SSC তে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এতিম, হতদরিদ্র, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুবর্ণা দাসের সাহায্যের জন্য কেউ আছেন কি ?
প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ ,১০ মে, ২০১৮ | আপডেট: ২:২২ পূর্বাহ্ণ ,১০ মে, ২০১৮
জনতার মেইল ডেস্ক ।। বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগীতায় চলা ভিটে-মাটিহীন হতদরিদ্র পবিারের সহায়-সম্বলহীন অভাব-অনটনের জোড়া-তালির সংসারে থেকেও অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে পিতৃ হারা দৃষ্টি প্রতিবন্দি সুবর্ণা রাণী দাস ।
তার এই অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর অভাবনীয় সাফল্য দেখে খুশি হয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, খুশি হয়েছেন এলাকাবাসী, কিন্ত সুবর্ণার মা কণিকা রানী দাস আনন্দিত হয়েও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন । এই ভেবে যে, তার নুন আনতে পানতা ফুড়োনো সংসারে যেখানে জীবন বেঁচে থাকাই দ্বায় সেখানে কিভাবে ভবিষ্যতের দিনগুলো পাড় করবে ? সুবর্ণার পড়া-লেখার খরচ-খরচাইবা চালাবে কি করে ? সূবর্ণার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মাঝ পথে এসে আজ তার পড়া-লেখা থেমে যাবে এটা হতে পারেনা, এই ভেবে সুবর্ণা ও তার মা এখন দিশেহারা । সকলের সহযোগীতা ছাড়া তার পড়া-লেখা বন্ধ হয়ার উপক্রম । মেয়ের পড়া-লেখার খরচ যোগোতে লাজ-লজ্জা মাটি চাঁপা দিয়ে সহযোগীতা পাওয়ার আশায় সকল হৃদয়বান মানুষের নিকট হাত বাড়িয়েছে সূবর্ণার মা ।
সুবর্ণা রাণী দাস রাজবাড়ী জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মানবিক বিভাগ হতে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছে । তার এই অভাবনীয় সাফলল্যে খুশি হয়ে রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে সুবর্ণা রাণী দাসকে সংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান একাডেমীর জেলা কালসার অফিসার প্রার্থ প্রতিম দাস ও একাডেমীর সাধারন সম্পাদক অসিম কুমার পাল ।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১১ সাল থেকে রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমী বিনা খরচে সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি শিক্ষা নেয় । সে কবিতা আবৃত্তি ও গানেও সমানতালে পারদর্শী । তার এই প্রতিভার কথা জেলার অনেকেরই জানা । চলতি বছরে দাদা ভাই শিশু কিশোর প্রতিযোগিতায় উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে ।
সুবর্ণা রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনী ইউনিয়নের হরিণধরা গ্রামের মৃত সুভাষ চন্দ্র দাসের মেয়ে । তার মায়ের নাম কণিকা রানী দাস ।
সুবর্ণা রাণী দাসের বয়স যখন দুই মাস তখন তার বাবা ষ্ট্রোক করে মারা যায় । অভাব-অনটনের সংসারে মা ছাড়া তার সহযোগীতা করার আর কেউ নেই । মা-মেয়ের সংসারে তারা দু’জন আর কেউ নেই । জন্মগতভাবে সুবর্ণার দুটি চোখই দৃষ্টিহীন । নুন আনতে পানতা ফুরানো সংসারে আয়ের উৎসের মধ্যে, সরকার থেকে মাসিক প্রতিবন্দি ভাতা পায় ৭ শত টাকা, সুবর্ণার মা কণিকা রানী দাস বাড়িতে কাঁথা সেলাই করে রোজগার করে ১৫/১৬শত টাকা আর বাঁকীটুকু বিভিন্ন মানুষের সহযেগীতা নিয়ে চলতে হয় তাদের ।
বাড়ি থেকে স্কুলে ও শীল্পকলা একাডেমীতে তার মায়ের সাথে যাতায়াত খরচ হয়ে থাকে মাসে প্রায় ৩ হাজার টাকা । দুপুর বেলা তাদের অভুক্ত থাকতে হয় প্রায়ই, খুধা নিবারনের জন্য বেশীরভাগ দুপুর কাটান পানি পান করে ।
এমন অসহায় হতদরিদ্র মায়ের পরম স্নেহ-মমতায় দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে একে একে ১৬টি বছর পার করে আজ সফলতা অর্জন করেছে । দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুবর্ণা রাণী দাস ।
