স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে চলেছে পোড়ামাটির ইট
প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ ,১ এপ্রিল, ২০১৮ | আপডেট: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ ,১ এপ্রিল, ২০১৮
নিউজ ডেস্ক ।। পোড়ামাটির ইট উৎপাদন ও ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন’ সংশোধন করা হচ্ছে । এই ইটের বিকল্প হিসেবে ‘কংক্রিট ব্লক বা বিকল্প ইট’ উৎপাদন ও ব্যবহার করা হবে । ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ধারার পোড়া ইট উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । চলতি বছর থেকে সরকারি কাজে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হবে না ।
সরকারি নির্মাণকাজে বিকল্প ইট ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানুয়ারিতে সকল মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারের যে কোনো নির্মাণকাজে পোড়ামাটির ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে । গৃহনির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এইচবিআরআই) উদ্ভাবিত বিকল্প ব্লক ইট পরিবেশবান্ধব ও অর্থ সাশ্রয়ী । এই ইট ব্যবহারে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা কী ব্যবস্থা নিয়েছে- তা জানতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় । অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ কাজ গণপূর্ত বিভাগ করছে । ওই বিভাগকে ব্লক দিয়ে সব কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । তা ছাড়া গণপূর্ত বিভাগও এরই মধ্যে তালিকায় ১৮টি উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করেছে । সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগও দ্রুত তালিকায় ব্লক অন্তর্ভুক্ত করবে । কংক্রিট ব্লক হচ্ছে বালু বা পাথরের গুঁড়া ও সিমেন্টমিশ্রিত বিকল্পভাবে তৈরি ইট । এইচবিআরআই সূত্রে জানা যায়, পোড়ামাটির ইটের বিকল্প হিসেবে যথাযথ প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে ব্লক, থার্মাল ব্লক, ইন্টারলকিং ব্লক ও কমপ্রেসড স্টাবিলাইজড আর্থ ব্লক । এসব ব্লক দেশের বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিসরে তৈরি শুরু হয়েছে । পরীক্ষামূলক যশোরের কপোতাক্ষ নদের বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করা হচ্ছে ।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন নদীর বালু দিয়ে ব্লক ইট তৈরি হলে বাঁচবে কৃষিজমি; বন্ধ হবে পরিবেশদূষণ । ইটের চেয়ে ব্লকের ওজন কম হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম । সহজ প্রযুক্তিত, স্বল্প মূল্যে, স্বল্প শ্রমে এটা তৈরি করা যায় । এই ইট শব্দ ও তাপ নিরোধক, পরিবেশবান্ধব, ভূমিকম্প সহনীয় ও ব্যায় সাশ্রয়ী । ফলে এ ব্লক ব্যবহারে উদ্যোগ নিয়েছে এইচবিআরআই ।
পোড়ামাটির ইট তৈরিতে কৃষিজমি শেষ হয়ে যাচ্ছে । জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে প্রায় আড়াই হাজার কোটি পোড়ামাটির ইট তৈরি হয় । এতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টন মাটি ব্যবহার হয় । প্রতিবছর ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি হারিয়ে যাচ্ছে । আবার এই ইট পোড়াতে ৫০ লাখ টন কয়লা, ৩০ লাখ টন কাঠসহ বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে । আরেকদিকে, এই ইটভাটা থেকে দুই কোটি টন কার্বন নির্গত হচ্ছে । এ হিসাবে দেশে নির্গত মোট কার্বনের ২৫ শতাংশ ইটভাটা থেকে উৎপন্ন হচ্ছে । পরিবেশ সুরক্ষা এবং জমি বাঁচাতে ব্লক ব্যবহারে সবাইকে বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা হবে । অপরদিকে, দেশে ইটের যে চাহিদা পূরণে ৩০০ কোটি ব্লকের প্রয়োজন হবে । পাঁচটি ইটের চাহিদা মিটাবে একটি ব্লকে । একটি ব্লকে ব্যয় হয় ৩৫ টাকা । বর্তমানে প্রতিটি ইটের দাম ১২ টাকা । তুলনামূলক পোড়া ইটের চেয়ে ব্লকে উৎপাদন ব্যায় হয় ৪০ শতাংশ কম । দেশে বর্তমানে ১৬টি ব্লক কারখানায় ব্লক উৎপাদন হচ্ছে । এরই মধ্যে বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস ও গ্রিন ভিস্তা রিয়েল এস্টেটসহ কয়েকটি আবাসন কোম্পানি পোড়া ইট বন্ধ করে ব্লক ব্যবহার করে ভবন তৈরি করছে । পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে । ব্লক পরিবেশবান্ধব ও কৃষিবান্ধব । ইটভাটার কার্বন দূষণ বন্ধ হবে ।
‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন’ সংশোধনের জন্য খসড়া করা হয়েছে । এখন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে ।