কালুখালীতে কোটি কোটি টাকার বালি লুট করছে তপন মদক। (পর্ব-১)
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ ,২৪ নভেম্বর, ২০১৯ | আপডেট: ১১:১০ অপরাহ্ণ ,২৪ নভেম্বর, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধি।। সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের সাদার চরের পদ্মা নদী থেকে দীর্ঘ ৯/১০ বছর ধরে ১০/১২টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে কোটি কোটি টাকা বিক্রি করে চলেছে তপন মদকের নেতৃত্বাধীন বালিখেকোর দল। তপন মদকের বাড়ি শরিয়তপুর বলে জানাযায়।
পাবনা জেলার নাজিরগঞ্জের নাম ব্যবহার করে এ বালি কাটা হচ্ছে।
ভাসমান ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলে বলগেট নামক জাহাজে ও ট্রলারে করে বালি পাচার করছে আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও ৪০/৪৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী পাড়ের বিভিন্ন ঘাটে স্তুপ করা হচ্ছে বালু। সেই স্তুপ থেকে ট্রাকে করেও সরবরাহ করা হচ্ছে পাশ্ববর্তী জেলা/উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এভাবে দিনে অন্তত ৫/৬ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করে চলছে। প্রতি ঘনফুট বালির চর খাজনার নামে চাঁদা নেওয়া হয় ২.৫০ টাকা। প্রতিদিন ১০/১২ টি ড্রেজার চলে। প্রতিটি ড্রেজার একদিনে বালি কেটে থাকে ৫০/৬০ হাজার ঘনফুট বালি। ৫০,০০০ ফুট বালি × ১০ টি ড্রেজার= ৫ লাখ ঘনফুট বালি। যার হিসাবে প্রতিদিন প্রায় সারে ১২ লাখ টাকা খাজনার নামে অবৈধ চাঁদা আদায় করছে। প্রতি মাসে আদায় করে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বিক্রিত বালির টোকেন দেওয়া হয় পাবনা জেলার নাজিরগঞ্জ ঘাটের অফিস থেকে। বালির টোকেন প্রদানকারীরা হলো তপন মদকের ম্যানেজার মানিকগঞ্জ জেলার শুকান্ত সাহা এবং তার সহযোগী শরিয়তপুর জেলার অলক কর্মকার ও নারায়নগঞ্জের অরুন কুমার।
তপন মদকের ম্যানেজার শুকান্ত সাহা জনতার মেইলকে বলেন- আমরা সাদার চর মালিক তপন মদকের চাকরী করি। প্রতি ঘনফুট বলির জন্য আড়াই টাকা হিসাবে খাজনা নেই।
এভাবে নদীর বুক থেকে বালি উত্তোলন করায় নদী তীরবর্তী বসতি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে। বালু তোলার কাজে এখন অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বহিরাগত ও স্থানীয় যোগসাজশের একটি ভয়ংকর প্রভাবশালী গ্রুপ। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার বা কোন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশেরও সাহস করেননা। কেউ প্রতিবাদ করা বা সংবাদ প্রকাশের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা হয় অথবা সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্চিত হতে হয়। আবার এদের উপেক্ষা করে কেউ যদি বেশি দূর্সাহসীক দেখানোর চেষ্টা করে,তাহলে তাকে যে কোন ভাবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে বলেও অনেকে মনে করেন।
এই অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ৫/৬ মাস পূর্বে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন বৈধ বালু মহলের দুই ইজারাদার। তার পরেও থামছেই না অবৈধ বালু কাটা।
এ বিষয়ে, ৮/১১/২০১৯ ইং তারিখ শুক্রবার ১২.৪২ মিঃ টার সময় সাদার চরের বালিকাটার সাথে যুক্ত তপন মদকের সাথে মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনতার মেইল.কম কে বলেন- আমি ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু করে ৫/৬ মাস বালি কেটেছিলাম। এখন আমি কাটিনা, বর্তমানে আমার নাম যদি কেউ বলে থাকে তাহলে ভুল বলেছে। দেখেন আমি একসময় সাংবাকিদকতা করেছি, সেই হিসাবে আমার নামটা না লিখলে কি হয়না। আমি বর্তমানে বালি কাটার সাথে জড়িত নই। আমার লোক যারা আছে তারা এখন অন্য কারো চাকরি করে। তাদের টোকেন কেটে দেয়। এখন আমি এর সাথে আর নাই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীর পানি কমার সাথে সাথেই প্রতি বছরের ৯ মাস যাবৎ এ চক্রটি নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে। লুটের বালু কোটি কোটি টাকা বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা হচ্ছে বালু বালিখেকোদের। দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু তোলার কারণে নদীর সর্বনাশ করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার বসত বাড়ি ও অবাদি জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব চালালেও প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার। যারা এই বালি লুটের সাথে জড়িত অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার নাম জানাগেছে। চলবে…. (পর্ব-১)