আজ : রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রামকান্তপুর গাছ থেকে উদ্ধারকৃত সেই মৃত মনিরের ব্যবহারিক জিনিসপত্র পাওয়া গেছে অন্যের ঘরে!


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ ,৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | আপডেট: ২:৫০ পূর্বাহ্ণ ,৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
রামকান্তপুর গাছ থেকে উদ্ধারকৃত সেই মৃত মনিরের ব্যবহারিক জিনিসপত্র পাওয়া গেছে অন্যের ঘরে!

রাজবাড়ী প্রতিনিধি।।  রাজবাড়ীর রামকান্তপুর গাছের ডাল থেকে উদ্ধারকৃত ঝুলন্ত সেই মৃত মনির হোসেনের সঙ্গে থাকা ব্যবহারিক মোবাইল, টর্চলাইট, স্যান্ডেল ও গামছা পাওয়া গেছে ৪০/৫০ গজ দুরের একটি ঘরের চাল থেকে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর-২২) সকালে ঘটনাস্থলের পাশেই একটি ছাপরা ঘরের বারান্দার চালের সাথে গুজে রাখা অবস্থায় মোবাইল, টর্চ লাইট ও গামছা এবং ঘরের পাশে থাকা ড্রেন থেকে স্যান্ডেল উদ্ধার করেছে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই মোঃ আব্দুল কাদের।

মৃত মনিরের ব্যবহারিক জিনিসপত্র উদ্ধারের সময় ফাঁসীতে ব্যবহৃত শাড়ি কাপড়ের পাইড়ের সন্ধানও মিলেছে। যে ঘরের চাল থেকে মোবাইল, টর্চ লাইট ও গামছা পাওয়া গেছে সেই ঘরের সামনে গাছ ঘেড়া কাপড়ের নিচের অংশের ছেড়া পাইড়। এ সময় সেখানে একাধিক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিল। এলাকাবাসী জানায়, এই ঘর তৈরি করেছে ছাত্তারের ছেলে সাব্বির। এটি এবারের মহরমের ১০/১২ দিন আগে তৈরি করেছে, এটা নাকি খানকা ঘর।

আজকের এ উদ্ধার ঘটনায় এবং অকল্পনীয় সংগৃহিত কাপড়ের পাইড় উদঘাটনের বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও মৃতর পরিবারের সদস্যদের নিঃশ্চিত ধারনা মনির হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর-২২) সকাল পৌনে ৮ টার দিকে রাজবাড়ী জেলা সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নের মুরারীপুর গ্রামের স্থানীয় কানুর বাগানের আম গাছ থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহটি উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ। পুলিশ ও প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান- গাছের ডাল থেকে প্রায় ৫/৬ ফুট নিচে মাথা-দেহ ঝুলছিল, আর মাটি থেকে প্রায় ১ ফুট উপরে পা ঝুলছিল। মৃত ব্যক্তির নিজ বাড়ী হইতে বাগান দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।

মৃত মনিরের শ্বশুর বাড়ির পরিবারের সদস্যরা বলেন- মনির হোসেনের বাড়ি চাদপুর জেলার মতলব উপজেলার চাবাইত্তা গ্রামে। তার পিতার নাম মহর আলী। সে প্রায় ২০ বছর পূর্বে রাজবাড়ীর রামকান্তপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডস্থ মুরালীপুর গ্রামের নুরু ভূইয়ার মেয়ে রওশনারা কে বিয়ে করে এবং শ্বশুর বাড়ী থেকে স্ত্রীর নামে পাওয়া ৮ শতাংশ জমিতে বসত বাড়ি করে স্ত্রীর সাথে বসবাস করে আসছিল। তাদের ঘরে ১১ বছর বয়সের মনিরা নামের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। সে ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী।

