আজ : শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৌলতদিয়ার সেই কুখ্যাত নূরু মন্ডল আ’লীগ থেকে বহিষ্কার


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:২৪ অপরাহ্ণ ,২ নভেম্বর, ২০১৯ | আপডেট: ১০:৩২ অপরাহ্ণ ,৩ নভেম্বর, ২০১৯
দৌলতদিয়ার সেই কুখ্যাত নূরু মন্ডল আ’লীগ থেকে বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিনিধি।। রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটের আলোচিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসাবে খ্যাত সেই নূরু মন্ডল ওরফে নুরুল ইসলাম মন্ডলকে এবার আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

২রা অক্টোবর-১৯ শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ গোলাম মোস্তফা বাচ্চুর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অব্যাহতির বিষয় জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের তদন্ত কমিটির প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মন্ডলের শোকজ নোটিশ ও দাখিলীয় জবাব পর্যালোচনাপূর্বক সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ, দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের ওপর হামলায় ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর ওপর হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সহসভাপতি ডা. শেখ আব্দুস সোবহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল আজম মামুন ও সদস্য রেজাউল করিম লালকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির প্রতিবেদনে প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর ওপর হামলার ঘটনায় নূরু মন্ডলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে মর্মে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ২১সেপ্টেম্বর-১৯ শনিবার দুপুরে দলিয় কার্যালয়ে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠিত সভায়, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ জিল্লুল হাকিম এমপি’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী কেরামত আলী এমপি, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী,সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার,সহ-সভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ডাঃ এস এ সোবাহান, আব্দুস সাত্তার মিয়া, যুগ্ম-সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল আজম মামুন, সকল উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায়, গোয়ালন্দ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে গত ৮ জুলাই একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো গ-১৭-৭৮২৭) যোগে পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষে রাজবাড়ী ফেরার পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে গোয়ালন্দ-ফরিদপুর মহা সড়কের জমিদার ব্রীজ (ভিক্টর ফিডস লিমিটেড) এর সামনে পৌছলে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের গতিরোধ করে। এসময় ৮/১০ টি মোটর সাইকেলযোগে ১৫-২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদেরকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে হাতুরী দিয়ে গাড়ীর সামনের গ্লাসসহ দরজা জানালার কাঁচ ভেঙে হাতুরি দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে প্রদীপ্ত চক্রবর্তী বাম হাত দিয়া ঠেকানোর চেষ্টা করে, এসময় তার হাড়ভাঙ্গাসহ গুরুতর আহত হন। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায়, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নৃশংস এ হামলার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে- প্রদীপ্ত কান্ত চক্রবর্তী বলেন সন্ত্রাসীরা খুন করার উদ্দেশ্যে জখম করার সময় বলতে থাকে “নুরুমন্ডলের বিরোধিতা করিস” সাহস পাস কোথায়, আজ তোদেরকে খুন করে ফেলবো।

তিনি আরো জানান, গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম মন্ডলের নির্দেশেই এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে বলে আমি ধারণা করছি।

ওই হামলার ঘটনায় প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত নিজে বাদী হয়ে গোয়ালন্দ থানায় পরদিন ৯ জুলাই একটি মামলা দায়ের করে। গোয়ালন্দ থানায় মামলা (নং-১০ তারিখ-৯/৭/১৯ ধারা-১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭ দ:বি:) এই মামলার প্রেক্ষিতে নুরু মন্ডলের ঘনিষ্টজন (দেহরক্ষী) হিসেবে পরিচিত সোহাগ ওরফে লাদেন সোহাগকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

এ ঘটনায় ২২ শে জুলাই-১৯ সোমবার জেলা আওয়ামীলীগ একটি জরুরী সভা করে, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক ডা. এস এ সোবহানকে প্রধান করে,জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল আজম মামুন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খানখানাপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম লালকে সদস্য করে  ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তিরত, ওই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে অনুসন্ধান এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করে সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্তর উপর হামলার ঘটনায় নুরু মন্ডলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। একারণে তার বিরুদ্ধে সাংঘঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে ২১ সেপ্টেম্বর-১৯ শনিবার দুপুরের দিকে দলিয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে উল্লেখিত বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে নুরুল ইসলাম মন্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটে ত্রাস সৃষ্টি, কৃত্তিম যানজট ও পতিতাপল্লীতে মাদক সহ নানান অপকর্ম সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে নুরু মন্ডলের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এসব বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও গণমাধ্যমে নুরু মন্ডলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সব প্রতিবেদনে তার সাথে রাজবাড়ীর একজন জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততার বিষয়টিও প্রকাশিত হয়।
এসব অভিযোগ মাথায় নিয়েই গত ১৬ সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন মোঃ নুরুল ইসলাম মন্ডল। ওই নির্বাচনে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ্ত চক্রবর্তী কান্ত বলেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনকালে আমার উপরে যে হামলার ঘটনা সেটা দলের উপর হামলার শামিল। একারণে দলের বিরুদ্ধে হামলা ও ষড়যন্ত্রকারীর দলে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় যে, সভায় নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম, ৫টি উপজেলা কাউন্সিল দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা, যথাযথ মর্যাদায় ৩ নভেম্বর ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস পালনসহ সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ ও ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালনের বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কারণে ইতিপূর্বে গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত গোলাম মাহবুব রব্বানীকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে,জেলা আওয়ামী লীগের সভায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনে কোন প্রকার উদ্যোগ না নেওয়ায় কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শামসুল আলমকে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠান হচ্ছে। এর আগে কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় তাদেরকে বহিষ্কার করে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক মাষ্টারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১ নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম খায়েরকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগে রেজুলেশন পাঠান হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এজন্য অক্টোবরের মধ্যে জেলার ৫ টি উপজেলা ও পৌর সম্মেলন সমাপ্ত করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

                                                       

                                            নুরু মন্ডলের আংশিক অপকর্ম

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে খুন, ধর্ষন, চাঁদাবাজী, মাদকব্যাবসা, নারী পাচারসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যাহার সাথে তিনি যুক্ত নন। ইনডিফেনডেন্ট টেলিভিশনের তালাশ টিমের প্রতিবেদনে ও বিভিন্ন পত্র-পত্রীকায় বিভিন্ন শিরোনামে দৌলতদিয়া ঘাটের এই শাষকের নাম প্রকাশ পেয়েছে। অতিতের ভয়ংকর বাংলাভাই, খুনি এরশাদ শিকদারকেও হার মানায় এই শাষকের লোমহর্ষক অপকর্মের কাহিনি। যাকে সবাই চেনে, জানে ও মানে, শিশু কিশোর থেকে আবালবৃদ্ধ বয়স পর্য্ন্ত যার কথায় সবাই ওঠে বসে । যার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস করেনা, মামলা করলেও বিচার হয়না। প্রকাশ্যে একজন সমাজ সেবক, ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ প্রবাদ বাক্যের ন্যায়। অপরদিকে- অপ্রকাশ্যে একজন ভয়ংকর খুনি, চাঁদাবাজ ও মাদকবাজ। যেখানে নিজের এলাকার শতাধিক সন্ডা-গন্ডা রিজার্ভেতো আছেই তার উপর আবার দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার জঙ্গীবাহিনীর ও জামাত শিবিরের খুনি ক্যাডররা তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানাযায়। তার বিরুদ্ধে যখন কেউ প্রতিবাদ করতে যায় ঠিক তখনই তার আশ্রয়ে থাকা দুরের অজানা-অচেনামূখ ভারাটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা রাতের আধারে তাকে পৃথিবী থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়। যে হত্যার কোন আলামত প্রমান থাকেনা। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তার অপকর্মের বিষয়ে স্থানীয় কোন সাংবাদিক লিখতে সাহস পায়না, লিখলেও হত্যা অথবা মিথ্যা মামলা হয়। কে এই ভয়ংকর অপশক্তিধর ব্যাক্তি ? তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নুরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নুরু মন্ডল। তার মাতার নাম- কদবানু বিবি আর বাবার নাম-এলেম মন্ডল।

