ডেস্ক নিউজ।। করোনা দূর্যোগে কর্মহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে নগদ ২,৫০০ টাকা প্রণোদনা দেওয়ার তালিকা তৈরিতে ৩০৬ জন ব্যাক্তির নামের বিপরিতে ঘুরে ফিরে রয়েছে ৪টি মোবাইল নম্বর। তালিকা তৈরিতে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ নামই চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যদের স্বজনদের।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ ২,৫০০ টাকা করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
১৪ মে-২০২০ বৃহস্পতিবার সকালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উদ্যোগের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার ৭৫ হাজার পরিবার নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে।
এর জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকা তৈরিতে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকায়, দিনমজুর ও শ্রমজীবীদের নাম থাকার কথা থাকলেও রয়েছে বিত্তশালি ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বজনদের নাম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়- টাকা মূলত মোবাইল ব্যাকিং সার্ভিস নগদ, বিকাশ, রকেট ও শিওরক্যাশের মাধ্যমে সরাসরি উপকারভোগী পরিবারের কাছে প্রেরণ করার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে তালিকায় উপকারভোগী পরিবারের মোবাইল নম্বর প্রেরণ করার কথা থাকলেও অনেকেই নিজের ও স্বজনদের মোবাইল নম্বর প্রেরণ করেছেন। অথচ লাখাই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের অনেক ওয়ার্ডেই একই মোবাইল নম্বর রয়েছে একাধিক উপকারভোগীর নামের পাশে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৭২০টি পরিবার পাচ্ছে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে সরকারি অর্থ সহায়তা। এর মধ্যে লাখাই ইউনিয়নে ১ হাজার ১৯৪ জন, মোড়াকরি ১ হাজার ১১৩, মুড়িয়াউক ১ হাজার ১৭৬, বামৈ ১ হাজার ২৪৬, করাব ১ হাজার ৬ ও বুল্লা ইউনিয়নে রয়েছেন ৯৮৫ জন।
তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মুড়িয়াউক ইউনিয়নে ৪টি মোবাইল নম্বর ব্যবহার হয়েছে ৩০৬ জনের নামের পাশে। এর মধ্যে ৯৯ জন উপকারভোগীর নামের বিপরীতে রয়েছে ০১৯৪৪-৬০৫১৯৩ মোবাইল নম্বরটি। এছাড়া ০১৭৪৪-১৪৯২৩৪ মোবাইল নম্বর রয়েছে ৯৭ জনের নামে, ০১৭৮৬-৩৭৪৩৯১ এ মোবাইল নম্বর ৬৫ জনের ও ০১৭৬৬-৩৮০২৮৪ মোবাইল নম্বর রয়েছে ৪৫ জন সুবিধাভোগীর নামের মধ্যে।
এদিকে, যদিও নির্দেশনা রয়েছে কোন উপকারভোগীর মোবাইল নম্বরে ব্যাংকিং সেবা না থাকলে প্রতিবেশি বা ওয়ার্ড সদস্যদের মোবাইল নম্বর দেয়া যাবে। কিন্তু একটি মোবাইল নম্বর ৬৫, ৯৭ বা ৯৯ জনের নামের পাশে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলার পশ্চিম বুল্লা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপকারভোগী বৃদ্ধা বলেন- ‘যারা জমি-জমা করেছে তাদের নাম রয়েছে নগদ অর্থ প্রাপ্তদের তালিকায়! কিন্তু আমি গরিব হলেও আমার নাম নাই। কারণ যারা তালিকা তৈরি করেছেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের নাম দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে মুড়িয়াউক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই বলেন- অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা তৈরির কারণে ভুল হয়েছে। এগুলো সংশোধনের কাজ চলছে।
লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, ‘তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব ওয়ার্ড ভিত্তিক ত্রাণ কমিটির। তালিকা তৈরি করার পরে শিক্ষকের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। শিক্ষকদের যাচাই বাছাই করার পরেও কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে মূল তালিকা থেকে তাকে বাদ দেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, তালিকা এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। একই মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যক্তির নাম থাকলে কেউই অর্থ সহায়তা পাবেন না। এছাড়া তালিকা চূড়ান্ত করে পাঠানোর পরও কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে ত্রুটি পাওয়া গেলে তা পুনরায় যাচাই হবে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই হবিগঞ্জ থেকে ১০০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৯ জন মোবাইলের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। বাকিরা পর্যাক্রমে পাওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্রঃ- যুগান্তর, জাগো নিউজ, বার্তা ২৪, ঢাকা লাইফ
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।