রাজবাড়ীতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে রেলওয়ের ক্যারেজ। অধিগ্রহন হবে ৭ মৌজার ভূমি
প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ ,১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | আপডেট: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ ,১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
স্টাফ রিপোর্টার।। রাজবাড়ীতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি নতুন ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামত কারখানা। এই ক্যারেজ নির্মাণের জন্য বিশদ নক্সা ও দরপত্র দলিল তৈরি সহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা” শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে- পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন কর্ম পরিকল্পনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে। (১০ সেপ্টেম্বর) রোববার দুপুরে অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।
এমপি কাজী কেরামত আলী তার বক্তৃতায় বলেন- আমাদের রাজবাড়ীতে বিশাল ক্যারেজ হতে যাচ্ছে, এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ ও তাকে ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় এটাই তার বাস্তবতা, বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের ক্যারেজ করে দিচ্ছেন, আগামীতে ইনশাল্লাহ দৌলতদিয়া- পাটুরিয়া পদ্মা সেতুও হবে। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ক্যারেজ করেন আমরা আপনাদের সাথে সহযোগিতায় আছি, তবে একটু লক্ষ্য রাখবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মানুষের বসতবাড়ি রক্ষা করে যতটুকু জমি অধিগ্রহণ করলে চলে, আপনারা ততটুকুই নিবেন। এটা আমার অনুরোধ। ভূমি অধিগ্রহণের পর সেই জমি যেন অপচয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আমার আরেকটা দাবী, সেটা হলো আমাদের একটা অডিটোরিয়াম করে দিবেন। এই অডিটরিয়াম হলে একদিকে ভাড়া দিয়ে আপনারাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন, অপরদিকে স্থানীয়রাও অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাবো। আরেকটা দাবি, ক্যারেজ হলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে, অনেক লোক লাগবে, কর্মসংস্থানে বাইরের লোক না নিয়ে আপনারা এই জেলার মানুষের কর্মের সুযোগ করে দিবেন। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের জায়গা জুড়ে সুইপার কলোনীর বসবাস, তারা দীর্ঘদিন সেখানে বসবাস করছে, তাছাড়া এতিমখানা, শহরের ইয়াসিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপুর্ন স্থাপনার যায়গা বাদ রেখে ক্যারেজ নির্মানের দাবী রাখেন।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে, রাজবাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এএফএম শাজাহান ও দাদশী ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন- আমাদের মৌজার ভূমি সরকারি মূল্য ২০ হাজার টাকা শতাংশ, সরকার যদি তিনগুণ দেয় তাহলে আমরা পাবো ৬০ হাজার টাকা শতাংশ, অথচ আমাদের ভূমি বেচা-কেনা হচ্ছে ২ লাখ টাকা শতাংশ, তাহলে তো আমরা জমির সঠিক মূল্য পাবো না বলে আপত্তি করেন তারা। এর জবাবে জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন- জমি কেনা বেঁচায় কম মূল্য দেখিয়ে এতদিন আপনারা সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে এসেছেন। যার কারণে মৌজার জমির দাম এখনো কম রয়েছে। এখন কিছু করার নাই, যেমন আছে তেমনই দাম পাবেন বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোছাঃ মোরশেদা খাতুনের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন- রেইলওয়ে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) ড.কুদরত ই খুদা, পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল মোরশেদ আরুজ, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমদাদুল হক বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত হোসেন সোহরাব প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রজেক্ট ডেপুটি টিম লিডার আব্দুল হালিম মিয়া, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আব্দুল লতিফ এবং প্রজেক্টের পরামর্শ দলের সদস্য মোঃ শাজাহান আলম ও রাজশাহী বিভাগীয়ও রাজবাড়ী রেলওয়ে কর্মকর্তাবৃন্দ, দাদশী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য মো. রাজা মোল্লা, প্রকল্পের আওতাধীন দাদশী ইউনিয়নের ভূমি মালিকগণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রেইলওয়ে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) ড.কুদরত ই খুদা রাজবাড়ীতে ক্যারেজ নির্মাণ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন– প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল হচ্ছে ১৬/১২ ২০২২ তারিখ হতে ৩০/৬/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক জরিপের মাধ্যমে প্রকল্পের সম্ভাব্য আওতাভুক্ত পুরাতন লোকোসেড সহ মৌজার মোট সংখ্যা ৭টি। সেগুলো হলো; নূরপুর, ছোটনূরপুর, বিনোদপুর, রঘুনাথপুর রামচন্দ্রপুর, সজ্জনকান্দা, ও কামলদিয়াকান্দি। এ সকল মৌজা থেকে ভূমি অধিগ্রহন করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি প্রয়োজন- সর্বমোটঃ ১০৫.৫৪৩২ একর। প্রকল্প প্রভাবিত এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের জমির পরিমাণ (GoB ) ( রেল আওতাধীন) জমি ৩৫.৬৮৩৩ একর, এবং বেসরকারী ব্যক্তি (মালিকানাধীন) জমি ৬৯.৮৫৯৯ একর। এছাড়াও প্রকল্প এলাকার মধ্যে আছে ৪৪৬টি পরিবার, যার মোট জনসংখ্যা ১৯৫৩ জন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যক্তি মালিকানা যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী মৌজার সরকারি মূল্যের তিন গুন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন; পশ্চিম অঞ্চলের রাজবাড়ীতে একটি নতুন ক্যারেজ ও ওয়াগন মেরামত কারখানা নির্মাণের ফলে রোলিং স্টকের নির্ভরযোগ্য ও টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ হবে যার ফলে যাত্রী ও মাল পরিবহন বৃদ্ধি পাবে। এই মেরামত কারখানার মাধ্যমে ২,০০০টি যাত্রীবাহী কোচ এবং ১,০০০টি মালবাহী ওয়াগনের রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে। ক্যারেজের ভিতরে একটি হাসপাতাল থাকবে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন সার্ভিস চালু, পায়রা বন্দর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা-মাওয়া- ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর এবং মধুখালী-মাগুরা রেল সংযোগ চালু হলে রাজবাড়ী একটি পরিবহন কেন্দ্রে পরিণত হবে।
প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন; বাংলাদেশ রেলওয়ের চলতি মজুদের গুণমান বৃদ্ধি করবে এবং যাত্রী ও মালবাহী ট্রাফিক আয়ের সম্ভাবনাময় বৃদ্ধি ঘটাবে। প্রকল্প নির্মাণকালে স্থানীয় জনগণের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। সড়ক পরিবহনের চাপ হ্রাস পাবে এবং জ্বালানী সাশ্রয়ের সাথে পরিবহন গতিশীলতার যথেষ্ট উন্নতি হবে, পাশাপাশি দুর্ঘটনা জনিত খরচও যথেষ্ট হ্রাস পাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে বিভাগের প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মূলধনের উপর রিটার্নের হার বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাপকভাবে আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজবাড়ী শহর একটি বড় ও আধুনিক রেলওয়ে শহরে রূপান্তরিত হবে বলেও তিনি জানান।