নুরু মন্ডলের এলাকার হত্যার আংশিক চিত্র, অজানা আরও আছে

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারন সম্পাদক গোলাপ আলী ব্যাপারীর ছেলে, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম জুলহাস ব্যাপারীকে গুম ও হত্যা হওয়ায় ০৪/০৬/২০০৬ইং তারিখে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা হয়, মামলা নং-০২, ধারাঃ ৩৬৪। এ মামলায় নুরু মন্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায়, তিনি হত্যা ও গুম হওয়া রেজাউল করিম জুলহাস ব্যাপারীর চাচাত ভাই গেয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মাহবুবুর রব্বানীকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় নুরু মন্ডলের নামে একটি জিডি করা হয়, যার জিডি নং- ৭৪৫/২০০৬ইং । আরো কিছুমামলার তথ্য- ১৯৭৪ সনের বিশেষ ক্ষমতা আইন ২৫(খ) ধারায় ২৬/৯/১৪ সালের শিবালয় ঘাট থানার মামলা নং-১৯। ১৯/১১/২০০৭ সালের গোয়ালন্দঘাট থানার মামলা নং-০৯ । ধারাঃ ১৪৩/১৪৮/৩২৩/৩২৫/৩৭৯/৩৮০/৪২৭।

১১/৮/২০১৬ ইং তারিখে মোছাঃ আফরোজা রাব্বানী বাদী হয়ে নুরুল ইসলাম মন্ডলকে প্রধান আসামী করে মোট ৩ জনের নামে রাজবাড়ী নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যাবিধি আইনের ১০৭/১১৮/১১৭(সি) ধারায় মামলা করেন ।

এছাড়াও হত্যার আরও ঘটনা বর্ননা দেওয়া হলো, *মকবুলের দোকানের সামনে সর্বহারার প্রভাব ঘটাতে ও সামান্য টাকার বিনিময়ে নুরু পুলিশকে মেরে ফেলে । *বাহির চর দখলের জন্যে চান মিয়াকে মেরে ফেলে। *অন্যায় কাজে বাধা দেয়া ও ভাল মরামর্শ দাতা জ্ঞ্যানী লোক ভেবে সন্ধ্যা রাতে বাসায় গিয়ে মেরে ফেলে শামসু মাষ্টারকে। *সর্বহারার কোন্দলে বেথুরির ইয়াকুবকে মেরে ফেলে অস্ত্র কেরে নেয়। *বেথুরীর কদমকে হত্যা করে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। *বেথুরীর নুর ইসলামকে হত্যা করে অস্ত্র কেরে নেয়। *ফেরীতে জুয়া খেলার টাকা ভাগ না দেওয়ার অপরাধে সাইফুদ্দিনকে হত্যা করে। *জুয়াড়ু মিন্টুকে ফেরীর মধ্যে থেকে মেরে নদীতে ফেলে দেয় । *জুয়ার টাকা আত্নসাৎ করায় ওয়ানটেন জুয়ার বোর্ডের নুরু নামের একজন পাহারাদারকে নুরু মন্ডল নিজেই মেরে ফেলে। *নদীতে ডাকাতি করতে গিয়ে নুরাই এর ছেলে হারুন ও নৌকার মাল্লাকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। *ছিনতাই ও ইয়াবার ব্যাবসার কোন্দলে আজিজল প্রামানিকের ভাতিজাকে বালুর চরে নিয়ে মেরে ফেলে। *নদীতে জেলেদের থেকে আদায়কৃত টাকার সঠিক হিসেব না দিতে পারায় খোকনকে মেরে ফেলে। *যৌনপল্লিতে পতিতা লাভলিকে জবাই করে হত্যা করে নগত টাকা ও গহনার জন্যে। *শতভাগ নিশ্চিত চেয়ারম্যান হতে কৌশলে ঢাকায় নিয়ে প্রতিদন্দী নাজিমদ্দিন ফকীর চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলে । *নুরু মন্ডলের কাছে পতিতা ছালমি ১০ লাখ পাওয়ানা টাকা চাওয়ায় প্রথমে ভয় দেখায় পরে তাকে মেরে ফেলে। *বেশ কয়েক বছর র্পূবে নুরু মন্ডলকে কে বা কারা গুলি করে, তাকে গুলি করেছে সন্দেহে সিদ্দিক ডাক্তারের ছেলে সাদ্দামকে ও রুবেল নামের একজনকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে পাট ক্ষেতে নিয়ে মেরে ফেলে । *নির্বাচনী কোন্দল ও ক্ষতি করতে পারে সন্দেহে মোহন মন্ডলের ছেলে সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির মেধাবী ছাত্র সাইফুল ইসলাম রিপনকে ০৮/০৯/২০১৪ তারিখে কৌশলে দৌলতদিয়া পতিতালয়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে, (সূত্রঃ গোয়ালন্দনিউজ.কম) । এ সময় রিপনের এক বন্ধুও গুলি বিদ্ধ হয়, এ ঘটনার এজাহারভুক্ত সকল আসামীই নুরু মন্ডলের সক্রিয় ক্যাডার। তার আধিপত্য বিস্তরের জন্য এই হত্যাকান্ড ঘটায় । *ছাত্তার ফকীরের নাতি রবিন (১২) শিশুকে অপহরন করে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে না দিয়ে বরং হত্যা করে । *টেন্ডার বাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গোয়ালন্দ পৌর ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর হোসেনকে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই রাত ৯.টায় হত্যা করা হয়। নুরু মন্ডলের নির্দেশে হালিমের নেতৃত্বে নজরুল মন্ডলের উপস্থিতিতে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। ঘটনার প্রধান আসামী ইমরান হোসেন আকাশকে খুনে ব্যাবহার করা ছুরিসহ জনতা পাকড়াও করে পুলিশে সোর্পাদ করে। এ হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়কে মানববন্ধন, অবরোধ হলেও কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি। (সূত্রঃ গোয়ালন্দনিউজ.কম)। *গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শরীফুজ্জামান পলাশকে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল বেলা ১১.টার দিকে যুবলীগনেতা জিন্দার আলী, আব্দুল জব্বার, আতিয়ার শেখ, নান্নু শেখ, মারফত আলী, জহুরুল ইসলাম’রা দুদুখান পাড়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকারীরা সকলেই নুরু মন্ডলের আশ্রয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। **১৪/৭/১৬ তারিখে গোয়ালন্দে স্কুল ছাত্রকে অপহরনকালে নয়ন মৃধা ও আনোয়ার মন্ডল এই ২ জনকে গন ধোলাই দিয়ে পুলিশে সর্পদ করা হয়, (সূত্রঃ গোয়ালন্দনিউজ.কম)। অপহরনকারী নয়ন মৃধা নুরু মন্ডলের ঘনিষ্ঠ লোক ও জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। *পতিতা লিপির থেকে তার এক লোক বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ৩০/৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সে লোকটি পরে লিপির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে লিপি পাওয়ানা টাকা আদায়ের চেষ্টায় তার সাথে যোগাযোগ ব্যার্থ হয়ার পর হঠাৎ ৯/২/১৬ তারিখে ভোর রাতে লিপির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ রকম অহরহই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। প্রত্যেকটা মৃত্যু ঘটনায় নুরু মন্ডল ও তার লোকজন পত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ফরমান নামে তার এক লোক পিস্তল সহ ধরা পরে ১৪ বছরের জেল হয়। নরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নুরু মন্ডল সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি লাভ করায় রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের কর্যালয়ে সন্ত্রাস তালিকা বোর্ডে ও গেয়ালন্দ থানায় দীর্ঘদিন ছবি টানানো ছিল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর হতে এই সন্ত্রাসী নুরু মন্ডলের ছবি অপরাধীদের ছবির নোটিশবোর্ডে আর দেখা যায়না।

নুরু মন্ডল কতৃক পরিবহন খাতের অবৈধ আয় বন্ধ করে দিলেনএসপি মিজানুর রহমান

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই- নৌকার সাইনবোর্ড লাগিয়ে নুরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নুরু মন্ডল ও বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া শাখার জোগসাজশে ট্রাক ড্রাইভারদের জিম্বি করে তাদের নিকট থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা বেশি নিয়ে ফেরি পারাপারের টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছিল। রাজবাড়ীর সুযোগ্য পুলিশ সুপার- মিজানুর রহমান তার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কিছুদিন পর থেকেই সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। ঘাটে এখন আর চাঁদাবাজি হয়না।

সিন্ডিগেট করে পরিবহণ খাত হতে যে ভাবে আয় করত নুরু মন্ডল ?

নুরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নুরু মন্ডল ও বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া অফিসের ব্যাবস্থাপক (ততকালীন) সফিকুল ইসলাম (বানিজ্য) এর জোগসাজশে ট্রাক ড্রাইভারদের জিম্বি করে তাদের নিকট থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা বেশি নিয়ে ফেরি পারাপারের টিকিট বিক্রি করে আসছিল। ফেরি পারাপারের জন্যে বিআইডব্লিউটিসি’র নির্ধারিত ভাড়া বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে এক হাজার চারশত ষাট (১,৪৬০) টাকা এবং ছোট ট্রাকের ক্ষেত্রে এক হাজার ষাট (১,০৬০) টাকা ।

দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে ছোট বড় প্রায় ৫/৬ হাজার বিভিন্ন যান পারাপার হয়ে থাকে । মালবাহি ট্রাক পারপার হয় অন্তত দেড়/২ হাজার।

প্রায় সময় ঘাটের অথবা ফেরির সমস্যা অজুহাতে এই দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিনিয়তই কৃত্তিম যানজট সৃষ্টি করে থাকে। যত বেশি যানজট সৃষ্টি হয়, দালালদের তত বেশি আয় হয়। যানজট না থাকলে দালালদের আয় কমে যায়। জানাযায়, প্রতিটি ট্রাকের টিকিট কাটতে হয় সরকারী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৮০০ থেকে ১৫০০টাকা বেশী দিয়ে। তবে নুরু মন্ডল নিজে এ কাজ করতেননা,তিনি দুধে ধোয়া তুলসির পাতা থেকেই তার লোক (দালাল) দিয়ে করাতেন। নূরু মন্ডলের প্রতিনিধির নেতৃত্তাধিন দালাল বাহিনীর ওভারটেক করে ট্রাকে মাল বহনকারী ব্যবসায়ী বা ট্রাকচালক কেউই সরাসরি নিজেরা কখনও কাউন্টার থেকে টিকেট কাটার সাহস করতেন না। সরাসরি কাউন্টার থেকে ড্রাইভার/হেলপার নিজেরা টিকেট কাটলেও অতিরিক্ত উৎকোচ দিয়েই টিকেট কাটতে হত। এই উৎকোচ যখন দিতেই হয় সে কারনে নিয়মিত পারাপার হওয়া বিভিন্ন কাভার্টাভ্যান, ট্রাক মালিকগন নুরু মন্ডলের লোকদের (দালালের) সাথে টিকেট ক্রয় করে দেওয়ার জন্য ষ্ট্যাম্প চুক্তি করে নিয়েছে। এরা নাকি দালাল না, এদেরকে বলা হয় ষ্ট্যাটার্চ ।

একেকটা টিকেট থেকে দালালরা পেত দের/দুইশ টাকা, বাকি টাকা তার প্রতিনিধির কোষাগারে জমা হতো। সেখান থেকে নুরু মন্ডলের কোষাগারে চলে যেত। এভাবে শুধু মাত্র ট্রাকের দালালি থেকে নূরু মন্ডলের আদায় করা বাড়তি উৎকোচের হিসাব কষে দেখা যায়, দৈনিক (প্রতি ২৪ঘন্টা) আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪/১৫ লাখ টাকা এবং মাস শেষে দাড়ায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।

এই অবৈধ আয়ের সম্পূর্ন টাকা লোকের মাধ্যমে জমা হতো চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল ওরফে নুরু মন্ডলের কোষাগারে।

এ সকল পন্যবাহী ট্রাক পারাপারের জন্য আবার বিভিন্ন লোকের দ্বায়িত্ব দেওয়া ছিল। যেমন, গরু ও কাঠ বহনকারী ট্রাক, গুলো নিয়ন্ত্রন করতো একজন। মাছ বহনকারী ট্রাকগুলো একজন, কাভার্ডাভ্যান নিয়ন্ত্রন করতো একজন, কাঁচামালের ট্রাক একজন, । ফলের গাড়ি নিয়ন্ত্রন করতো একজন, ছোট পিকআপের দ্বায়িত্বে ছিল একজন। আবার তাদের প্রত্যেকের অধিনে থাকত ১০/১৫ জন করে দালাল ও ক্যাডার। তারা দিগুন টাকা নিয়ে টিকিট কেটে দিত।

