আজ : শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ৪ ইয়াবা কারবারি নিহত


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ ,১ মার্চ, ২০১৯ | আপডেট: ১১:৫০ অপরাহ্ণ ,১ মার্চ, ২০১৯
টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ৪ ইয়াবা কারবারি নিহত

স্টাফ রিপোর্টার।। কক্সবাজারের টেকনাফে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করার ১৩ দিনের মাথায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নিকটাত্মীয়সহ চার ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছেন। এই ১৩ দিনে ক্রসে নিহত হয়েছেন- ৬ জন কারবারি।

১লা মার্চ-১৯ শুক্রবার ভোর রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও সাবরাং এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা দুটি ঘটে।

হোয়াইক্যং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহতরা হলেন- টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার আব্দুল জলিল ওরফে জানে আলমের ছেলে রোহিঙ্গা নজির আহমদ ও মোঃ জাকারিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দীন। টেকনাফ সীমান্তের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড রোহিঙ্গা নজির ডাকাত গতকাল ক্রসে যাওয়ায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ চলছে।

অন্যদিকে সাবরাং এলাকায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই ইয়াবা কারবারি হচ্ছেন- টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেইল পাড়া এলাকার কালা মিয়ার ছেলে আব্দুস শুক্কুর (৫২) ও আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মোঃ ইলিয়াস (২৫)। পিতা-পুত্রের ঘটনাস্থল তল্লাশি করে এক লাখ পিস ইয়াবা বড়ি, ১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ১টি খালী কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে আহত বিজিবি সদস্যকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি টেকনাফ সীমান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের উপস্থিতিতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, সীমান্তের উখিয়া-টেকনাফের ইয়াবা কারবারি যতই প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন তাদের কোনো ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নজির আহমদ টেকনাফের স্বশস্ত্র ডাকাত দলের সর্দার রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাতের ছোট ভাই। টেকনাফের গহীন পাহাড়ে ডাকাত হাকিমের রয়েছে একাধিক আস্তানা। ইয়াবা কারবার, খুন, অপহরণসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে টেকনাফবাসীর বিস্তর অভিযোগ। তার ছোট ভাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নজির আহমদও হাকিম ডাকাতের দলের অন্যতম সদস্য এবং সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। হাকিম ডাকাত ও তার ভাই নজির ডাকাত টেকনাফ সদর ইউপির মেম্বার ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি।

ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মেম্বার ছিলেন- সীমান্তের প্রভাবশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট জনপ্রতিনিধিদের এক আতংক। তিনি এসব প্রভাবশালীদের ইয়াবা কারবারের বিরুদ্ধাচারণ করে আসায় পথের কাটা দূর করতে ইয়াবা সিন্ডিকেট জনপ্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গা হাকিম ও নজির ডাকাতকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সিরাজ মেম্বার ছিলেন- একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক। তিনি কারবারিদের হাতের পুতুল হননি কোনো সময়। সিরাজ হত্যাকাণ্ডের পরও নজির ডাকাত সীমান্তের প্রভাবশালীদের জামাতা হবার সুবাধে নিহতের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বার বার। এমন অভিযোগ সিরাজ মেম্বার পরিবারের।

টেকনাফে এ যাবৎ অর্ধ শত লোক ক্রসে গেছে। তন্মধ্যে এমপি বদির আত্মীয় রোহিঙ্গা নজির ডাকাত গতকাল ক্রসে যাওয়ায় সীমান্তের লোকজন সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন।

বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস জানান, হোয়াইক্যং বটতলী এলাকায় ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের খবর পেয়ে পুলিশের একটি টীম সেখানে অভিযান চালায়। এসময় ইয়াবা কারবারিরা পুলিশকে দেখে অতর্কিত গুলি ছোড়ে এবং পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক সময় ইয়াবা কারবারিরা পিছু হটলে পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।

ওসি প্রদীপ বলেন, নিহত দুইজনই তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। ঘটনাস্থল থেকে ৬ হাজার পিস ইয়াবা, ৩টি দেশে তৈরি অস্ত্র, ৪ রাউন্ড কার্তুজ ও ২৩টি গুলির খোসা পাওয়া যায়। নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে একই দিন, বিজিবির সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সাবরাং  মগপাড়া এলাকায় বিজিবির সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ওই ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, সাবরাং ইউপির পুরাতন মগপাড়া এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালান বাংলাদেশে ঢুকতে পারে এমন গোপন খবর পেয়ে বিজিবির টহল দল সেখানে অভিযানে যায়। এ সময় মগপাড়া কাঁকড়া প্রজেক্ট এলাকায় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ইয়াবা পাচারকারীরা বিজিবি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি চালালে পাচারকারীরা পিছু হটে। পরে ভোরের আলোতে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুই অচেনা ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়।

লে. কর্নেল আছাদুদ বলেন, যে স্থানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমরা তল্লাশি করে এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি দেশে তৈরি বন্দুক ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

Comments

comments