হয়রানিমূলক মামলার বাদী রুবেল ভূয়া! বাদীর ঠিকানাও ভুয়া!
প্রকাশিত: ৮:২০ অপরাহ্ণ ,১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | আপডেট: ২:৪১ পূর্বাহ্ণ ,১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার।। সঠিক নাম ঠিকানা বেড় করার স্বার্থে মামলার বাদী মনিরুজ্জামান ওরফে মনিরুজ্জামান রুবেল ওরফে মোঃ হুমায়ুন কবীর রুবেলকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে আটক রেখে তদন্তের প্রয়োজন বলে মনেকরেন (ভূক্তভোগীরা) মামলার আসামীরা ও স্থানীয় জনসাধারন।
বিদেশ (আমেরিকা) নেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আবার উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া ভূক্তভোগীদেরকে হয়রানি করে চলেছে বানিবহ ইউনিযনের বাসিন্দা মর্জিনার পাতাতু ভাই প্রতারক মরিুজ্জামান ওরফে রুবেল্। তার সঠিক পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে রাজবাড়ী জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে চলাফেরা করেন রাজধানীতে। আবার ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি চলাফেরা করেন রাজবাড়ী জেলায়। উভয় ঠিকানায় গিয়ে তদন্ত করে দেখাগেছে আসলে তার ঠিকানা কোনটিই সঠিক নয়। সঠিক ঠিকানা না পাওয়ায় অনেকের মনে-ই এখন প্রশ্ন জন্ম নিচ্ছে, সে রহিঙ্গা নয়তো!
এ প্রতিবেদকের তদন্তে জানাযায় যে; প্রতারক মনিরুজ্জামান ওরফে রুবেল একজন দূর্ধর্ষ ধুরন্ধর ব্যাক্তি। সে অপরিচিত লোকদেরকে বাবা-মা বানিয়ে তারপর তাদের ঠিকানা ব্যবহার করে ভূয়া এনআইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদপত্র সংগ্রহ করে স্থায়ী বাসিন্দা সেজে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়াই তার মূল পেশা।
অবাক বিষয় হলো; যে কি-না একাধিক এলাকায় একাধিক প্রতারনা করে চলেছে অথচ সে আইন-আদালতের চোঁখে ধরা পড়ছেনা। আবার তার আসল ঠিকানাও কেউ খোঁজার চেষ্টা করছেনা। তার পরিচয় খুঁজতে গিয়ে পাওয়াযায় একাধিক পরিচয়পত্র। তার সেই পরিচয় পত্রগুলো দেখলে যে কেউ বলবে সে একজন দুর্ধর্ষ প্রতারক এবং বাংলাদেশের নাগরিক নন।এনআইডি কার্ডে তথ্য অনুযায়ী; নাম মনিরুজ্জামান, পিতা- মোঃ বাহেজ উদ্দিন, মাতা- রোকেয়া বেগম। জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৮৬, এনআইডি নং- ১৯৮৬২৬৯৬৪০৬০০০৪১২, বাসা/ হোল্ডিং ৫৬১, গ্রাম/ রাস্তা ১৫ রূপনগর টিনসেড, ডাকঘর- মিরপুর ১২১৬, পল্লবী, সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা। আবার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সীল যুক্ত জন্ম নিবন্ধনপত্রেও একই নাম ঠিকানা লেখা রয়েছে। তবে সেখানে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ০১/০১/১৯৮৩, যাহা ১০/১১/২০১৬ তারিখে ইস্যুকৃত জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর হচ্ছ- ১৯৮৩২৬৯২৫০৭১৯৮৯, সিটি কর্পোরেশন থেকে ১৯/০৭/২০১৭ইং তারিখের একটা নাগরিক সনদপত্রও আছে। এছাড়াও, সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অবসরপ্রাপ্ত) পরিচয়পত্রও আছে তার আবার, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আজীবন সদস্য সনদপত্রও রয়েছে তার নামে। এছাড়াও, ঢাকার ঠিকানায় ঠিকাদারী লাইসেন্সসহ একাধিক পরিচয়পত্র রয়েছে তার, এপেরিচয়গুলো তিনি দায়েরকৃত মামলায়ও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে, রাজধানীর ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি স্থানীয় মোছাঃ নাছিমা আক্তার নাছিম ওরফে মর্জিনা বেগমের ভাই পরিচয়ে রাজবাড়ীর বাণীবহতে রেখা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই বিয়ের সময় আবার অপরিচিত আমজাদ হোসেন ও বিলকিস বেগম নামের দু’জনকে উকিল বাবা-মা হিসাবে কাবীন নামায় স্বাক্ষর করান। এরপর সেই উকিল বাবা মাকে ভালো-মন্দ খাইয়ে এবং বিভিন্ন কিছু উপহার দিয়ে আপন করে নেন।