ফেরির টিকেট কেটে দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে এই দালালদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময় অনেক দালালদের জেল জরিমানাও করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। জরিমানা দিয়ে বা জেল-হাজত থেকে বেড়িয়ে এসেই দালালরা আবারও একই কাজ শুরু করতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক কাউন্টারে এক দালালের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ট্রাক মালিকগন ঘাটের বিভিন্ন লোকের সাথে টিকেট ক্রয় করে দেওয়ার জন্য ষ্ট্যাম্প চুক্তি করে নিয়েছে। একটা কম্পানির সাথে আমারও চুক্তিনামা আছে , অমার কম্পানির ১৩টি ট্রাক আছে। টিকেট প্রতি ৩/৪শ টাকা বেশি নিয়ে আমি শুধু আমার কম্পানির গাড়ির টিকেট কেটে দেই । আমরা দালাল না, আমাদেরকে বলা হয় ষ্ট্যাটার্চ। যাদের কোন ষ্ট্যাম্প চুক্তিনামা নাই তারা দালাল।

এভাবে দৈনিক গড়ে অন্তত ১৪/১৫ লাখ টাকা ওঠে, সব টাকা জমা হতো নুরু মন্ডলের কোষাগারে

এই ট্রাক চাঁদাবাজির কারনে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবহন সেক্টরের লোকজন। বিষয়টি বর্তমান সু-প্রশাসনের নজরে আসায়- ফেরিঘাট ও সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিতের কথা ভেবে ইতোমধ্যেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যাতে করে গাড়ির সিরিয়াল ব্রেক না হয় এবং চাঁদাবাজির দৃশ্য ধারন করে ব্যাবস্থা নেওয়া যায়।

সাংবাদিক সন্মেলনে রাজবাড়ী আসেনের এমপি বলেছিলেন

উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ১৬ই আগষ্ট মঙ্গলবার দুপুরে গেয়ালন্দ উপজেলা আ’লীগ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সন্মেলনে  রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ আলহাজ কাজী কেরামত আলী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) তদন্ত করে নুরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে যদি অনৈতিক কোন বিষয় পেয়ে থাকেন, তাহলে লিখনির মাধ্যমে তুলে ধরবেন। প্রশাসনকেউ বলে দিয়েছি আপনারাও তদন্ত করবেন, যদি দোষ প্রমানিত হয় তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিবেন। (এতদিন কেউ ব্যাবস্থা না নিলেও বর্তমানে ঠিকই ব্যাবস্থা নিয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।)

যৌনপল্লীর প্রবেশ পথে চাঁদাবাজি  বন্ধ করে দিলেন এসপি মিজানুর রহমান

সরকারি নিয়ম নীতি না থাকলেও টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছে সাঈদ কমান্ডার ও লাল মিয়ার পাহারাদার বাহিনী। দেশের সর্বাবৃহত পতিতাপল্লি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া অবস্থিত । এই পল্লিতে অন্তত সারে ৩হাজার যৌন কর্মির বসবাস। এই পল্লিতে ঢুকতে হলে ৬৪টি সদস্যের পাহারাদার বাহিনীর নিকট থেকে ৪০টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয়সহ অনুমতি সাপেক্ষে ঢুকতে হতো । এই প্রবেশ পথে প্রতিদিন ২/৩ লাক্ষ টাকা টিকিট বিক্রি হয়ে থাকত। তথাকথিত পাহারাদার বাহিনী প্রকাশ্যে প্রভাবশালী নুরু মন্ডরের ছত্রছায়ায় টিকেট বিক্রির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করত। বিষয়টি দেখার মত এতদিন কেউ ছিলনা। বর্তমান সেটি বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।

