রাজবাড়ীর সেই আল-মামুন উইনার গ্রুপের মালিক র্যাবের হাতে আটক
প্রকাশিত: ১১:২২ পূর্বাহ্ণ ,২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | আপডেট: ৮:৩৭ অপরাহ্ণ ,২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
স্টাফ রিপোর্টার।। মানবপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে উইনার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস নামের এক প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন কেসমত আলী কে আটক করেছে র্যাব। এসময় জব্দ করা হয় শতাধিক পাসপোর্ট, অনুমোদনহীন ওয়াকটিক’সহ প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম।
২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২০ সোমবার রাতে রাজধানির বারিধারা ডিওএইচএস থেকে তাকে আটক করা হয়।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ধাওয়াপাড়া ওলিপুর গ্রামে। এলাকায় সে কেসমত আলী নামে পরিচিত।
র্যাব জানায়, সে পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। কখনো কখনো ভয় দেখিয়ে আদায় করতো অর্থ। টাকা ফেরত চাইতে এসে অনেকে মারধরের শিকারও হয়েছেন। নিজেকে ক্ষমতাধর জাহির করতে ওয়াকিটকির অনৈতিক ব্যবহার করতেন তিনি। প্রতারণার টাকায় গ্রামে যেতেন হেলিকপ্টারে চরে। অফিস কর্মচারি কাউকেই দুই মাসের বেশি চাকরিতে রাখতেন না এ প্রতারক ।
র্যাব আরো জানায়, মানব পাচার ও প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হবে আল মামুনের বিরুদ্ধে।
Winner International Travels – Home | Facebook
উল্লেখ্য, এর আগে- ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই সোমবার উইনার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস এর নামে “বাংলাদেশ প্রতিদিন” নামের একটি দৈনিক পত্রিকায় “ভিসা প্রসসিংয়ের নামে ফাঁদ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। তাহা হুবহু তুলে ধরা হলো।
ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে ফাঁদ
সাগর আর জান্নাতুল মাওয়া। তারা জানতে পারে রাজধানীর বারিধারায় একটি প্রতিষ্ঠান কানাডার ভিসা প্রসেসিং করে। সে মতে তারা দুজনে সেখানে যোগাযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক পুরো বিষয়টি দেখভাল করেন। সাগর আর মাওয়া তার সঙ্গে কথা বলেন। মালিক তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, তিন মাসের মধ্যেই তাদের ভিসার কাজ শেষ হয়ে যাবে। আর এ জন্য প্রথমেই তাদের দুজনের কাছ থেকে অগ্রিম ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। বাকিটা ভিসার পর। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে ৫ মাস হয়। ভিসার কিছু হয় না। সেই অফিসে প্রতিদিনই ধরনা দিতে থাকে তারা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। টাকা ফেরত চায়। কিন্তু মামুন তাদের আর দেখা দেয় না। এরপরই তারা বুঝতে পারেন, প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তারা।
উইনার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি কানাডার ভিসা প্রসেসিংয়ের নামে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। প্রতারকদের শিরোমণি সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন কখনো এসপির ঘনিষ্ঠ, ডিসির আত্মীয় থেকে শুরু করে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বারিধারায় অফিস গড়ে তোলে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ টাকা ফেরত চাইলেই নানাভাবে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আর এ কাজের জন্য তিনি সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে তুলেছেন।
ভুক্তভোগীদের একজন বলেন, টাকা নিয়েই আবদুল্লাহ আল মামুন আর দেখা করেন না। তার অফিসের আসাদুজ্জামানকে দিয়ে সব কাজ সারেন। তার টিকি আর পাওয়া যায় না। ফোন দিলেও ফোন ধরেন না। একবার ফোন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বলতে থাকেন, ‘রাজবাড়ী জেলার ডিসি, এসপি, ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, সব থানার ওসি, টিআই-সবাইকে আমার কথা জিজ্ঞাস করবেন। আমার নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। এই নামটা শুধু জিজ্ঞাস করে দেখবেন। তারাই বলবেন, আমি কে? পারলে যা খুশি করেন’। আবদুল্লাহ আল মামুনের এমন হুমকি-ধমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় রাজবাড়ী জেলার এসপি আসমা সিদ্দিকা মিলির সঙ্গে। গতকাল ফোনে তিনি বলেন, লোকটিকে তিনি চিনেন রাজবাড়ীর বাসিন্দা হিসেবে। ভিসা প্রসেসিংয়ের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে সে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবে চিনেন। তার নাম ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, জেলার এসপি হিসেবে আমাকে সবাই চিনতে পারে। কে নাম ভাঙাল সেটা আমার জানার কথা নয়। তবে এমন কিছু ঘটলে অবশ্যই পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগেও একটি পেয়েছি। তিনি অস্বীকার করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীসহ সারা দেশে এমন প্রতারক চক্র ভীষণ সক্রিয়। প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জমিজমা বিক্রি করে সবকিছুই তুলে দিচ্ছে আদম ব্যবসায়ীবেশী প্রতারক চক্রের হাতে। এমন চক্রগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিরীহ মানুষদের পথে বসাচ্ছেন।
সিআইডি জানায়, এরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল। টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েই তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। গ্রাহকদের উল্টো বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে দূরে রাখার চেষ্টা করে।
অনলাইন ভার্সন, বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশ : সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
আপলোড : ২২ জুলাই, ২০১৮ ২৩:২০