স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও মুক্তাগাছার কান্দুলিয়ায় নেই কোন উন্নয়নের ছোঁয়া।
প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ ,২৪ জুন, ২০২২ | আপডেট: ১১:২৭ অপরাহ্ণ ,২৬ জুন, ২০২২
বিধান কুমার।। ময়মনসিংহ হতে ঘুরে এসে, আজ বাংলাদেশ যখন, সল্প-আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ও সল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম উন্নতের দেশ হিসাবে বিশ্ব দরবারে ঠাঁই মিলেছে, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল, ঠিক তখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অবহেলিত এক গ্রামীন জনগোষ্ঠীর নিভৃত কান্না! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গ্রামকে শহরের ন্যায় করবার জন্য সারা বাংলাদেশে গ্রামীন অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করবার লক্ষে নানা প্রকল্প ও কর্মসুচি হাতে নিয়েছেন। গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোকাল গভর্নেন্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-১,২,৩, টিআর, কাবিখা, কাবিটা সহ এডিপি থেকে রাস্তা নির্মাণ, সংস্করণ, হেরিং বোন(ফ্ল্যাট সলিং) বা হেরিং বোন বন্ড(এইচবিবি’র) মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে যাচ্ছে। আর ঠিক তখনই, স্বাধীনতার পর হতে আজ-অদ্বি উন্নয়নের ছোঁয়া মেলে নিই বা কোন প্রকল্প ও কর্মসুচির মাধ্যমে উন্নয়ন সাধিত হয়নি কান্দুলিয়ায়। বলছি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ৪ নং কুমারগাতা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড অবহেলিত জনপথ কান্দুলিয়ার কথা।
২২ শে জুন-২২ বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের মুক্তাগাছা উপজেলার ৪ নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদ। এই ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডে ময়মনসিংহের ৫ নং আসনেরর সাংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের বাড়ী। তবুও উন্নয়নের ছোয়া নেই ১ নং কান্দুলিয়া ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৪ হাজার লোকের বসবাস। ভোটার রয়েছে প্রায় ২৬ শত জন। আর এই ১ নং ওয়ার্ড কান্দুলিয়াতে নানা শ্রেণীতে পড়ুয়া প্রায় সাড়ে ৬’শ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। গ্রামের মধ্যে ৪ টি মাদ্রাসা সহ রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এই ওয়ার্ডের মধ্যে দিয়ে মুক্তাগাছা – বেগুনবাড়ি সড়ক হতে কান্দুলিয়া গ্রামের রাস্তা আরাম্ভ হয়ে রাস্তার শেষ প্রান্ত মিলিত হয়েছে মুক্তাগাছা – জামালপুর জিসি পর্যন্ত। গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার রাস্তা। সম্পুর্ন রাস্তাই কাঁচা। যা সামান্য বৃষ্টি হলেই বিপর্যস্ত হয়ে যায় এই গ্রামের বসবাসকারী জনজীবন। সামান্য বৃষ্টি হলেই মেঠো পথ এতো কাঁদা হয়ে যায় যে, স্কুলে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী সহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কান্দুলিয়া গ্রামের আব্দুল মতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের গ্রামের এই কাঁচা রাস্তা পাকা করা সম্ভব নয়। জন্মের পর অনেক এমপি মন্ত্রী চেয়ারম্যান মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন কখনো একটি ইটও ফেলেনি এই রাস্তায়।
হুমায়ূন কবির নামে এক যুবক বলেন, কয়েক বছর আগে আমার দাদা স্টক করে কিন্তু রাস্তায় কাদা পানি থাকায় কোন ধরনের যানবাহন চলাচল না করায় তাকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারিনি ফলে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন রাস্তাঘাট ভাঙ্গা হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থার খারাপ হওয়ায় আমাদের গ্রামের শিক্ষার হার ও অনেক কম। কারণ গ্রামের ছেলে মেয়েরা দূরের স্কুল কলেজে যেতে পারেনা গাড়ির অভাবে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে স্কুল কলেজে যেতে না পেরে শিশুশ্রমের মত অত্যন্ত লজ্জা জনক পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর আগে আমার চাচি মোছাঃ মনিরা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠে কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় কোনো গাড়ি-ঘোড়া না থাকায় তাকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারেনি। পরে বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কান্দুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আলিমুল রাজি বলেন, কান্দুলিয়া গ্রামের সবকটা রাস্তা কাঁচা বৃষ্টি এলেই কাদাপানিতে চলাচলের মতো অবস্থা থাকে না। আমার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সময়মতোই স্কুলে আসতে পারে না রাস্তায় পড়ে গিয়ে তাদের কাপড়চোপড় নষ্ট হয়ে যায় বই নষ্ট হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রী ছোট হওয়ায় বৃষ্টি আসলে তাদের বাবা-মা ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পান। ফলে এই রাস্তা গুলো পাকা করন খুবই জরুরি।
বায়তুল কুরআন রহিমিয়া মডেল মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন এই মাদ্রাসায় ২শত প্লাস ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের মাদ্রাসায় আসতে খুবই সমস্যা হয় বৃষ্টি কাদা হলেই তাদের বাবা-মা তাদের মাদ্রাসায় আসতে দিতে চায় না। রাস্তার দুই ধারে অনেক পুকুর রয়েছে যদি পা পিছলে পুকুরে পড়ে যেতে পারে। তাই এই গ্রামের স্থানগুলো পাকা করন বলে গ্রাম ও শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে তাই রাস্তা গুলো পাকা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গ্রামের দোকানদাররা বলেন গ্রামের প্রতিটি রাস্তা ভাঙ্গা হাওয়ায় ও বৃষ্টি কাদার সময় কোন গাড়ি আমাদের গ্রামে আসা-যাওয়া করতে পারে না। ফলে বাজার থেকে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাদের দোকানের মালা মাটি কিনে আনতে হয়। সময় মত দোকানের পণ্য সামগ্রী কিনে আনতেও পারি না যার কারণে ব্যবসা করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় দেখা যায় আমরা পণ্য বিক্রি করে যা লাভ করি তা অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাদের কিছুই থাকে না।
গ্রামের এক পানচাষি বলেন, পান পচনশীল পণ্য অনেক সময় গাড়ির অভাবে পান নিয়ে বাজারে যেতে পারি না। বাড়িতেই পচে যায়। বৃষ্টি কাদা হইলেই গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তাই মাথায় করে পানের বোঝা নিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে মেন সড়কে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়। আর যেদিন গাড়ি পাইনা সেদিন পানি পথ ধরে ব্যবসায় ক্ষতি হয় আমাদের।
মোঃ আশরাফুল ইসলাম নামে আরেকজন বলেন, এই গ্রামের কোন মানুষ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পারে না। রাস্তায় মৃত্যু হয় আমাদের গ্রামের মানুষের। কোন মানুষ অসুস্থ হলে গাড়ি না পেলে সেই অসুস্থ ব্যক্তিকে ঘাড়ে করে মেনরোড পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় গাড়ির জন্য। ততক্ষণে খারাপ হয়ে যায় অসুস্থ ব্যক্তি অবস্থা। তখন মনে হয় হে বিধাতা আমাদের বুঝি কেউ নেই যে আমাদের গ্রামের রাস্তা গুলোর কথা ভাববেন।
অতি দ্রুত গ্রামের রাস্তা গুলো পাকা করনের দাবি জানিয়েছেন অত্র এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে আরো দাবি জানিয়েছেন এলাকার শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন যেন তাদের গ্রামের রাস্তাগুলো অতি দ্রুত পাকা করা হয়। গ্রামের রাস্তা গুলো পাকা হলে বাড়বে শিক্ষার হার উন্নত হবে দেশ।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ৫ নং আসনের সাংসদ সদস্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, অপনারা তো সরেজমিন ঘুরেই এসেছেন, এখন আমার কোন বক্তব্য নেই, অফিসে আইসেন এক কাপ চা খেয়ে যাবেন।
৪ নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকব্বর হোসেনকে মুঠোফোন কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন, কিন্তু কোন বক্তব্য না দিয়েই ফোন কেটে দেন।
মুক্তাগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আরব আলী বলেন, আমাদের মাননীয় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের স্পেশাল বরাদ্দের মাধ্যমে কান্দুলিয়া গ্রামের দুটি রাস্তা করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি অচিরেই ওই গ্রামের রাস্তা গুলোর কাজ করা হবে।