মনিরেরর স্ত্রী রওশনারা বলেন- মোফাজ্জল ও মহসিনের ফার্ম থেকে কোয়েল পাখি কিনে ভ্যানে করে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রয় করে আয় উপার্জন করতো। প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনারদিন (শনিবার দিন) সন্ধ্যার আধা ঘন্টা আগে মনির বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আব্বাসের চায়ের চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে যায়। সে রাতে বাড়ি না ফেরায় রাত ২ টার দিকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সকালে লোকজনের নিকট খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কানুর বাগানের আম গাছের ডালের সাথে কাপড়েরর পাইড় দ্বারা গলায় ফাঁস দেওয়া মনিরের মৃতদেহ ঝুলছে। তিনি আরো বলেন, গতকাল বাড়ি থেকে বেড় হওয়ার সময় গায়ে গেঞ্জি পড়ে একটা গামছা, টর্চ লাইট ও মোবাইল সাথে নিয়ে বেড় হয়। কিন্তু তার ঝুলন্ত লাশের সাথে বা আশ-পাশে তার মোবাইল, গামছা, লাইট ও স্যান্ডেল পাওয়া যায় নাই। সে ভাল লোক ছিল, কার সাথে কোন দন্দ বা মনমালিন্য ছিলনা, সে কোন ভাবেই আত্নহত্যা করতে পারেনা। কেউ হয়তো হত্যা করে তাকে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এলাকাবাসীর ধারনা- টাকা-পয়সা কেড়ে নেওয়ার জন্য এলাকার মাদকসেবীদের দ্বারা এ কাজ হতে পারে।

এ বিষয়ে, রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন- লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে । এ বিষয়ে আইনগত ব্যাবস্থা পক্রিয়াধীন ।

৫/৯/২০২২ তারিখ দুপুরের পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফেরার পথে চায়ের দোকান আব্বাস আলী সেখের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- ঘটনার দিন শনিবার বিকেলে সন্ধ্যার একটু আগে মনির আমার দোকানে আসে। চা খেয়ে দুলালের বাইসাইকেল নিয়ে কোথায় থেকে যেন ঘুরে আসে আধা ঘন্টা পর, অর্থাৎ সন্ধ্যার পর। তারপর এখান কিছুক্ষণ লুডু খেলে। তারপর এখান থেকে আমি, দুলাল, কালাম কাশেম, ইয়াদুল, ইসলাম, হাফিজুল ও মনিরসহ মোট ৯ জন মিলে একসাথে রামকান্তপুর তালুকদার পাড়া গ্রামে প্রথমে মিরাজের বাড়ি তারপর লখাই’র বাড়িতে যাই। মহরমের চল্লিশা পালনে আয়োজনের বিষয়ে দুই বাড়িতে বসে আলোচনা করে প্রায় ২ঘন্টা সময় দেই। তারপর ওখান থেকে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আবার দোকানে ফিরে আসি। এরপর চা খেয়ে মনির একাই বাড়ির উদ্দ্যেশে রওয়ানা হয়। যাওয়ার পথে মানিক ও রাসেলের সাথে ঘটনাস্থলের আগে পথে দেখা হয়েছে বলে তারা আমাকে বলে। এরপর দিন সাকালে ৫/৬ টার দিকে মৃত্যুর সংবাদ পাই। দুপুর বেলার দিকে ওর কাছে ব্যবসার টাকা ছিল ৬ হাজার। প্রথম দেখে মসজিদের মুসুল্লি মসলেম। পরে দেখে রিক্সা চালক সিদ্দিক।

তিনি আরও বলেন- মনির হোসেন ঢাকা থেকে এই গ্রামে আসে শহিদুল্লার ছেলে মনিরের সাথে। থাকতো মনিরের বাড়িতেই। পরে মনিরের খালাতো বোনের সাথে মৃত মনিরের বিয়ে দেয়। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে আব্বাস আলী সেখে বলেন, বর্তমানে মনিরের সাথে গভির সম্পর্ক ছিল স্থানীয় রবিউলের। রবিউলের বাড়ি পশ্চিম পাড়া, পিতার নাম আজি ভূইয়া।

মো. রইস মোল্লা বলেন, মনির আমার সামনে এক সপ্তাহ আগে ওয়েট স্কেলে ওজন দিয়েছিল, মনিরের ওজন ছিল ৬২ কেজি। গাছের ডাল থেকে ঝুল দিলে ওই কাপড়ের পাইড় ছিড়ে যাওয়ার কথা, ওই পাইড় কোন ভাবেই ঝুল রক্ষা করতে পারবেনা। আবার নিচ থেকে ফাঁস নিলে পায়ের নিচেও কিছু পাওয়া যায় নাই। আবার উপর থেকে লাফ দিলে গলা কেটে রক্তাক্ত হওয়ার কথা, তাহাও হয় নাই, চোখ বড় বড় হয় নাই, মরার পড়ে জিহ্ববাও বেড়োয় নাই। এ সবমিলে বিবেচনা করে দেখেন এটা হত্যা।

Comments

comments