রাজবাড়ীর পাংশায় সাংবাদিকের উপর স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ
প্রকাশিত: ৫:২৯ অপরাহ্ণ ,২৪ জুলাই, ২০২১ | আপডেট: ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ ,২৯ জুলাই, ২০২১
বিধান কুমার বিশ্বাস।। রাজবাড়ীর পাংশায় সাংবাদিক ও তার পরিবারের উপর স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৮ জুলাই-২১ রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১.টার দিকে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম রাফির নিজ বাড়িতে একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী পরিকল্পিত ভাবে এ হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম রাফি দ্যা ডেইলি ট্রাইবুনাল ও বাণিজ্য প্রতিদিন এবং বাংলাদেশ পেপারের রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্তব্য দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সরেজমিন পরিদর্শন ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, সাংবাদিক রাফি গত এক বছর ধরে রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন অসামাজিক, মাদক, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া দূর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করে আসছিল। যে কারণে বেশ কয়েকবার তার উপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যে সকল হামলা ও হুমকির ঘটনায় পাংশা মডেল থানায় ডায়রী, এজাহার ও অভিযোগ দায়ের করেছে সে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই- রবিবার রাত আনুমানিক রাত ১১.টার দিকে একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী তার বাড়িতে তাকে ও তার ঘুমন্ত মাকে উদ্দেশ্য করে গুলি বর্ষণ করে। সন্ত্রাসীরা ঘরের পেছনের জানালার দিকে থাকায় সাংবাদিক রাফি তার মাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। বিকট এমন শব্দ আর তাদের চিৎকার শুনতে পেয়ে ছুটে আসে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আশপাশের লোকজন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সন্ত্রাসীরা স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়। এই খবর পেয়ে পাংশা মডেল থানার দায়িত্বরত অফিসার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
পাংশা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনা ঘটার কিছু সময় পরে আমাদের অফিসার ও পুলিশ ফোর্স সেখানে গিয়েছিল। বিষয়টি আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দেখছি।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন- আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে এব্যাপারে আইনগত ভাবে যা যা করা লাগে সব করা হবে। সাংবাদিক যাতে ন্যায় বিচার পান আমরা তার সব ব্যবস্থা করবো। এঘটনায় জড়িত আসামীদের শীগ্রই আটক করা হবে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহল সাংবাদিক রাফির মতো একজন তরুণ আর মেধাবী সাংবাদিককে টাকার বিনিময়ে কিনতে না পেরে টাকার জোরে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা ও হুমকী-ধমকী প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছিল যার সর্বশেষ ফলাফল ১৮ জুলাই দিবাগত রাতে তাকে হত্যা চেষ্টা। যা সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিত ভাবে সাংবাদিকের উপর এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম রাফি বলেন- আমাকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছিল সে বিষয়টি আমি পরিষ্কার। কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় মফস্বলে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হত্যা এবং নির্যাতন প্রায়ই ঘটে। এর কোনো সুষ্ঠ বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। আর আমি যে ঘটনার শিকার হয়েছি তার যে সুষ্ঠ বিচার হবে এর নিশ্চয়তা কোথায়। গত ৩ বছর ধরে আমি ঢাকায় কাজ করেছি। সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিলে নিজ এলাকায় ফিরে এসে মফস্বলে সাংবাদিকতা শুরু করি। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ঢাকার তুলনায় আমার কাছে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে হয় এখানে সাংবাদিকতা করাটা। মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। যেকারণে এখানে কোন সংবাদ হলে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের যে সাংবাদিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে করে প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে সে। তিনি আরও বলেন, বেশ কিছু অঞ্চল আছে যেখানে সাংবাদিকতা বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকি তৈরি হয় নানা দিক থেকে। এর মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলা অন্যতম। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মাঝেও রয়েছে তীব্র বিভেদ। যার রোষানলে পড়তে হয় আবার ওই সাংবাদিকদেরই। খবর পাঠানোর চাপ ঠিকই থাকছে মফস্বল সাংবাদিকদের উপর। কিন্তু নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র চাপ নাই। ফলে খবরের পেছনে যখন সাংবাদিক ছুটছেন তখন অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে নজর দেবার সুযোগ থাকে না। ক্ষমতাসীন এক ইউপি চেয়ারম্যান, সরিষা ইউনিয়নের এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে তার মূল অভিযোগ।