আজ : শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন! হুমকিতে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাধ


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ ,২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | আপডেট: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ ,২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন! হুমকিতে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাধ

উজ্জ্বল চক্রবর্ত্তী।। আজ দুইদিনে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় গত মাঝরাত থেকে হঠাৎই রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত তিন’শ মিটার এলাকা। হুমকিতে রয়েছে বসতবাড়ি, শহর রক্ষা বাধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি জমিসহ বহু স্থাপনা।

২৩ সেপ্টেম্বর-১৯ সোমবার সকালের দিকে গোদার বাজার এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়,সেখানে একের পর এক বড় বড় মাটির চাপ ভেঙ্গে পরছে নদীর নদীর মধ্যে। উৎসুক জনতা ভীর করে দেখছে নদী ভাঙ্গন। এ সময় দেখাযায়, গোদার এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম মস্তফার ইট ভাটার জায়গা-জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। শুধু জায়গাই নয় তার সাথে নদীতে চলে গেছে হাজার হাজার পাকা ইট। ভাঙ্গন রোধে বালির বস্তা ফেলার প্রস্তুতি চলছে।

ভাটার সহকারী পরিচালক আল আমিন মোস্তফা বলেন, হঠাৎ করে নদী ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় আমরা দিশে হারা হয়ে পরেছি। এরই মধ্যে আমাদের অন্তত ১৫ হাজার ইট নদীতে চলে গেছে। যেস্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে আর মাত্র ৫০ থেকে ৬০ গজ এলাকা ভাঙ্গলেই শহর রক্ষা বাধ ভেঙ্গে যাবে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহন না করলে ভয়ঙ্কর অবস্থার রুপ নিবে। প্লাবিত হয়ে যাবে রাজবাড়ী শহর।

নদীর পারে বসবাসরত প্রত্যক্ষদর্শিরা বলেন, নদীর শো শো শব্দে আমরা দুই দিন যাবৎ ঘুমাতে পারি না। কখন যেন আমাদের শেষ সম্বল বসত ভিটাটুকু নদী গর্ভে চলে যায়। তবে নদী থেকে বালি উত্তলোনের কারনেই এই নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে বলে তিনি বালি উত্তলোন বন্ধের দাবি জানান।

এ সময় অনেকেই অভিযোগ করে বলেন এই এলাকায় ভাঙ্গন রোধে সিসি ব্লকের কাজ হয়েছিলো,কিন্তু কাজে অনিয়ম হওয়ায় আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।

গতকাল রবিবার দুপুরে ভাঙ্গনের খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’ রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল ইসলাম ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি বলেন- রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে স্থায়ীবাধের মেরামত করার জন্য ৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। যা শুকনো মৌসুমে শুরু হওয়ার কথা। এখন হঠাৎ যেহেতু ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে আমরা জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আগামীকাল সোমবার থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হবে।
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন,এই ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাজবাড়ীর গোদার বাজার থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকার জন্য স্থায়ী প্রকল্প গ্রহন করা হবে। প্রকল্পটি পাশ হলে রাজবাড়ীবাসির নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক থাকবে না।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৪ই আগষ্ট-১৯ বুধবার রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী বলেছেন- পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে রাজবাড়ীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকীর মুখে। অথচ সদর উপজেলার জৌকুড়া ঘাট এলাকায় ড্রেজার দিয়ে কাটা হচ্ছে বালু। নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হলে বালু তোলা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন- আগামী বছর জৌকুড়া থেকে গোদার বাজার পর্যন্ত কোন বালু মহল ইজারা দেয়া হবে না। জেলা প্রশাসক এ ব্যবস্থা করবেন এবং তিনিও বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে কথা বলবেন। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সভায় যা আলোচনা করা হয়, তার কোন ফলোআপ করা হয়না, নেয়া হয়না কোন ব্যবস্থা। ফলে আলোচনা করে কোন লাভ হয়না। আগামীতে যেন এ অবস্থা না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ব বেড়েছে। তাদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার যোগ্যতা নির্নয় করা অত্যান্ত জরুরী।

এ সভায়, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম, সিভিল সার্জন ফজলুর রহমান সরকার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. ইমদাদুল হক বিশ্বাস, হেদায়েত আলী সোহরাব ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দসহ সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বলেন, হেলমেট ছাড়া কোন ব্যক্তি মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না। পুলিশ ভেরিভিকেশনের নামে পাসপোর্ট বাবদ টাকা নেয়ার বিষয়টি দেখা হবে।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এবারের সভায় যা আলোচনা করা হয়েছে, তার সব কিছুর ফলোআপ আগামী সভায় জানানো হবে। সেই সাথে যে সব বিষয়ে অভিযোগ এসেছে সে সব বিষয়ও ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

comments