আজ : রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটার দৌড়াত্ন! জ্বালানী হিসাবে জ্বালাচ্ছে কাঠ-খড়ি নিরব সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৭:১০ অপরাহ্ণ ,১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | আপডেট: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ ,৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
রাজবাড়ীতে অবৈধ ইটভাটার দৌড়াত্ন! জ্বালানী হিসাবে জ্বালাচ্ছে কাঠ-খড়ি নিরব সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

বিধান কুমার।। রাজবাড়ীতে লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। ফসলি জমি দখল করে তৈরি করা এই ইটভাটা নানাবিধ সমস্যার প্রধান কারণ। গত ৫-৬ বছর যাবত অবৈধভাবে চলছে ইট ভাটা গুলো। অবৈধ ইটা ভাটা গুলোতে প্রকাশ্যে প্রতিদিন প্রায় কয়েকটন খড়ি পুড়াচ্ছে। খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানোর কারনে এক দিকে উজাড় হচ্ছে বন ও অন্যদিকে ধংশ হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছ। বিষে পরিণত হচ্ছে বিসুদ্ধ বাতাস। ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে তিন ফসলী জমি থেকে এতে বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি। ধুলো বালিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি, রাস্তায় চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিশু যুবক বৃদ্ধ সহ সকল শ্রেনীর মানুষ। বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইট ভাটার বিরদ্ধে অভিযোগ করেও কোন ফলাফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় সত্যতা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন বলেন, অবৈধ ভাটার মালিকগণ জেলা প্রশাসন ও দেশের প্রচলিত আইন কে, বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অবৈধভাবে ইট ভাটা তৈরী করে গত কয়েক বছরেই বনে গেছেন কোটি পতি। ইট ভাটার টাকা দিয়ে নিজশ্ব কয়েকটি ট্রাক, ভেকু ও জায়গা জমি সহ নগত অর্থের মালিক হয়েছেন অনেকেই। টাকা দিয়ে সব দপ্তরকে ম্যানেজ করেন তারা। টাকার দাপটে বেশ দাপটের সাথে অবৈধভাবে ইট ভাটার মালিক হয়েছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে রাজবাড়ীতে মোট ৯০টি ইটভাটা রয়েছে। এদের মধ্যে বৈধতা ইটভাটা ৩৫-৪০টি । বাকি ৫০-৫৫টি অবৈধ।

অন্যদিকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের নিকট হতে ২৬ শে সেপ্টেম্বর-২১ তারিখে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর মাধ্যমে রাজবাড়ীতে অবস্থিত ইট ভাটা সংক্রান্ত তথ্যে জানা যায়, রাজবাড়ীতে মোট ইটভাটা রয়েছে ৯৬ টি। এই ৯৬ টি ইট ভাটার মধ্যে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে ১৯ টির আর নেই ৭৭ টি ভাটার। কিন্তু তথ্যে বৈধ দেখানো হয়েছে ৫৭ টি। এর মধ্যে বৈধ দেখানো হয়েছে ৫৭ টি আর অবৈধ ৩৯ টি। কিন্তু লাইসেন্স ১৯ টি থাকলেও ১ শত ২০ মিটার চীমনির অবৈধ ৩৯ টি ভাটা ছারা  আর ৩৮ টি কি ভাবে বৈধ হয়? নাকি দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এমনটা হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে জনমনে?

তথ্য অধিকার আইনের তথ্য মোতাবেক রাজবাড়ী সদরে মোট ইটভাটা রয়েছে ৪২ টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ০৭ টি। নাই ৩৫ টি। এর মধ্যে বৈধ ২৮ টি ও অবৈধ ১৪ টি। পাংশা উপজেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১৭ টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ০৩ টি। নাই ১৪ টি। এর মধ্যে বৈধ ১০ টি ও অবৈধ ০৭ টি। কালুখালী উপজেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১৮ টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ০৬ টি। নাই ১২ টি। এর মধ্যে বৈধ ১০ টি ও অবৈধ ০৮ টি। বালিয়াকান্দি উপজেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১২ টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ০১ টি। নাই ১১ টি। এর মধ্যে বৈধ ০৪ টি ও অবৈধ ০৮ টি। গোয়ালন্দ উপজেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ০৭ টি। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে ০২ টি। নাই ০৫ টি। এর মধ্যে বৈধ ০৫ টি ও অবৈধ ০২ টি। তাহলে রাজবাড়ী সদর, পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দে মোট ১৯ টি। জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স থাকলেও বৈধ দেখানো হয়েছে ৫৭ টি। শুধু মাত্র ১ শত ২০ মিটার চিমনী থাকা ভাটা  গুলোই অবৈধ। ১ শত ২০ মিটার চীমনি ব্যাবহারকারী ৩৯ টি ভাটা ব্যাতিত অন্নান্য ভাটার লাইসেন্স না থাকলেও বাড়তি ৩৮ টি বৈধতার তালিকায় থাকায় সাধারণ জনগনের নিকট বিশ্বস্ততা হাড়াতে বসেছে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন জনগণের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে দ্রত এই অবৈধ ইটভাটা গুলোর ব্যাবস্থা গ্রহন প্রয়োজন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়ছার খান বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তর বড় ধরনের একটা ড্রাইভ করেছে আর আমরা মোবাইল কোর্ট করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সাথে কথা হলে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা গুলোকে ধ্বংস করছি। ইতিমধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে ৭ টি ভাটা ভাঙা সহ ২১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। যেগুলা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সেগুলো আগামীতে দ্রততার সহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই সমস্ত ইটভাটার কারণে পরিবেশের বিপর্যয় বাড়ছে, সেই সাথে চর্ম, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। তাই হাজারো ভুক্তভোগীদের দাবী পরিবেশ রক্ষার্থে বিষ মুক্ত বাতাসে বেচে থাকার তাগিদে পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসন যেন অতি তারাতারি অবৈধ ইট ভাটা গুলি ধংশ করেন। এই অপেক্ষায় রয়েছে এলাকার হাজারো জনগণ। এবার দেখার পালা সবকিছু জানা সত্বেও কোন আইনে ইটা ভাটা গুলো চলবে প্রশ্ন রইল পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের প্রতি। শুধু আশ্বাস নয় চাই কার্যকর পদক্ষেপ এমনটাই জানালেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ।

Comments

comments