কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ডাঃ রতন ক্লিনিকে সিজারকৃত নারীর মৃত্যু-মিমাংশা করতে তৎপর
প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ ,২৯ এপ্রিল, ২০১৮ | আপডেট: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ ,২৯ এপ্রিল, ২০১৮
নিজস্ব প্রতিনিধি ।। রাজবাড়ী ডাঃ রতন ক্লিনিকে বাচ্চা সিজার করতে গিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও সিজারকারী চিকিৎসকদের অবহেলায় রেবেকা বেগম(২৭) নামে এক প্রসূতি নারীর অকাল মৃত্যু হয়েছে ।
২৮শে এপ্রিল-১৮ শনিবার বিকেলে রাজবাড়ী জেলা শহরের বড়পুলের বহুল আলোচিত ডাঃ রতন ক্লিনিকে এ অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ।
মৃত রেবেকা বেগম হচ্ছে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চরকৃষ্ণপুর গ্রামের নজরুল শেখের স্ত্রী ।
মৃত রেবেকা বেগমের মা সুফিয়া বেগম জানান, গতকাল ২৮শে এপ্রিল সকাল ১০.টায় ডাঃ রতন ক্লিনিকে তার মেয়ে রেবেকাকে ভর্তি করা হয় । দুপুর ১.টার দিকে তার মেয়েকে সিজার করেন ডাঃ এস.এম.এ হান্নান । সিজারের মাধ্যমে রেবেকার একটি মেয়ে সন্তান হয় । এরপর তাকে বেডে নেয়া হয় । পরে ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডাক্তার বা নার্স রেবেকার আর কোন খোঁজ-খবর নেননি, ফলে রেবেকার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বিকেল ৪.টার দিকে ডাঃ এস.এম.এ হান্নান এ্যাম্বুলেন্স এনে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন । তার কথা মতো রেবেকাকে ফরিদপুর নিয়ে যাওয়া হলে পথে মধ্যেই সে মারা যায় ।
পরে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে এনে রাত ৯.টার দিকে মৃত রেবেকা বেগমকে ডাঃ রতন ক্লিনিকের সামনে নিয়ে আসলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় ।
তখন সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে, খবর পেয়ে রাজবাড়ী থানা পুলিশের একটি দল সেখানে আসে । এ সময় মৃত রোগীর স্বজনদের আর্তনাদ-আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে । ঠিক সে সময় ক্লিনিক পাশ্ববর্তী এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতি দালাল চক্র সেখানে উপস্থিত হয়ে ২লক্ষ টাকায় ঘটনাটি মিমাংসা করতে রোগীর স্বজন ও পুলিশকে ম্যানেজ করতে তৎপর হয়ে ওঠে ।
মৃত রেবেকার মা সুফিয়া বেগম এ সময় সাংবাদিকদের কাছে, তার মেয়েকে চিকিৎসা জনিত অবহেলায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও সিজারকারী চিকিৎসকেদের দায়ী করে শাস্তির দাবী জানান ।
এ বিষয়ে সিজারকারী চিকিৎসক রাজবাড়ী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এস.এম.এ হান্নান বলেন, তিনি সফল অপারেশন করার পর রেবেকা বেগম ও তার সদ্যজাত শিশু কন্যাকে বেডে দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে আসেন । কিন্তু ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সসহ অন্যান্যরা তার প্রতি অবহেলা করায় রেবেকা খাতুন হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে গেলে তাকে ফরিদপুর রেফার করা হয়েছিল ।
তিনি আরো বলেন, সিজারকালে বা পরে তার কোন ধরণের অবহেলা ছিল না এবং তার ভুলে রেবেকার মৃত্যু হয়নি । মৃত্যু হয়েছে ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সসহ অন্যান্যদের অবহেলার কারনে ।
সর্বশেষ এ খবর লেখা পর্যন্ত রাত ১১.টায় মৃত সুফিয়া বেগমকে ডাঃ রতন ক্লিনিকের সামনে এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে সদ্যজাত নাতনী শিশুকে কোলে নিয়ে এবং মৃত মেয়ে রেবেকা বেগমের লাশ পাশে রেখে বিচারের দাবীতে অবস্থান করছিল ।
উল্লেখ্য, এরআগে গত ৫ই এপ্রিল গভীর রাতে ডাঃ রতন ক্লিনিকের অভ্যন্তরে নাইট গার্ড কলেজ ছাত্র সোহানুর রহমান(২০)-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায়ও তোলপাড় ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল । সেদিন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল সোহান হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে ।