আজ : রবিবার, ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বনাশের ৩/১ ভাগ ফেরত! প্রতারনার ঘটনায় রাজবাড়ীতে অনুষ্ঠিত সালিশে সিদ্ধান্ত


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ ,১১ আগস্ট, ২০২০ | আপডেট: ২:০০ পূর্বাহ্ণ ,১৩ আগস্ট, ২০২০
সর্বনাশের ৩/১ ভাগ ফেরত! প্রতারনার ঘটনায় রাজবাড়ীতে অনুষ্ঠিত সালিশে সিদ্ধান্ত

রাজবাড়ী প্রতিনিধি।। সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে এক হতদরিদ্র রাজমিস্ত্রীর কাছ থেকে সারে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রথমে থানায় অভিযোগ ও পরে অনুষ্ঠিত সালিশে বাদী-বিবাদীর বক্তব্য ও মোবাইলের কলরেকর্ড শুনে প্রমানিত হওয়ায় প্রতারককে ২ লাখ টাকা ২৫/৮/২০২০ইং তারিখে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সালিশী বোর্ডের সদস্যগণ। সিদ্ধান্তটি বাদী-বিবাদীগন উভয় পক্ষ মেনে নিয়েছে।

প্রতারকের পরিচয়- রাজবাড়ী জেলা সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের মোঃ রাজ্জাক মন্ডলের ছেলে জাহিদ ওরফে মেছের মন্ডল (৩৩)। এই জাহিদ/মেছের চাকরীর প্রার্থী রাসেলের সম্পর্কে মামাতো ভগ্নিপতি।

ভুক্তভুগীরা হচ্ছে- রাজবাড়ী জেলা সদরের দাদশী ইউনিয়নের সজ্জনকান্দা গ্রামের আমজাদ মন্ডল ও তার ছেলে রাসেল (১৯), সে চাকরির প্রার্থী। রাসেল প্রতারক জাহিদ/মেছেরের ফুপাতো শ্যালক।

গত ১০ আগষ্ট-২০২০ সোমবার বিকেল সারে ৪.টার দিকে রাজবাড়ী জেলা সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর বটতলা চৌরাস্তা বাজারে অবস্থিত পুলিশ বিটে সালিশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিস্তারিত, রাসেল মন্ডল (১৯) কে সেনাবাহিনীতে চাকুরি দেওয়ার নামে রাসেলের পিতা আমজাদ মন্ডল (রাজমিস্ত্রী) এর কাছ থেকে ৬লাখ ৫০হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক জাহিদ ৥ মেছের মন্ডল। চাকরি না হওয়ায়, প্রতারিত হওয়া রাসেলের পরিবারের সদস্যরা প্রতারক জাহিদ/মেছেরের বাড়িতে টাকা চাইতে গেলে জাহিদের পিতা মোঃ রাজ্জাক মন্ডল খারাপ ব্যাবহার করে আর প্রতারক জাহিদ/মেছের ভূক্তভুগী রাসেলের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় বার বার মিথ্যা অভিযোগ করে। যেখানে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভুগী পরিবারের অভিযোগ করার কথা, সেখানে প্রতারক-ই ভুক্তভুগী রাসেলের পরিবারের নামে উল্টো অভিযোগ করে। প্রতারিত হওয়া ভুক্তভুগী রাসেলের পরিবার উপায়ন্ত না পেয়ে ৬লাখ ৫০হাজার টাকা ফেরৎ পাইবার জন্য জাহিদ ওরফে মেছের ও তার পিতা মোঃ রাজ্জআক মন্ডলকে আসামী করে ভুক্তভুগী আমজাদ মন্ডল (৫০) বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন মজুমদার এই অভিযোগের তদন্তের দ্বায়িত্ব দেন রাজবাড়ী সদর থানার এসআই মুন্সি কামরুজ্জামান কে। পরে এসআই কামরুজ্জামান তদন্ত পূর্বক সমাধানের জন্য বাদী-বিবাদীর উভয় পক্ষকে সালিশে বসার প্রস্তাব দেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে সালিশী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশী বৈঠকে বাদী-বিবাদী ও স্বাক্ষীগনের বক্তব্য এবং মোবাইল কলরেকর্ডের শুনে প্রতারক জাহিদ ৥ মেছের মন্ডল ও তার পিতা মোঃ রাজ্জাক মন্ডল কতৃক চাকরীর প্রার্থী রাসেল মন্ডলের পিতা আমজাদ মন্ডলের নিকট থেকে ৬লাখ ৫০হাজার টাকা নেওয়ার বিষয় প্রমানিত হয়। অপরদিকে, প্রতারক জাহিদ ৥ মেছের মন্ডলের সাংসারিক অবস্থা ভাল না থাকায় ৬লাখ ৫০হাজার টাকা ফেরত দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব, এদিকটা বিবেচনা করে প্রতারক জাহিদ ও তার পিতা মিলে ভুক্তভুগী আমজাদ মন্ডলকে ২ লাখ টাকা ২৫/০৮/২০২০ইং তারিখে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সালিশী বোর্ডের সদস্যগণ।

অনুষ্ঠিত সালিশী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান পিয়াল, রামকান্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম বিশ্বাস, সালিশ বোর্ডের মিডিয়া ও রাজবাড়ী সদর থানার এস.আই কামরুজ্জামান (অভিযোগের তদন্ত অফিসার),  এস.আই আরবিকুল, এ.এস.আই সেলিম। এছাড়াও রামকান্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আহসান উল্লাহ, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মোক্তার মোল্লা, সহ স্থানীয় প্রায় দেড়শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিল।

সালিশি বোর্ডের সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ২৫/৮/২০২০ইং তারিখে বিবাদী (আসামী) পক্ষ বাদী পক্ষকে ২ লাখ টাকা প্রদান করিবে।

এ বিষয়ে, রাজবাড়ী সদর থানা অফিসার্স ইনচার্জ বরাবর করা অভিযোগসূত্রে জানাযায় যে, আমজাদ মন্ডল (৫০), পিতা- মৃত-করিম মন্ডল, সাং- সজ্জনকান্দা, ইউপি দাদশী, থানা ও জেলা- রাজবাড়ী, বাদী হয়ে জাহিদ ৥ মেছের (৩৩), পিতা- মোঃ রাজ্জাক মন্ডল, ২। মোঃ রাজ্জাক মন্ডল (৫৫), পিতা- হাকিম মন্ডল, উভয় সাং- রামকান্তপুর, থানা ও জেলা- রাজবাড়ীদ্বয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দ্বায়ের করে যে, ১নং আসামী সম্পর্কে আমার ভাগ্নি জামাই ।সে ঢাকাতে অবস্থান করিয়া গার্মেন্টেসে চাকুরী করে। মাঝে মধ্যে সে বাড়ী এসে বলে সে ঢাকার থাকায় বিভিন্ন বড় র‌্যাংকের আর্মি অফিসারের সাথে সু-সম্পর্ক আছে। ওই আর্মি অফিসারের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দিতে পারবে।

অপরদিকে, আমার ছেলে রাসেল (১৯)  এইচএসএসসি পরীক্ষার পর তার চাকুরীর সন্ধানকালে ১নং আসামী আমাদের বাড়ীতে এসে বলে, রাসেলের সেনা বাহিনীতে চাকুরী সে দিতে পারবে। আরো বলে অগ্রিম কোন টাকা লাগবেনা, নিয়োগপত্র হাতে দেওয়ার পর টাকা দিবেন। একদিকে আসামীদ্বয় আমার আত্নিয়, অপরদিকে টাকা অগ্রিম দেওয়া লাগবেনা, সেকারনে তার কথা বিশ্বাস করে ও ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসামীদ্বয়ের মাধ্যমে ছেলের চাকুরী দেওযার সিদ্ধান্ত নিয়া তাকে জানাইলে, ১নং আসামী বলে ৭,০০,০০০/= (সাত লাখ) টাকা হলে সে আমার ছেলে রাসেলকে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকুরী দিয়া দিবে, তার এমন কথায় টাকা দিতে রাজি হইয়া বলি, তাহলে টাকা তোমার হাতেনা, টাকা দেব তোমার বাবার হাতে।

