আজ : মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভিপি সম্পত্তি উদ্ধার ঠেকাতে জাল দলিল দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী আদালতে মামলা দায়ের


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ ,১০ জুন, ২০২২ | আপডেট: ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ ,১২ জুন, ২০২২
ভিপি সম্পত্তি উদ্ধার ঠেকাতে জাল দলিল দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী আদালতে মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার।।  ভিপি সম্পত্তি উদ্ধার ঠেকাতে ও বি.এস রেকর্ড পরিবর্তনের উদ্দেশ্য কোর্ট আদেশ পাওয়ার লোভে জাল দলিল ও জাল মিউটেশন দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে হানিফ সেখ। মূলত: অন্যায়কে ন্যায় রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য অসৎ ও প্রতারনার উদ্দেশ্যে আইনকে ঢাল বানাতে আদালতে এই মামলা দায়ের করেছে সে।

দেওয়ানি কার্য্য বিধি আইনের ৩৯ আদেশের ১/২ বিধি ১৫১ ধারামতে অস্থায়ী নিষেধজ্ঞা জারীর জন্য- হানিফ সেখ বাদী হয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষের ৪ কর্মকর্তা ১. রাজবাড়ী জেল প্রশাসক, ২. রাজবাড়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ৩. রাজবাড়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার {(ভূমি) (এসিল্যান্ড} এবং ৪. আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে বিবাদী করে গত ২৪/৫/২০২ ইং তারিখে রাজবাড়ী সহকারী জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করে। যাহার মামলা নং ৯৭/২২।

মামলার বাদী- মোঃ হানিফ সেখ, পিং- মক্কেল সেখ, সাং- ইন্দ্রনারায়নপুর, ডাকঘর- হমদমপুর, উপজেলা ও জেলা- রাজবাড়ী। উক্ত মামলায় উল্লেখ করে যে, ততকালীন উক্ত সম্পত্তি টুকু উপযুক্ত মূল্য দিয়ে হানিফ সেখ তার নিজ নামে গত ইং ২৪/১২/১৯৬৯ তারিখে ছাপ কবলা দলিল করেন। যাহার দলিল নং ১০২৭৪। জমি ক্রয়ের পর গত ইং ১০/১২/১৯৭২ তারিখে N/o T.o ix-p-1-114/71-72 নং নামপত্তন কেসে সরকার সেরেস্তায় করাদী আদায় দিয়া দাখিলপ্রাপ্তে ভোগ-দখল করছেন। বিএস রেকর্ড  ভুলবসত সরকারের নামে হয়েছে, তাহা পরিবর্তন করে তাহার নামে করতে আদালতের আদেশ চান। সেই সাথে নালিশী ভূমিতে প্রবেশ ঠেকাতে ১-৪ নং বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদলতের নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন।

এদিকে, এই মামলা দায়ের করার পর আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস কৃতক জমিতে টাঙানো লাল নিশান বাদী উঠে ফেলে দিয়েছে।

ওই জাল দলিলের তদন্তের সার্থে আলীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তহশীলদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি রেজিস্টার বহি দেখে জানান যে- ইন্দ্রনারায়নপুর মৌজার জেএল নং- ১৫৮, ১/১ নং খতিয়ানে বিএস ৪৩৬ নং দাগের ‘খ’ তপশীলভূক্ত ২৪ শতাংশ নাল জমি রহিয়াছে। সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে- ১. ভূবন মহিনী,  জং- করুনা সিন্ধু। ২. শরৎ চন্দ্র,  পিতা- শিব চন্দ্র। ৩. বিমল চন্দ্র পিতা- সুখেন্দ্র। ৪. অন্নদা চরণ প্রমোদা পিং- আধিকা, এই ৪ জনের নাম রহিয়াছে। এই সম্পতির মালিকগণদের না থাকায় পরবর্তীতে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের নামে বিএস রেকর্ড হয়েছে। অর্থাৎ ১/১ নং খতিয়ানের ‘খ’ তপশীলভূক্ত অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

