(পর্ব-১)রাজবাড়ীতে লাইসেন্সবিহীন প্রাইভেট হাসপাতালের দৌরাত্ম্যে! নিরব প্রশাসন
প্রকাশিত: ৪:২৪ অপরাহ্ণ ,২৩ মার্চ, ২০২১ | আপডেট: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ ,২৪ মার্চ, ২০২১
বিধান কুমার।। রাজবাড়ীতে প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে জনসেবার নামে চলছে জমজমাট ব্যবসা। সরকারি অনুমোদন না নিয়ে-ই রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট ক্লিনিকের চেম্বারে বসে বৈধ ডাক্তার অর্থাৎ সরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররাও চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকেন। চিকিৎসাসেবা প্রদানের নামে বহিরাগত ননডিগ্রিধারী ডক্তাররাও বিভিন্ন ডিগ্রিধারী পরিচয় দিয়েও চেম্বার করেন এসব অবৈধ প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানাযায়, এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে আবার মাসে মাসে পরিদর্শনও করে থাকেন শ্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট ক্লিনিকের দৌরাত্ম্যে চিকিৎসা সেবার নামে অপ চিকিৎসায় রোগীর হয়রানি ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। এতে করে সাধারণ জনগণ সু-চিকিৎসা সেবা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি অপ চিকিৎসায় রোগীরা হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসা সেবা প্রদানের যন্ত্রাংশ, অক্সিজেন, ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা কমপ্লিট ল্যাব টেকনোলজিস্ট দ্বারা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক পরিচালনা না করায় সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে-ই রাজবাড়ীর সর্বস্তরে একের পর এক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বেড়েই চলেছে। সঠিক নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান হতে চিকিৎসাসেবা নিতে শঙ্কিত সর্বসাধারণ।
এসব অবৈধ ডায়াগনস্টিক প্রাইভেট ও বিভিন্ন ক্লিনিকের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সঠিক চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান প্রায়ই নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক চিকিৎসা দানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর আস্থা হারাতে হচ্ছে চিকিৎসাকামি সর্ব সাধারণের নিকট হতে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রাজবাড়ীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, লাইসেন্স, অক্সিজেন যন্ত্রপাতি, ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসক, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা ল্যাব টেকনোলজিস্ট ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে কথিত সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়মানুসারে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যন্ত্রপাতি, দুজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট, যন্ত্রপাতি ও কর্মকর্তা কর্মচারীর তালিকা সহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল এসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত সিটিজেনচার্টার থাকতে হবে। সিংহভাগ অবৈধ প্রতিষ্ঠানে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিয়ম না মেনে চিকিৎসাসেবার জমজমাট ব্যবসায় মগ্ন এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারগণ।
চলতি বছরের ৮ই জানুয়ারি পাংশা উপজেলার মা ও শিশু ডায়াবেটিস হাসপাতালে আবুল কাশেমের স্ত্রী হাসি বেগমকে সিজারের জন্য ভর্তি করে। হাসি বেগম একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেন। কিছুক্ষণ পরে হাসি বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে অক্সিজেনের জন্য ছুটে যায় আবুল হোসেন কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রাণ হারায় হাসি বেগম। তৎক্ষণাৎ উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানে মৃত হাসি বেগমের পরিবারবর্গ হাসপাতাল ভাঙচুর করতে উদ্যত হলে পাংশা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেন। হাসি বেগমের ওটির সময় পর্যাপ্ত অক্সিজেন, ডিপ্লোমা সম্পন্ন ল্যাব টেকনোলজিস্ট, অভিজ্ঞ নার্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিহীন পরিচালনা করতেন কর্তৃপক্ষ, অনুসন্ধানকালে এ চিত্র উঠে আসে।
মা ও শিশু ডায়াবেটিস হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ লাইসেন্স করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে যাচ্ছি প্রায় ৫ বৎসর। আমার হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন নং এইচ এস এম-২৭৪১৫।
প্রতিষ্ঠান পরিচালকের নিকট তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক প্রাইভেট ও বিভিন্ন ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান- আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নিয়ম মেনে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য। কিন্তু পর্যাপ্ত রোগী না থাকায় প্রতিষ্ঠান ভাড়া,বিদ্যুৎ বিল,স্টাফদের বেতন নিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান রোগী থাকুক আর না থাকুক কাগজপত্র করতে ও প্রতিবছর নবায়ন করতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তার যোগান দিতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। তবে আর যাই হোক চেষ্টা রাখব কাগজপত্র করে আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে।
এ বিষয়ে, রোগীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান- অবৈধ ডায়াগনস্টিক প্রাইভেট ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে গেলে প্রতিনিয়তই আমাদের অপচিকিৎসা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তেমনি গুনতে হয় মোটা পরিমাণ অর্থ। রোগীরা আরো বলেন, চিকিৎসাসেবা নিতে আসলে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে যাতে করে আমাদের ভোগান্তির শিকার না হতে হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (চলবে…)