আজ : মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোয়ালন্দে অসময়ে নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে এলাকাবাসী।


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ ,৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | আপডেট: ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ ,১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
গোয়ালন্দে অসময়ে নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে এলাকাবাসী।

স্টাফ রিপোটার।। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম এবং ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় থেমে থেমে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙনে এক মাসে প্রায় ১৪০ একরের মতো কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় ভাঙন বেশি দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পরে প্রায় ১০০টির মতো পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এছাড়াও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে তিনটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে ছোটভাকলার অন্তারমোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার জুড়ে কৃষি জমি ভাঙছে। মাঝেমধ্যে ভাঙনের মাত্রা বেশি দেখা যায়। নদীর পাড়ের অনেক জায়গা দেবে গেছে। শরিষা, ভূট্রা, উচ্ছে, টমেটোসহ নানা সবজি ও ফসল তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকেরা। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়ার অনিক শেখ বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় বেশি ভাঙে। এখন শুকনা মৌসুমে এসেও প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে বেশি ভাঙছে। এক মাসে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জমি বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙলে কিছুদিন পর কিছুই থাকবেনা। এক বছরে অন্তত ২০০ পরিবার অন্যত্র গেছে। এখনো অনেক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এখন আমরাও অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়ার সুফিয়া বেগম বলেন, “আমার তো বাবা অহন কিছুই নাই। প্রায় আড়াই বিঘা জমি ছিল, ঘর ছিল। গত বছর ভাঙনে সব শেষ হইয়া গেছে। অহন এলাকার একজনের বাড়িতে দুই ছাওয়াল নিইয়া আছি। যহন তাফাল (বাতাস) হয়, তহন বেশি ভাঙে। কয়েক দিন ধইরা খুব তাফাল ছুটছে”। দৌলতদিয়া ইউপির নতুন পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, বাহির চর দৌলতদিয়া, নাসির সরদার পাড়া, ঢল্লা পাড়া, দেবগ্রাম ইউপির কাওয়ালজানি ও দেবগ্রাম এবং ছোটভাকলা ইউপির চর বরাট, ছোটো জলো ও কাওয়ালজানি (আংশিক) ভাঙছে। দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, শুষ্ক মৌসুমেও নতুন পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, ঢল্লা পাড়া, বাহির চর দৌলতদিয়া ও নাসির সরদার পাড়ার মাথায় বেশি ভাঙছে। এক মাসে প্রায় ৫০ একরের বেশি কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। প্রায় ৫০টির মতো পরিবার ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ৫০০ পরিবার। নদী শাসনের কথা বার বার আলোচনায় আসলেও অগ্রগতি হয়নি। অবিলম্বে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে আরো অনেক ক্ষতি হতে পারে। দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, কাওয়ালজানি এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে ভাঙন আতঙ্কে অন্যত্র চলে গেছে প্রায় ৩০ পরিবার। এখনো ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। এছাড়া প্রায় ৫০ একরের মতো কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। ছোটভাকলা ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, চর বরাট, ছোট জলো ও কাওয়ালজানির আংশিক এলাকায় ভাঙছে। বর্ষা মৌসুমে বেশি ভাঙলেও বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙছে। ভাঙনে প্রায় ৪০ একরের মতো ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। আতঙ্কে সরে গেছে প্রায় ২০টির মতো পরিবার। ভাঙন ঝুঁকিতে আছে দুই শতাধিক পরিবার। এ বিষয়ে আমরা উপজেলার বিভিন্ন সভায় উত্থাপন করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, দৌলতদিয়া থেকে ছোটভাকলার অন্তারমোড় পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড় জড়ে অনেক কৃষি জমি ভাঙছে বলে শুনেছি। কি পরিমান জমি বিলীন হয়েছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে গত ৭ বছর আগে আবাদি কৃষি জমি ছিল প্রায় ৩৮০০ হেক্টর। এরমধ্যে বিলীন হয়েছে প্রায় ১৪০০ হেক্টর। এ সংক্রান্ত একটি তথ্য জেলার উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান বলেন, আমিও শুনেছি নদী ভাঙনের খবর। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে কিছু করনীয় থাকলে তাও করা হবে।

Comments

comments