এ প্রতিবেদকের মন্তব্য- ২৪ শতাংশ ওই ভিপি জমিটি ইন্দ্রনারায়নপুর গ্রামে পাকা রাস্তা সংলগ্ন, যাহার পাশ প্রায় ৩৬ ফুট ও লম্বা ৩২৫ ফুট, বাজার মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ভূমিদখলবাজ মোঃ হানিফ সেখ ১৯৬৯ সাল উল্লেখ করে জালিয়াতির মাধ্যমে পুরোনো দলিল তৈরী করে ৪৩৬ নং দাগের ২৪ শতাংশ ভূমি দাবি করলেও তার নামে ভূমি অফিসে রক্ষিত বালামে কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের নামে। ৫৩ বছর পূর্বে করা দলিলের লেখা কলমের কালি দেখলে বুঝা যায় ৬ মাস বা ১ বছর পূর্বের লেখা। বিশেষজ্ঞ দ্বারা দলিল পরিক্ষা করলেই নিশ্চিত জাল প্রমানিত হবে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরসূত্রে ও তথ্যনুসন্ধানে জানাযায়, জেনৈক মক্কেল সেখের ছেলে ও অত্র মামলার বাদী মোঃ হানিফ সেখ অতি ধুরন্দর ব্যক্তি।তার বাড়ি ছিল রাজবাড়ী জেলা সদরের লক্ষ্মীকোল গ্রামের গোদারবাজার এলাকায়, সেখান থেকে সে গত ২০০৮/৯ সালের দিকে তার স্ত্রীসহ ৪ ছেলে, ২ কন্যা ও তার ছেলের বউসহ স্বপরিবার নিয়ে রাজবাড়ীর আলীপুর ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়নপুর গ্রামে ১৮শতাংশ জমি খরিদ করে বসত বাড়ি করে, যাহার বিএস দাগ নং ৪৩৫। সেই জমির সাথে পূর্বপাশে ১/১ খতিয়ানের ‘খ’ তপশীলভূক্ত ২৪ শতাংশ ভিপি জমি রয়েছে, যাহার বি.এস দাগ নং ৪৩৬। উক্ত “ভিপি” সম্পত্তি অবৈধভাবে জবর-দখল করে। পরবর্তীতে ২৪/১২/১৯৬৯ তারিখ তারিখ উল্লেখ করে ৫৩ বছর পূর্বের ক্রয়সূত্র দেখিয়ে জাল দলিল তৈরি করে। যাহার দলিল নং- ১০২৭৪। শুধু তাই নয়, এদিকে আবার ১০/১২/১৯৭২ তারিখ উল্লেখ করে জাল (নামপত্তন) মিউটেশনও করেছে। যাহার মিউটিশন কেস নং- N/o T.o ix-p-1-114/71-72।

এলাকাবাসীর ধারনা, ওই ভিপি সম্পত্তি টুকু আত্নসাতের উদ্দেশ্যে দলিল জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বর্তমান সময়ে রেজিস্ট্রি অফিসের পুরনো ভলিয়মে ওই জাল দলিল লিপিবদ্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাপ করে ব্যর্থ হওয়ার পর, এবার সেই জাল দলিলের বলে বিএস রেকর্ড পরিবর্তনের জন্য কোর্ট আদেশ পাওয়ার লোভে এবং সরকার কতৃক ভূমি উদ্ধার ঠেকাতে- এবার সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়ানী মামলা করেছে প্রতারক মোঃ হানিফ সেখ। মূলত: অন্যায়কে ন্যায় রূপে প্রতিষ্ঠার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে আইনকে ঢাল বানাতে আদালতে এই মামলা দায়ের করেছে প্রতারক হানিফ সেখ।

২৩/৩/২২ তারিখে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক জমি মাপ-ঝোকের সময় দলিল প্রত্যাক্ষদর্শীদের ধারনা- ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের অনেক জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস আগুনে পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। সেই অফিসের বালাম বইসহ কাগজপত্র রেকর্ড সম্পূর্ণই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সুযোগটি গ্রহণ করে জালিয়াত চক্র পুরানো কাগজপত্র দিয়ে সেই সংশ্লিষ্ট অফিসের উপর জাল দলিল তৈরি করে। সে আগুনে মোঃ হানিফ সেখের নামীয় ওই ২৪ শতাংশ জমির দলিলের তথ্য-প্রমান লেখা রেজিষ্ট্রি বহিও পুড়ে গেছে, এটা বলার ও প্রমানের উদ্দেশ্যে-ই ওই জাল দলিলের তারিখটা বেছে বেছে ১৯৬৯ সাল ব্যবহার করা হয়েছে বলে সকলে মনে করেন।

Comments

comments