আজ : শুক্রবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মসমর্পণ করলো টেকনাফের প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ১২:০১ অপরাহ্ণ ,১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ | আপডেট: ১১:০৬ অপরাহ্ণ ,১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
আত্মসমর্পণ করলো টেকনাফের প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা

বিশেষ প্রতিনিধি।। প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। এরপর থেকে পুলিশের তৎপরতায় আজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতার দাপটে গত এক দশক ধরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা টেকনাফের প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদাররা। আজ ১০২ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছেন।

১৬ ফেব্রুয়ারী-১৯ শনিবার দুপুরে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান বদির ভাই- মাদক ব্যবসায়ী আবদুর শুক্কুর, আমিনুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, বদির ভাগিনা মোঃ সাহেদ রহমান নিপু, বিয়াই সাহেদ কামাল ও খালাতো ভাই মন মন সেন।

এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা ৩ লাখ ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩০টি দেশীয় এলজি ও ৭০টি তাজা কার্তুজ জমা দেন। আত্মসমর্পণকারীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, আইজিপি ড. মোঃ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার ৪টি আসনের সংসদ সদস্য।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার রয়েছেন। আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা হবে।

উল্লেখ্য, গেল বছরের ৪ মে থেকে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা নেয়। পাশাপাশি দেশজুড়ে চলে বন্দুকযুদ্ধ। এতে কয়েকশ’ ইয়াবা ব্যবসায়ি নিহত হয়। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় মারা গেছে ৪৪ জন।
অভিযানের পরও থামছিল না মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার। টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধে গত বছরের অক্টোবর থেকে অল আউট অ্যাকশনে নামে পুলিশ। অভিযান সফল করতে প্রথম পদক্ষেপে বদলি করা হয় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও টেকনাফ থানার ওসি রঞ্জিত বড়ুয়া সহ এক ডজন পুলিশ কর্মকর্তাকে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার ডিসি মাসুদ হোসেনকে। আর টেকনাফ থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাহসী পুলিশ অফিস হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া ওসি প্রদিপ কুমার দাশকে। অক্টোবর থেকে ইয়াবার বিরুদ্ধে কক্সবাজার পুলিশের অল আউট অ্যাকশন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর থেকে গত তিন মাসে টেকনাফের ৪০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদার নিহত হন। পুলিশের এই অভিযানে গুড়িয়ে দেয়া হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের প্রসাদ। ধ্বংস করা হয় ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রলার।

পুলিশের এই অল আউট অ্যাকশনে টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গত এক যুগের ভেতরে সবচেয়ে বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। জীবন বাচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। অনেকে দেশ ছেড়েও পালিয়ে যান।

দিন দিন অভিযানের গতি বাড়তে থাকায় জীবন বাচাতে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকেন টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গড ফাদাররা।

অবশেষে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা গডফাদার ও ইয়াবা ব্যবসায়ী।

Comments

comments