আজ : বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিতু হত্যার ৫ বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে বাদীই হলেন হত্যার মূল আসামি


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ ,১২ মে, ২০২১ | আপডেট: ১২:২২ পূর্বাহ্ণ ,১৬ মে, ২০২১
মিতু হত্যার ৫ বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে বাদীই হলেন হত্যার মূল আসামি

স্টাফ রিপোর্টার।। ৫বছর আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় বাদী ছিলেন স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। পিবিআইয়ের তদন্তে পাঁচ বছর পর বাদীই হলেন হত্যার মূল আসামি। তিন লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্ত্রীকে খুন করিয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার। পিবিআইয়ের তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গত ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

কত নিখুঁত অ‌ভিনয়! ভাবা যায়? অথচ মিতুর দাফ‌নের সময় তার কান্নায় ঢ‌লে পরার ভি‌ডিও দে‌খে সারা দেশবাসী কি বিভ্রান্তই না হ‌য়ে‌ছিল। আস‌লে আমরা ভু‌লে যাই যে, কোন কিছুর আ‌ধিক‌্য স‌ত্যের মানদন্ড নয়। সবাই ব‌লে, সবাই ভা‌বে কিংবা সবাই বিশ্বাস ক‌রে ব‌লেই কোন কিছু সত‌্য হ‌য়ে যায় না। সত‌্য বে‌শিরভাগ সময়ই বড় একা, এতীম।

পাঁচ বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডে তার স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের ‘সম্পৃক্ততার প্রমাণ’ পাওয়ার কথা বুধবার জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

এ তদন্ত সংস্থার প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার ১২ই মে-২১ বুধবার ঢাকার ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিত্যু হত্যার সঙ্গে স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করাতে আসামিদেরকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার। আদালতে দেওয়া দুই সাক্ষীর জবানবন্দি ও পিবিআইয়ের তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া পিবিআইয়ের দেওয়া প্রথম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও নতুন করা মামলায় লেনদেনের উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে বাবুল আকতারের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, স্ত্রী হত্যার তিন দিন পর বাবুল আক্তার তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হককে বলেন তার লাভের অংশ থেকে তাকে যেন তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। সাইফুল বিকাশের মাধ্যমে ওই টাকা গাজী আল মামুনকে পাঠান। গাজী আল মামুন ওই টাকা মুসা, ওয়াসিমসহ আসামিদের ভাগ করে দেন। তবে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, মিতু হত্যা মামলার ভিডিও ফুটেজে বাবুল আক্তারের সোর্স এহতেশামুল হক ভোলা, কামরুল শিকদার ওরফে মূসা ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরপর তিনি দাবি করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত। তার সোর্সকে তিনি চিনলেও বিষয়টি চেপে যান বাবুল। ভুলেও তিনি সাইফুল হকের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া মুসা ও ওয়াসিমসহ আসামিদের তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেননি।

এ দিকে গত মঙ্গলবার বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ও মামুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দীনের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। সেখানে দুজনই বাবুলের নির্দেশে স্ত্রী হত্যায় জড়িতদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

এ ঘটনায় মিতুর স্বামী চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে। মামলার বাদী হয়েছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। ১২ই মে-২১ বুধবার দুপুর পৌনে ১.টায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় বাদী ছিলেন স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। পাঁচ বছর পর বাদীই হলেন হত্যার মূল আসামি।

তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ তার বিরুদ্ধে মামলা করলেন মিতুর বাবা।

Comments

comments