আজ : বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে সুজনকে জবাই করে হত্যা! পরদিনও দূর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ ,২৭ এপ্রিল, ২০২১ | আপডেট: ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ ,২৮ এপ্রিল, ২০২১
রাজবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে সুজনকে জবাই করে হত্যা! পরদিনও দূর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

বিধান কুমার।।  রাজবাড়ীর গঙ্গাপ্রসাদপুরে সুজন তালুকদার (৩০) নামে এক যুবক কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময়, আহত হয়েছেন রিমন ও একরামুল নামে আরও দু’জন। আহত দুজনকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রিমনের শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

২৬শে এপ্রিল-২১ সোমবার সন্ধ্যা ৭.টার দিকে মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর গ্রামের ও দুর্গাপুর এলাকায় রেললাইনের পাশে কৃষি জমিতে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুজন তালুকদার মিজানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদপুর এলাকার গিয়াসউদ্দিন তালুকদারের ছেলে। সে ধাওয়াপাড়া যৌকুরা এলাকায় একটি বালু ব্যাবসায়ীর চাতালের কাজ করতো।

সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সুজন তালুকদারের লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে যাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।  তবে, ঘটনার পরদিন পর্যন্তও দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

২৭শে এপ্রিল-২১ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায় সুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো সেই কৃষি খেতে রক্তের দাগ লেগে আছে। নিহত সুজনদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে শুধু কান্নার রোল। ছোট একটি ছেলে কে রেখে মারা গেলো সুজন। সইতে পারছেনা পরিবারও। পুলিশের সদস্যও মোতায়েন ছিলো ওই বাড়ীতে। নিহত সুজনের মা, বোন, স্ত্রী সবার কান্নায় আকাশ বাতাস একাকার। এলাকার মানুষেরা এসে ভরে গেছে। পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিচ্ছে সবাই। পোষ্ট মর্টেমের পর বাড়ীতে লাশ এনে গোসল করানো হয়, পরে বিকেলে জানাজা শেষে গঙ্গাপ্রসাদপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সেলো মেশিন দিয়ে সেখানে পাট খেতে নিয়মিত পানি দেন আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন কৃষক। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান- আমি নিয়মিত খেতে পানি দেই, ঘটনার আগে আমি খেতে পানি দিচ্ছিলাম। সে সময় ৫/৬ জন লোক খেতের আইলে বসে ছিলো। তাদের মধ্যে একজন এসে আমার কাছ থেকে বোতলে পানি চাইলো, আমি পানি ভড়ে দিয়ে ইফতারের আগেই বাড়ী যাই । গোসল করার জন্য যখন বাড়ীর পাশে পুকুরে যাচ্ছি তখনই আমার সেলো মেশিনের কাছে হইচই শুনতে পাই। আমি গোসল সেরে এসে দেখি অনেক মানুষ। আর সেখানে গিয়ে দেখি সুজন তালুকদারের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। তবে প্রতিদিনই ছেলেপেলেরা এখানে এসে আড্ডা মারে, তাই কে কখন এলো গেলো সেদিকে আমার খেয়াল নেই।

নিহতের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন- পূর্বশত্রুতার জেরে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা এর আগেও গতবছরে ১৩ রোজায় আমাদের বাড়িতে হামলা করে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছিল, তার কোন বিচার হয়নি। তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন আমার স্বামী রোজা রেখে ইফতার শেষ করে বাড়ি থেকে বের হয়, কোথায় যাচ্ছো জিজ্ঞাস করলে সে জানায় খুব গরম তাই বাতাসে ঘুরে আসি। পরে কিছুক্ষন পর শুনি যে তাকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সুজনের সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিলো কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বছর এলাকার মুরাদ পুলিশের চাকুরি করে তাদের সাথে কবরস্থানের কমিটি নিয়ে ও বাড়ির পাশেই একটি কুম (পুকুর) নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। আমার স্বামী শুধু বলেছিলো এই পুকুরের ইজারার টাকা যেন কেউ না খায়, এ টাকা যেন মসজিদ ও কবরস্থানের কাজে ব্যয় করা হয়। এ নিয়ে  পুলিশে চাকুরি করে সেই মুরাদের সাথে শত্রুতা তৈরী হয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চাঁদাই মিয়া জানান- কবরস্থানের গাছ বিক্রি করা টাকা দিয়ে কুম কাটা নিয়ে মুরাদ পুলিশদের সাথে গন্ডগোল হয়। সুজন কবরস্থানের গাছ বক্রিতে বাধা দিলে মুরাদ (পুলিশ) গাছ বিক্রি করবেই। এ নিয়েই দ্বন্দ শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, গত বছর এই সময়ে মুরাদ পুলিশ ও বছির স্থানীয় আরো কয়েকজনের সাথে নিয়ে সুজনদের বাড়ী সহ ১২টি বাড়ী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছিল, আমাদের পেলেও কুপিয়ে যেত কিন্তু সবাই তখন পালিয়ে যায়। সে সময় গুলিও করে তারা। এলাকার মজনু নামে একজনের পায়ে গুলি লাগে, অন্য আরেকজনের পুরুষাঙ্গের নিচে গুলি লাগে। এ নিয়ে পুলিশও এসেছিলো, পরে আর কিছুই হয় নি।

রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় সুজন তালুকদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতা নাকি অন্য কোনো কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

Comments

comments