রাজবাড়ী প্রতিনিধি।। রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ ভাটার মালিকেরা কৃষি জমি খনন করে মাটি সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মাটি ভর্তি ট্রাক চলাচলে একটু বৃষ্টিপাত হলেই কাদা মাটিতে হয়ে যায় পাকা সড়কের বেহাল দশা।
৫ ফেব্রুয়ারি-২০২০ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক সড়ক দিয়ে ইট ভাটায় নেওয়ার সময় রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাওয়া মাটি বৃষ্টিতে ভিজে পুরো রাস্তা কাদাযুক্ত হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে। পিজ ঢালাইয়ের পাকা রাস্তা হলেও মনে হয় মাটির রাস্তা। এতে করে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
এমন জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হতে দেখা ঘেছে বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের কুড়িপাড়া পদমদী মীর মোশাররফ হোসেন সড়ক সহ জেলার আরো অনেক উপসড়কে। কথিত ভাটা মালিক সরকারী নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে কৃষি জমির মাটি ভাটায় ব্যবহার-তো-করছেই, আবার ভারি যানবাহনে ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়ার জন্য উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়কও ব্যবহার করে সড়কগুলো নষ্ট করছে। কিন্তু দেখছে না এ জেলার প্রশাসন।
গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারনে এ সড়কে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে। এছাড়াও রামদিয়া গান্ধিমারা সড়কে মাটি সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক গুলো সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটি ফেলে যাওয়ার কারনে কাঁদার সৃষ্টি হয়। এ কারনে এ সড়কেও যানবাহন চলাচল ঝুঁকি পূর্ন হয়ে পড়েছে। মাত্রা অতিরিক্ত মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাকগুলো সড়কে চলাচল করার কারনে পাঁকা সড়ক গুলো ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। রাজবাড়ী জেলায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মূখে। যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনেক।
*আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ইটভাটায় চলাচলের জন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবেনা। শুধু ইটই নয়, ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়া করা হয় এসব সড়ক দিয়ে। সব কাজই হচ্ছে বিদ্যমান সড়ক ব্যহার করে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। জেলার অনেক উপসড়ক ও রাস্তার বেহাল দশা হওয়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন। ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের জন্য দেশে একটি আইন আছে। কিন্তু আইন থাকলেও রাজবাড়ী জেলায় এ আইনের প্রয়োগ তেমন লক্ষ্য করা যায়না। এ জেলার ক্রমবর্ধমান ইটভাটা দেখে সে ধারণাই হয়।
উল্লেখ্য, সরকার ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। আইনে যেসব ক্ষমতা দেয়া আছে সেসব ক্ষমতা প্রয়োগ না করার ফলে আইনের এরকম বরখেলাপ চলছেই।
আইনে আছে, *জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা (৪ ধারা)। রাজবাড়ী জেলায় যেভাবে ইট ভাটা স্থাপন করা হচ্ছে তাতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদনের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আইনে আছে, *পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ। *এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)।কিন্তু বাস্তবেতো আমার দেখি অধিকাংশ ইট ভাটার জন্যই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট।
*৫(৩) ধারায় ইটের প্রস্তুত প্রণালীও বর্ণনা করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট (Hollow Brick) প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু আইনের এ বিধান মানছে কে?
আইনানুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি. কৃষি জমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। কিন্তু এ বিধানের কি পুরোপুরি প্রয়োগ হচ্ছে? দেখা যায়- বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে কোনো কোনো ইট ভাটা। রাজবাড়ী জেলা জুড়েই রয়েছে এরকম ইট ভাটা।
৬ ধারায় বলা হয়েছ, কোনো ব্যক্তি ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেনা। ভাটাগুলো অবাধে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে চলেছে, আইনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রয়োজনেই মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবকাঠামো স্থাপন করে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অবকাঠামো স্থাপন উন্নয়নেরও অংশ। অবকাঠামো নির্মানের জন্য ইট-পাথর-রড-সিমেন্ট ইত্যাদি অপরিহার্য। নি:সন্দেহে প্রয়োজনের খাতিরেই ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু একটি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে ইট ভাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এভাবে ইট ভাটা স্থাপনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনেক।
ইট ভাটা নিষেধ করা সম্ভব নয়, এর প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে উদ্বুদ্ধ ও বাধ্যতামুলক করা।
জনসাধারনের দাবি- পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে হবে। আইনানুযায়ীই ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।