যৌনপল্লীর প্রবেশ পথে টিকিট বিক্রির দ্বায়িত্বে ছিল সাঈদ কমান্ডার লাল মিয়া

দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী নিয়ন্ত্রন করতে ও প্রবেশ পথে টিকিট বিক্রি করার দ্বায়িত্বে রয়েছে, নুরু মন্ডলের ক্যাডার স্থানীয় সাঈদ ও লালমিয়া । তাদের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়েছিল ৬৪ সদস্যের বিশেষ বাহিনী। দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে প্রবেশ করতে পাঁচটিট গেট রয়েছে। সকল গেটেই পাহারাদার বাহিনীর সদস্যরা টিকিট বিক্রি করে থাকে । পল্লীতে প্রবেশে মানুষের কাছ থেকে ৪০টাকার টিকিটের মাধ্যমে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে এই বাহিনীর সদস্যরা । অনেকে আবার ভিতরে ঘুরে ঘুরেও টাকা তোলে। ৬৪ জন পাহারাদার দলে দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন রংয়ের টিকিট দিয়ে জন প্রতি ৪০ টাকা করে আদায় করে । একজন পল্লীর ভেতর থেকে বাহিরে আসলে তাকে আবারও পুনারায় ৪০ টাকার টিকিট নিয়ে পল্লীতে প্রবেশ করতে হয় । সংশ্লিষ্টদের হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয় । কোন কোন বিশেষ সময় এর দ্বিগুন টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে । সরকারি নিয়ম নীতি না থাকলেও এভাবে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে এ বাহিনী । আদায়কৃত প্রায় ২লাখ টাকা  দিন শেষে জমা হয় নুরু মন্ডলের কোষাগারে ।

অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোরীদের যৌন পেশায় লিপ্ত করানো নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে তা স্বাভাবিক ব্যাপার । এর জন্য প্রতিজন কিশোরীর ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়  পাহাড়াদার বাহিনীর কমান্ডার সাঈদ ও লালমিয়াকে । কিশোরী-তরুনী ক্রয় বিক্রয় বা স্বেচ্ছায় যৌনপেশায় নাম লেখাতে এবং এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি গেলেও এদের টাকা দিতে হয় । পতিতাপল্লীতে যেকোন ঘটনার বিচারও তাদের হাতে বিচার করাতেও টাকা লাগে । সবকিছুই চলে তাদের ইচ্ছায় ।

নির্যাতনের ভয়ে পল্লীতে আগত সকল মানুষদের বাধ্য হয়ে এই পাহারাদার গ্রুপের কথামত চলতে হয়  । যৌনপল্লীতে প্রবেশ করার প্রধান গেটে থাকা অফিস থেকেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয় । আর এখান থেকে অবৈধ উপায়ে আয় করা কোটি কোটি টাকার একটি বড় অংশ চলে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে । এছাড়া মাদক ব্যবসা, জুয়া, সারাদেশ থেকে পাচার করে আনা কিশোরী-তরুনীদের দিয়ে জোর পূর্বক দেহ ব্যবসায় লিপ্ত করাসহ সকল অপরাধ মুলক কাজ নিয়ন্ত্রন করে এ বাহিনী । দিনের বেলায় যেমন তেমন রাত হলেই জুয়া চলে দিধারছে ।

পতিতা পল্লীতে অবৈধ নিয়ম বহির্ভূত উপায়ে দেদারছে বিক্রয় করছে বাংলমদ ও বিভিন্ন মরণঘাতী মাদক। পতিতা পল্লীতে অবস্থিত দোকান থেকে প্রতিদিন বিক্রয় করছে মদ, গাজা, ইয়াবা, বিয়ার সহ বিভিন্ন রকম মরণঘাতী মাদক।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কিছু অশিক্ষিত অর্ধ শিক্ষিত সাংবাদিক নামধারী হলুদ সাংবাদিকতায় লিপ্ত যাদের পেশা দালালি বখরা ভাগ নেওয়া । ফেরি পারাপারের ট্রাক কাউন্টার থেকে শুরু করে পতিতালয়ের পাহারাদার বাহিনীর ও স্থানীয় দোকানদারদের কাছ থেকে উৎকচ নিয়ে মদদ দিয়ে থাকে এই হলুদ সাংবাদিকরা। এদের সাথে কিছু অসাধু উনাদেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা যায়।

এই পতিতাপল্লীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা  দেহ ব্যাবসায়ীরা  স্থান করে নেওয়ায়, স্থান ধারনের মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত দেহ ব্যাবসায়ী ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানা যায় । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এই অবৈধ দেহ ব্যবসায়ীদের রয়েছে দেশের বিভিন্ন নারি ব্যাবসায়ী ও বড় বড় মাদক সিন্ডিকেটের সাথে নিবিড় সম্পর্ক, যাদের সাথে মোবাইল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে এখানে আমদানী করছে অপ্রাপ্ত বয়সি কিশোরী ও মরণঘাতী মাদক । এখান থেকে উচ্চমূল্যে সংগ্রহ করছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মাদক সেবী লোকজন । মাদক সংগ্রহ করতে যেয়ে জড়িয়ে পড়ছে, যৌন তাড়নায়, জুয়া খেলায় ফলে সম্বল হারাচ্ছে অনেক কিশোর ও যুবকরা নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে।

