রাতে যাত্রী ছাউনি ভেঙে গায়েব করার মামলায় প্রমানিত হওয়ায় রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য মজনু বরখাস্ত
প্রকাশিত: ১:১৩ অপরাহ্ণ ,১৩ জানুয়ারি, ২০২১ | আপডেট: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ ,১৫ জানুয়ারি, ২০২১
রাজবাড়ী প্রতিনিধি।। রাজবাড়ী জেলা পরিষদের নির্বাচিত ১০ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান মজনুকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দিয়ে ১০/১/২০২১ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়। রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা পরিষদ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী স্বারিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন সুত্রে জানাগেছে, রাজবাড়ী জেলা পরিষদের ১০ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে সিআর ৮৫৭/২০ ও ৮৬৭/২০ নং মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে গৃহিত হওয়ায় তার দ্বারা জেলা পরিষদের মতা প্রয়োগ জনস্বার্থে পরিপন্থী বলে সরকার মনে করেন। ফলে জেলা পরিষদ আইন ২০০০ (জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৬ দ্বারা সংশোধিত) এর ১০৩ ধারা অনুযায়ী রাজবাড়ী জেলা পরিষদের ১০ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান মজনুকে জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারমান ফকির আব্দুল জব্বার জানান, মন্ত্রণালয় থেকে রাজবাড়ীর ১০ নম্বর জেলা পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাতের আঁধারে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনীটি ভেঙে গুড়িয়ে গায়েব করে দেওয়ার ঘটনায় কালুখালী থানায় একটি মামলা করেছিল জেলা পরিষদ।
কালুখালী থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাত ১১টা থেকে একটার মধ্যে কালুখালীর চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ২০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া যাত্রী ছাউনী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বুলড্রেজার/ভেকু দিয়ে সম্পূর্ণ ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে ইট, রড, সাটার, গ্রীলসহ সকল মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে জেলা পরিষদের ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সেখানে একটি দোকানঘরও ছিল। যাত্রী ছাউনীটি জেলা পরিষদের আয়ের অন্যতম একটি আয়ের উৎস। যা থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যগণ ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া না হলে জেলা পরিষদের অনেক সম্পদ এভাবেই চুরি হতে থাকবে।
পরবর্তীতে ওই মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই ফরিদপুরকে অর্পণ করা হয়। পিবিআই তদন্ত করে গত ১৪ ডিসেম্বর-২০ পিবিআই ফরিদপুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদন মিজানুর রহমান মজনুসহ দুই জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর পর ১০/০১/২০২১ইং তারিখে মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
জানাযায়- মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই ফরিদপুরের এসআই মাহবুবুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, কালুখালী উপজেলার প্রবেশদ্বার চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত যাত্রী ছাউনী ছিল। যাত্রী ছাউনীর পেছনে রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান মজনুর আট শতক জমি রয়েছে। মজনু সেখানে মাটি ভরাট করে একটি মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু যাত্রী ছাউনীর জন্য সেটি বাস্তবায়ন করতে পারছিল না। তদন্তকালে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২.টার পর লোকজন চলে গেলেও মিজানুর রহমান মজনু তার লোকজন নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিল। রাত ১২.টা ১০ থেকে ১২.টা ৩০ এর মধ্যে আসামি মজনুর হুকুমে আমজাদ হোসেন বেআইনীভাবে অনাধিকার প্রবেশ করে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে যাত্রী ছাউনীটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। তদন্তকালে আরও জানা যায়, মিজানুর রহমান মজনু ক্রয়কৃত জমি ফরোয়ার্ড করার লক্ষ্যে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য যাত্রী ছাউনী ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে রাজবাড়ীর তৎকালীন স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক (অঃদাঃ) মোহাম্মদ আশেক হাসানও প্রায় একই ধরণের তদন্ত প্রতিবেদন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেন।
কালুখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, যাত্রী ছাউনী ভাঙার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে আমি জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। তার প্রেক্ষিতে যাত্রী ছাউনী ভাঙার জন্য উল্টো আমাকে দায়ী করে মজনু মানববন্ধন করে। উপজেলা নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থী ছিলাম। ওরা আওয়ামী লীগের লোক হয়েও আমার বিরোধীতা করে। মজনুই যে যাত্রী ছাউনী ভেঙেছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, জেলা পরিষদের মিটিংয়ে সে যাত্রী ছাউনীটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সে প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।