১নং আসামী রাজি হয়। পরে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে ৬,৫০,০০০/-টাকা যোগাড় করিয়া ১নং আসামীকে জানাই। এর কয়েকদিন পর ০৮/০৭/২০১৯ইং তারিখ বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় আসামীদ্বয় সৈনিক পদে ভর্তির নিয়োগপত্র নিয়ে আমার বাড়ীতে এসে ঘরের বসিয়া ১নং আসামী  একটি নিয়োগ পত্র দেখাইয়া আমার নিকট থেকে ৬,৫০,০০০/-(ছয় লাখ পঞ্চাশ) টাকা গ্রহন করিয়া ১নং আসামী ২নং আসামীর নিকট উক্ত টাকা প্রদান করিলে ২নং আসামী টাকা গুরিয়া বুঝিয়ে নেয়। ১নং আসামীর দাবিকৃত বাঁকী ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা আমার ছেলে রাসেল চাকরিতে যোগদানের পর দেওয়ার কথা হয়। আসামীদ্বয় টাকা গ্রহনের পর সেই সময় আমার আমার ছেলেকে ০৬/০১/২০২০ইং তারিখে যোগদানের একটি নিয়োগপত্র প্রদান করে এবং বলে এই নিয়োগপত্র কাউকে দেখাতে নিষেধ করে। এরপর, গত ২৫/০৭/২০২৯ইং তারিখে ২নং আসামী আমাদের বাড়িতে এসে বলে নিয়োগপত্র ঢাকায় পাঠাতে হবে এবং প্রার্থীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট করাতে হবে। আমি তার কথায় বিশ্বাস করে আমার ছেলে রাসেলকে বাড়িতে ডেকে এনে উক্ত নিয়োগপত্র ২নং আসামীর নিকট প্রদান করি। ইতিপূর্বেই উক্ত নিয়োগপত্রের ছবি আমার ছেলের মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তুলে রাখে। এর কয়েকদিন পর ১নং আসামী আমার ছেলের ফোনে যোগাযোগ করে বাঁকী পঞ্চাশ টাকা চায়। ০৬/০১/২০২০ইং তারিখে যোগদানের বিষয়ে ১নং আসামীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে বলে চাকরি হবেনা টাকা মাইর যাওয়ার কথা বলে, আবার আমার নিকট থেকে টাকা গ্রহনের কথাও স্বীকার করে। যাহা মোবাইল ফোনে রেকর্ড ধারন করা আছে। ১নং আসামী বলে টাকা নিয়েছি কিন্তু চাকুরী দিতে পারবোনা আবার টাকাও ফেরত দিতে পারবোনা তোদের যা ইচ্ছে হয় তাই কর। আমার ছেলের চাকুরী না হওয়ায় পরবর্তীতে ২নং আসামীর নিকট টাকা ফেরৎ চাহিলে সে টাকা ফেরৎ দিতে অস্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে টাকা চাইলে আমাকেসহ আমার পরিবারে লোকজনকে খুন-জখম করা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করাসহ যে কোন ধরনের ক্ষতিসাধন করিবে বলে হুমকি দেয়। আসামীদ্বয় আমার ছেলের চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা গ্রহনের পর এখন চাকুরি না দিয়ে প্রতারনামূলকভাবে টাকা আত্নসাৎ করিয়াছে। ঘটনার বিষয়ে স্বাক্ষীঃ- ১। সোহান শেখ, ২। আইনাল শেখ, উভয় পিতা- আরশাদ শেখ, ৩। মোঃ আলাউদ্দিন শেখ ৥ স্বপন (৪৯), পিং মৃত- রজব আলী শেখ, সর্ব সাং ১নং বেড়াডাঙ্গা (চক কেষ্টপুর), থানা ও জেলা- রাজবাড়ীসহ আরো অনেকেই অবগত আছে।

Comments

comments