আজ : শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রনঘাতি করোনাভাইরাসও এদের কিছুই করতে পারবে না!


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৬:১০ অপরাহ্ণ ,১৯ এপ্রিল, ২০২০ | আপডেট: ১১:১৭ অপরাহ্ণ ,২০ এপ্রিল, ২০২০
প্রনঘাতি করোনাভাইরাসও এদের কিছুই করতে পারবে না!

ফেসবুক।। ডাক্তাররা ৪ ঘন্টা অভিনয় করে অপারেশনের বিল আদায়ের পর মৃত রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এটা বগুড়া শহরের সুত্রাপুর এলাকায় মালেকা নার্সিং হোমের ঘটনা।

বিস্তারিতঃ জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকা কায়েমগ্রামের কৃষক হারুনার রশিদের মেয়ে হুমাইরা আকতার স্থানীয় কায়েমগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ত। তার টনসিলে সমস্যা হলে গত দুদিন আগে বগুড়া শহরের শেরপুর সড়কে সুত্রাপুর এলাকায় মালিকা নার্সিং হোমে আনা হয়। সেখানে ওই শিশুকে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. সাইদুজ্জামানকে দেখান। সে অপারেশনের কথা বলেন। অপারেশন ফি ধরা হয় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। সোমবার বেলা সাড়ে ১০.টার দিকে হুমাইরাকে ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। বিকাল ৩.টায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিলে আধা ঘন্টা পর ডা. সাইদুজ্জামান ভেতরে ঢোকেন। বিকাল ৪.টায় চিকিৎসক বাহিরে এসে জানান, অপারেশন সাকসেসফুল, রোগীকে বেডে দেয়া হবে। এরপর নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা হুমাইরাকে বেডে দিয়ে যায়। কিন্তু হুমাইরার পালস্ না থাকা ও শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয়ায় স্বজনদের সন্দেহ হয়। তারা চিকিৎসক ও নার্সকে বিষয়টি জানালে তারা কর্ণপাত না করে জানান, রোগী ভালো আছে শিগগিরই জ্ঞান ফিরবে।

এর আগেই অপারেশন ফি আদায় করা হয়। রাত সাড়ে ৮.টা পর্যন্ত জ্ঞান না ফেরায় স্বজনরা অস্থির হয়ে ওঠেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা ভাল নয়; তাকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ বলে চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি রেফার্ড করেন। শিশুকে সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাবার আগে স্বজনরা নিশ্চিত হবার জন্য প্রথমে বগুড়া শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেন।  সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর মৃত্যুর কথা জানালেও স্বজনরা মেনে নিতে পারেননি। তারা শিশুটিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক ইঙ্গিতে বোঝান হুমাইরা মারা গেছে। এরপর বাবা হারুনার রশিদ, মা সাহেদ ও মামা আলমগীর শিশুর লাশ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মালেকা নার্সিং হোমে ফিরে আসেন।

ভুল অপারেশনে শিশু মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লিনিকে সামান্য ভাংচুর করেন। এ সময় চিকিৎসক, নার্স, ক্লিনিকের ম্যানেজার ও অন্যরা বাতি নিভিয়ে পালিয়ে যান। এমনকি রোগীর সঙ্গে দেয়া চিকিৎসাপত্র ও রেফার্ড লেটার গায়েব করে দেয়া হয়েছে।

খবর পেয়ে রাত ১২.টার দিকে থানা পুলিশ ক্লিনিকে আসে। ওই সময় রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সে শিশু হুমায়রা আকতারের নিথর দেহ পড়েছিল।

পাশে বাবা-মা আহাজারি করছিলেন। মা সাহেদা শুধু আহাজারিতে সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় বলছিলেন, ভুল চিকিৎসায় তার বুকের মানিককে মেরে ফেলা হয়েছে।

রাত ১.টার দিকে সদর থানা পুলিশ শিশুর লাশ উদ্ধার করেন, এবং শিশুর পরিবার মামলা দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, একথা বলে পুলিশ চলে যান।

এ সময়, কিছু প্রভাবশালী ঘটনাটিকে চাপা দিতে ও ভুল অপারেশনকারী চিকিৎসক এবং অন্যদের বাঁচাতে তদবির করছিলেন। আর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা অবিলম্বে মালেকা নার্সিং হোম সিলগালা করে মালিক ও ডাক্তারকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

এটা ২০২৯ সালের ৯ এপ্রিলের একটি শিক্ষনিয় ঘটনা।

এখন প্রশ্ন হলো মৃত শিশুকে ৪ ঘন্টা জীবিত দেখিয়ে ক্লিনিকের সমুদয় বিল নিয়ে অন্য হাসপাতালে রেফার করাটা কতটা নির্মম প্রতারণা ও অমাবিক? চিকিৎসার নামে এসব কসাইখানায় আর কতদিন ঠান্ডা মাথায় এমন নির্মম হত্যাকান্ড চলতেই থাকবে? একবার ভাবুন-তো! এরা কারা? এরা সমাজের রাজনীতিবিদ আর প্রশাসন মিশ্রিত প্রভাবশালী, এরাই-তো সেই শোষক শ্রেনী। দুনিয়ার বুকে এদের বিচার করার মতো কেউ নেই। বিশ্বজুড়ে মহামারী প্রনঘাতি করোনাভাইরাসও এদের মতো পাষন্ডদের কিছুই করতে পারবে না।

Comments

comments