সুবর্ণা রাণী দাসের সাথে আলাপকালে সে জনতার মেইল.কমকে জানায়, সে রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক । সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই । লেখাপড়া শেষে করে একজন বিসিএস কর্মকর্তা হব । উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশ ও মায়ের সেবা করতে চাই । আমার বাবা নেই, পরিবারে নেই কোন উপর্জনক্ষম ব্যক্তি । আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাকে এই পর্যন্ত এনেছেন, কিন্তু সে আর পারছে না । সে কারনে সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, আমাকে একটু সহযোগীতা করুন, আমি পড়তে চাই । মানুষের মত মানুষ হতে চাই । নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই’। প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে সূবর্ণা বলে, ২০১৪ সালে এমপি স্যার(কাজী কেরামত)আমার একটা হারমনিয়াম দিয়েছিল, আরো বলেছিল যে কোন সম্যার কথা আমাকে জানাবে ।
এ বিষয়ে, সুবর্ণার মা কণিকা রাণী দাস ‘জনতার মেইল.কম’কে বলেন, সুবর্ণার জন্মের দুই মাস পরেই তার বাবা সুভাষ চন্দ্র দাস মারা যান । তারপর থেকে আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে বেঁচে আছি । আমার মেয়েটি লেখাপড়ায় অনেক ভালো । এসএসসিতে সে ভালো রেজাল্ট করেছে । মেয়েটির লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সরকার ও সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করছি ।
প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে কনিকা রানী দাস বলেন, উন্নত চিকিৎসা দ্বার সূবর্ণার চোখ ভাল করার জন্য, প্রায় ১০ বছর পূর্বে ভারতের মাদ্রাজ নিয়ে সেখানে ডাক্তার দিয়ে দেখিয়েছিলাম, ডাক্তার বলেছিল চোখ লাগানো যাবে কিন্তু ১৭ লাখ টাকা ব্যায় হবে, একথা জানার পর চোখ ভাল করার চিন্তা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলেছি ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার থেকে মাসিক প্রতিবন্দি ভাতা দেয় ৭ শত টাকা, এছাড়াও ডিসি স্যার, এমপি স্যার ও ইউএনও স্যারদের সহযেগীতা বেঁচে আছি । সকলের সহযোগীতায় এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি । সাবেক ডিসি স্যার(জিনাত আরা)রাজবাড়ী থেকে যাওয়ার আগে ৫ হাজার টাকা দিয়ে গেছিল । গতকালও সে ফোন করে খবর নিয়েছে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে ।
ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক সাইদা খানম বলেন, বিদ্যালয়ের অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষক বোরহানের কাছে সুবর্ণা ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করেছে । এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে রাইটারের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে । গত ৬ই মে পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে । সুবর্ণা জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আশা করেও ৪.৫০ পেয়েছিল । তারপর সে এসএসসি’তে জিপিএ-৫ পেতে কঠিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল অর্জন করেছে । তার এই সাফল্যে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা অনেক খুশি হয়েছেন । সে লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও গানেও পারদর্শী । পড়ালেখার সাথে সাথে সহশিক্ষা কার্যক্রমেও সে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে । সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে । তার এই স্বপ্ন পূরণে আমরা দোয়া করি সেইসাথে তার সার্বিক সহযোগীতা ও মঙ্গল কামনা করি ।সাহায্য প্রদানে ইচ্ছুক হৃদয়বান মানুষ যোগাযোগ করুনঃ-
সূবর্ণার মা কনিকা রানী দাস- ০১৭৬৫-২৩৮৫৩৮
এই প্রতিবেদক-০১৭৫১-৭৫৭৮৯২