সেই উকিল বাবা মাকে নিজের বাবা-মা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে বিদেশ (আমেরিকা) পাঠানোর কথা বলে ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। আবার উকিল বাবা-মায়ের সন্তানদের পাঠানোর কথা বলে তাদের থেকেও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন প্রতারক। এ যেন উকিল বাবা মায়ের কাঁধের উপরে রেখে বন্দুক ফাঁটিয়ে আবার উকিল বাবা মাকে-ই ফাঁসানোর অপচেষ্টা।
বিদেশ পাঠানোর ব্যাপারে টালবাহানা করে সময় বিলম্বিত হলে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইয়া আদালতে প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। প্রতারক আদালত থেকে জামিনে বের হন। সেই মামলায় প্রতারককে রাজবাড়ী আদালত থেকে জামিন করান স্থানীয় পাতাতু বোন মোছাঃ নাছিমা আক্তার নাছিম ওরফে মর্জিনা বেগম।
বিদেশ পাঠানো বাবদ গ্রহণ করা টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য প্রতারক উল্টো উকিল বাবা মার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্য মামলা দায়ের করেছেন।
মনিরুজ্জামানের রুবেলের পরিচয় খুঁজতে; রাজবাড়ীর বানীবহ গিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মনিরুজ্জামান রুবেলের স্ত্রী রেখা, বোন মোসাম্মাৎ নাসিমা আক্তার নাসিম ওরফে মর্জিনা, উকিল বাবা আমরাত হোসেন ও উকিল মা বিলকিস বেগমের সাথে কথা হলে তারা জানান, মনিরুজ্জামান রুবেল বলেছে তার স্থানীয় বাড়ি ঢাকা রূপপুর।
০২/০২/২০২৪ তারিখে ঢাকা রুপনগর গিয়ে খোঁজখবর নিতে সেখানকার প্রতিবেশী মোঃ রিপন ও বিউটি আক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়; রুবেল সেখানে ৩/৪ বছর ধরে যাতায়াত করত, এখানে তিনি বায়েজ উদ্দিনকে বাবা ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে তিনি মা বলতেন। তাদের পরিচয়ে ভূয়া এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন তৈরি করেছে। তার বানানো বাবা মায়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল, ও একটা প্রতারক। এটা তার জন্মস্থান না, সে রাজবাড়ীর স্থানীয় পরিচয় দিত।
এ ব্যাপারে, রাজবাড়ী বাণীবহের স্থানীয় বাসিন্দা (রুবেল ও রেখার বিয়ের উকিল বাবা মা) আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন:- প্রতিবেশী মর্জিনা একদিন রাতে আমাদের বাড়িতে এসে বলে রেখার বিয়ে হবে একথা বলে আমাদের দু’জনকে ডেকে নিয়ে যায় রেখাদের বাড়িতে। আমরা রেখা দের বাড়িতে গিয়ে দেখি একটা ছেলের সাথে রেখার বিয়ের আয়োজন চলছে। মর্জিনাকে জিজ্ঞেস করলাম ছেলেটি কে রে মর্জিনা বলে তার ভাই, নাম রুবেল, বাড়ি ঢাকায়। সেই বিয়ের কাবীন নামায় আমাদের দু’জনকে উকিল বাবা-মা হিসেবে স্বাক্ষর করায়। সেখান থেকে পরিচয় হওয়ার পরেই আমরা ঝামেলায় পড়ি। আমার দুই ছেলে ও দেবরকে আমেরিকা পাঠানোর কথা বলে আমাদের থেকে মর্জিনা ও রুবেল ২৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে। আরো মানুষের কাছ থেকে রুবেল টাকা নিয়েছে। এখন আমেরিকাও পাঠাচ্ছে না আবার টাকাও ফেরত দিচ্ছে না, টাকা চেয়েছি বলে এখন আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো আদালতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছে। আপনারা তাকে চেনেননা অথচ তাকে বিশ্বাস করলেন কেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিলকিস বলেন, কারণ আমাদের প্রতিবেশী মর্জিনার পূর্ব পরিচিত ভাই, তাছাড়া মর্জিনা বলেছে টাকা দেন কোন সমস্যা নাই, রুবেল চলে গেলেও আমি তো আছি, সে কারণে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছি। শুধু আমি নই আমাদের এলাকার অনেকের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, একটু খোঁজ নেয়ে দেখেন পেয়ে যাবেন। এখন আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সঠিক ও সুষ্ঠ তদন্তের সার্থে রুবেলকে আটক করতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মহামান্য আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ( চলবে… )