পিরোজপুর মোল্লারহাট বাজারের বেইলি সেতুর বেহাল দশা, ভোগান্তির শিকার জনগণ
প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ ,৩ জুলাই, ২০২১ | আপডেট: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ ,৭ জুলাই, ২০২১
পিরোজপুর সংবাদদাতা-জাহিদ হাসান।। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মোল্লারহাট বাজারসংলগ্ন খালের ওপর বেইলি সেতুটি কয়েক বছর ধরে চলাচলের অনুপোযোগী ও জারাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর পাটাতনের প্লেটে রয়েছে অসংখ্য জোড়াতালি। কিছুদিন পরপর সেতুটির পাটাতন ভেঙে যায়। আবার মেরামত করা হয়।
চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন দূরপাল্লার বাস, ট্রাকসহ শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় আশঙ্কা করছেন বাস ও ট্রাকের চালকেরা।
পিরোজপুরের ২টি সড়কের ২৩টি জারাজীর্ণ বেইলি সেতু রয়েছে। এসব বেইলি সেতুর অধিকাংশ জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে মঠবাড়িয়া-চরখালী সড়কে তিনটি বেইলি সেতু মালবাহী ট্রাকসহ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের সওজ বিভাগের আওতায় চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কে ১৬টি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মঠবাড়িয়া-সাপলেজা-নলী খেযাঘাট সড়কে ৭টি বেইলি সেতু রয়েছে। এসব বেইলি সেতু আশি দশক ও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্থাপন করা।
চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলো হলো চৌহুরিয়া সেতু, বোতলা সেতু, বোতলা বাজার সেতু, ইকড়ি বাজার সেতু, ঝাউতলা বাজার সেতু, দেবীপুর মাদ্রাসা–সংলগ্ন সেতু, সাফা সেতু, তুষখালী সেতু, মাঝেরপুল সেতু, বহেরাতলা সেতু, মঠবাড়িয়া বাজার সেতু, থানাপাড়া সেতু, দফাদার বাড়ি সেতু, মোল্লারহাট সেতু, দক্ষিণ গুলিসাখালী সেতু ও সিএনবি সেতু। মঠবাড়িয়া-সাপলেজা-নলী খেয়াঘাট সড়কের থানা–সংলগ্ন কাচারিবাড়ি সেতু, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী কলেজ–সংলগ্ন সেতু, মোল্লাবাড়ি সেতু, ভাড়ানীখাল সেতু, সাপলেজা গুচ্ছগ্রাম সেতু, চরখগাছিয়া সেতু ও দক্ষিণ চরখগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সেতু।
সওজের সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৮ মার্চ বরিশালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেইলি সেতুগুলো সরিয়ে সেখানে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। তবে প্রকল্পটি এখানো বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ সেতুর পাটাতনের প্লেট ভেঙে ও ছিদ্র হয়ে গেছে। বহেরাতলা সেতু ও বাজার সেতু পাটাতনের প্লেট ভেঙে যাওয়ার পর জোড়াতালি দিয়ে সেতু যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। এ ছাড়া কাচারিবাড়ি সেতু, গুচ্ছগ্রাম সেতু, চরকগাছিয়া সেতু, দক্ষিণ চরখগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সেতু জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সেতুগুলোর পাটাতনের প্লেট ভেঙে গেছে। দক্ষিণ চরখগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সেতুর প্লেটে বড় বড় ছিদ্র হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ জুন গুদিঘাটা সেতু দিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক পার হওয়ার সময় সেতু ভেঙে ট্রাক খালে পড়ে যায়। এতে আসাদুল ইসলাম নামের ট্রাকের চালকের সহকারী নিহত হন। ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল বাঁশবুনিয়া এলাকায় লাল পোল বেইলি সেতু ভেঙে মালবোঝাই একটি ট্রাক খালে পড়ে যায়। ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট মাদারসী বেইলি সেতু দিয়ে পাথরবোঝাই ট্রাক পাড় হওয়ার সময় সেতুটি ভেঙে পড়ে। এসব সেতু ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
মঠবাড়িয়ার পরিবহনশ্রমিক মো. মাছুম বলেন, চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের সব বেইলি সেতু জরাজীর্ণ। এ পথে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ ১০ থেকে ১২ পথে প্রতিদিন বাস চলাচল করে। এ ছাড়া পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) মাছবাহী ট্রাকগুলো এ পথে চলাচল করে। সেতুগুলোর স্থানে জরুরি ভিত্তিতে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে যেকোনো সময় সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
পিরোজপুর সওজ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, বেশির ভাগ সেতু জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েকটি সেতুর পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেইলি সেতুর স্থলে পিসি গার্ডার সেতু তৈরির জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এলজিইডি মঠবাড়িয়া কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মো. জসীম বলেন, বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের আওতায় পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি অনুমোদন পেলে বেইলি সেতুর স্থলে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে।