীরা স্বেচ্ছায় তাঁতকল বন্ধ করে দিচ্ছে। আয়ের উৎস হারিয়ে অভাব অনটনে কমে যাচ্ছে তাঁতী এবং তাঁতের সংখ্যা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে ঐতিহ্যের তাঁতশিল্প। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক তাঁতকল। দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকার কারনে জং ও মরিচা ধরে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে অনেক তাঁতকল। তাঁত বিমূখ বহুবিধ প্রতিকুলতায় অনেক তাঁতী জীবিকার তাগিদে বংশীয় পেশা ছাড়ছেন। বংশানুক্রমে যুগের পর যুগ ঐতিহ্যের তাঁতশিল্পের ধারক ও বাহক হয়েও পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। সরকারি সহযোগীতা, স্বল্পসুদে ঋন, অনুদান বা পৃষ্টপোষকতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ঐতিহ্যের তাঁত। অন্যথা এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলে তাঁত শিল্পের ইতিহাস ও ঐতিহ্য মুছে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।গঙ্গারামপুরের তাঁতী মোঃ চাঁদ আলী মল্লিক, মোঃ রবিউল ইসলাম এর সাথে কথা বলে যানা যায়, টাকা পয়সার অভাবে তাঁত বন্ধ করে রেখেছেন। সরকারের কাছ থেকে কোন অনুদান কিংবা সাহায্য সহযোগীতা পায়নি। কেউ তাদের খোঁজ রাখেনা। দাম বৃদ্ধির ফলে ১৪’শত টাকার সুতা বর্তমানে ২২’শত টাকা এবং ১৮’শত টাকার সুতা ২৯’শত টাকায় কিনতে হয়। ফলে কাপড় বিক্রীতে লোকসান গুনতে হয়। তারা বলেন, আদি ব্যাবসা হলেও বর্তমান জামানায় তাদের পক্ষে এই ব্যাবসা আর চালিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।নাড়ুয়ার তাঁতী মোঃ বাবলু মল্লিক বলেন, সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা পেলে আমাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁতকল গুলো পুনরায় চালু করা যেত। তাঁতশিল্পী আঙ্গুরী বলেন, সুতার দাম বেশী, কাপড়ের দাম কম হওয়ার কারনে তাঁত বন্ধ রেখেছি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কি খাব জানিনা। স্বামী এবং সন্তানরা মাঠে অন্য কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা জনতার মেইল.কমের প্রতিনিধিকে জানান, নারুয়া ইউনিয়নের পাটকিয়াবাড়ী, খালিয়া, মধুপুর, গঙ্গারামপুর ইত্যাদি গ্রামে প্রায় ৫০/৬০ টি তাঁতকল এখনও চলমান আছে। মোট ২ হাজারের মত তাঁতকল ছিল। কিন্তু এখন কিছুদিন ধরে তাঁতীরা অন্য পেশায় স্থানান্তর করায় তাঁতকলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এই মর্মে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আমি তথ্য পেয়েছি। তাঁতীরা কখনোই আমাদের কাছে সহযোগীতা বা সরকারি আর্থিক অনুদান কিংবা কোন প্রকার সহায়তার জন্য আসেনি। এটার বিষয়ে আমাদের কাছে কখনই কোন প্রকার আবেদনও জানায়নি। এইমাত্র আমি আপনার মাধ্যমে বিষয় জানতে পারলাম। আমি পরবর্তীতে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করব।
মসলিন, জামদানির মত দেশীয় ঐতিহ্যের তাঁতশিল্প মন্দা কাটিয়ে ফিরে পাবে তার হারানো অতীত, এটাই আজকের প্রত্যাশা।

Comments

comments