এহেন পরিস্থিতিতে অদৃশ্য শক্তির উনারা বিভিন্ন নামে উৎকচ্ ও মাসোহারা গ্রহন করছে, বিধায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না দৌলতদিয়া পতিতালয় । ভুক্তভোগী  জনসাধারন দৌলতদিয়ার পতিতা পল্লীটি উচ্ছেদ করে সুন্দর সুশৃঙ্খল পরিবেশ উপহার দিতে যথাযথ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আ.জলিল ফকীর বলেন, এ বাহিনীর নির্যাতন সইতে না পেরে অনেক পতিতাই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।  তাদের কথা কেউ না শুনলে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন । তাদের নির্যাতনে কারো মৃত্যু হলে সেটাকেও আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

অভিযুক্ত পাহাড়াদার কমান্ডার সাঈদ জানান, পতিতাপল্লীতে আগতদের কাছ থেকে ৪০ টাকা নয়,৩০ টাকা করে নেয়া হয়ে থাকে। সে টাকা পাহাড়াদার দলের সদস্যরা ভাগ করে নেয়া হয় । বিনিময়ে তারা পতিতাপল্লীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন ।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচর্জ (ওসি) মীর্জা আবুল কালাম আজাদ প্রতিবেদককে বলেন, দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে পাহাড়াদার হিসেবে কিছু লোক কাজ করে । তারা টিকিট দিয়ে কোন টাকা আদায় করে কিনা  তা আমার জানা নেই । তবে অপ্রাপ্ত বয়সী যৌনকমীর বা জোর পূর্বক পতিতাবৃত্তির কোন অভিযোগ পেলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

নুরু মন্ডলের মামা তপুর দ্বায়ীত্বে ছিল জুয়ার আসর। বন্ধ করলেন এসপি মিজানুর রহমান

রাজবাড়ী দৌলতদিয়া যৌন পল্লিতে চলছিল খড়গুটি , চড়কি ও তিন তাসের জুয়ার আসরসহ মাদক বিক্রি ও সেবন। প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা নুরু মন্ডলের মামা তোফাজ্জেল হেসেন তপুর নেতৃত্বে (দ্বায়ীত্বে) পল্লির ভিতরে ৩টি জায়গায় যত্রতত্র খড়গুটি , চড়কি ও তিনতাসের জুয়াখেলা জমজমাট হয়ে উঠেছিল । এ সকল জুয়া খেলা থেকে প্রতিদিন অবৈধ আয় হয় অন্তত ৪/৫ লাখ টাকা। সেই কালো টাকা দিয়ে বাড়ি-গাড়ি ও নামে-বেনামে সম্পদ করে নিয়েছে তোফাজ্জেল হোসেন তপু ও তার মামা নুরু মন্ডল। এই জুয়া খেলা বন্ধ করে দিয়েছে রাজবাড়ীর নবাগত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

নুরু মন্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আসার পরেও নেওয়া হয়নি পদক্ষেপ

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ অধিশাখা থেকে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

                                     

গোয়ালন্দ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোছাঃ আফরোজা রব্বানীর এক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ অধিশাখার উপ-সচিব মোঃ মাহাবুবুর রহমানের গত ২০শে সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ৪৬.০০.০০০০.০১৭.৯৯.০০৭.১৫(অংশ-২)৮৪৯ নং স্মারকের আদেশে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে-গোয়ালন্দ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোছাঃ আফরোজা রব্বানীর লিখিত অভিযোগে বর্নিত সরকারী তহবিলের অর্থ আত্মসাত, হত্যা, দুর্নীতি,দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পরিবহনে চাঁদাবাজী ও পতিতালয়ে চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

উল্লেখ্য, দুঃখের বিষয় এতদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও নুরু মন্ডলের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। বর্তমান প্রশাসন তার ব্যাবস্থা নেবে বলে জনসাধারন মনে করছেন।

Comments

comments