জনতার মেইল ডেস্ক।। কর্তব্যরত অবস্থায় রাজবাড়ী সদর থানার এসআই আরিফজ্জামান আরিফের হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব, তারপর ঢলে পরে মৃত্যুর কোলে। এমন অকাল মৃত্যু শোক সইতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ওসি তদন্ত মোঃ আমিনুল ইসলাম তিনি তার ফেসবুক আডিতে লিখেছেন-
ভাই আরিফ, আসার কথা ছিল, কিভাবে আসলে ?
গতকাল রাত ১১.টার সময় আমার রুমে এসে বললো, স্যার আমার কোর্ট পিটিশন মামলার আবেদনটি লিখে দিবেন? আমি তাকে আজ দুপুর ১২ টার দিকে আসতে বলেছিলাম। আরিফ বললো, ঠিক আছে স্যার, ১২ টার দিকে আসবো।
সে কি আসলো? হ্যাঁ আসলো। তবে অন্যভাবে আসলো। সাদা কাপড়ে মোডানো, কোন গাছের তক্তায় পেরেক পিটানো কফিনে একটি নিথর দেহে। যার শ্বাস প্রশ্বাস নেই, চোখের পলক নেই। শুধু সেই অবয়বগত মলিনমাখা স্মৃতিপট। আজ চোখের সামনে ভেসে ভেসে বেড়ায়।
রাত তখন ৩.৪৫ মিনিট। মোবাইলের রিং টন আর দরজার কড়া নড়ার শব্দ। কে বলতেই, শুনি থানার মুন্সি কান্নাকন্ঠে বলছে স্যার, আরিফ স্যার নেই।
দরজা খুলে একই শব্দ। কিংকর্তব্যবিমূঢ।
মানা যায়? যায় না। নিজেকে সামলে নিলাম। মোটর বাইক নিয়ে হাসপাতালের দিকে গেলাম। ঐযে বললাম কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বড়পুলদিয়ে ঢুকে চলতে চলতে দেখি সামনে রেলপথ। ভুল। সবই ভুল। তাই ভুলপথে এসে গেলা। ঘুরে এবার হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালের সামনের গাড়িতে আরিফের নিথর দেহ। মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। বিধাতার নিয়ম। তাই মাফ করুন আল্লাহ।
এস,আই আরিফ। শুনলাম ছোট সময়ে বাবা মা মারা গেছেন। সংসারনামক যাতাকলের ঘানি টানতে, অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে মা,ভাই বোনকে সমাজে দাড় করাতে এলেন পুলিশের চাকুরীতে। চাকুরী জীবনে অল্প সময়ে দুইবার প্রমোশন পেয়ে বছর খানিক আগে এস,আই পদে উর্ত্তীন হয়েছে। বোনকে বিয়ে দিলেন, ভাইকে উপার্জনের পথে দাড় করিয়ে আজ নিজেই চিরদিনের মতো চলে গেলেন।
আরিফের দুটি মেয়ে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য দুই মাস আগে ফরিদপুরে ভাড়া বাসা নিয়েছেন। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করালেন বটে, কিন্তু নিজে আজ না ফেরার দেশে ভর্তি হয়ে গেলেন।
স্কুল থেকে ফিরে এই অবুঝ দুই বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে আর দেখতে পাবে না। বাবার পরশমাখা হাত, হাসি মাখা মুখ, ক্লান্তদেহে মাথা রাখার ঠাই পাবে না মেয়ে দুটো।
আর কখনো বলতে পারবে বাবা আমি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করেছি, এই পুরস্কার পেয়েছি। কেউ বলবে না দেখি আমার মামনির রেজাল্ট শিট। দেখি আমার সোনামনির প্রাইজখানা।
আসন্ন ঈদে বাবার হাতের নতুন জামে উঠবে না, বাবার সালামি পাবে না। হয়ত তারচেয়ে ভাল কিছু পাবে, কিন্তু বাবা তো বাবাই। বাবার মিষ্টিমুখ মিষ্টিহাসি আর কি আসবে।
সদ্য বিধবা স্ত্রী??? চোখের পানি গোপন আচলে মুছে কাদবে আনাবরত পাছে মেয়ে দুটো দেখে না ফেলে। কি স্বান্ত্বনা দিব আমরা? কি আছে ভাষা? আমরা পুলিশ। মানুষের সেবা দিতে আর ডিউটি করতে নিজের স্ত্রী সন্তানদের সময় তো দূরে থাক, ঈদ প্রাবনেও যেতে পারি না।
আমাদের ভাষা নেই। এই বাচ্চা দুটো আর সদ্য বিধবা স্ত্রীর শোকাহত জীবন সহ্য করার তৌফিক শুধুই বিধাতাই ক্ষমতা দান করুক। এর বাইরে কেউ যেতে পারে না।
আর যেতে হবে বা ভাই আরিফ। বড়ই বেদনা বিধুর করে দিলে ভাই। তোমাকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু তোমার স্মৃতি আমাদের ভালবাসায় থাকবে ভাই। তোমামে খুব মিস করিব রে। ভাল থাকবে ওপারে। আল্লাহ তোমায় জান্নাতবাসী করুন আমিন।
রাজবাড়ী সদর থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ আরিফুজ্জামান মিয়া (৩৮) গতরাত অনুমান ৩.৪০ ঘটিকার সময় ডিউটিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
মোঃ আমিনুল ইসলাম ওসি-তদন্ত রাজবাড়ী সদর থানার,রাজবাড়ী।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী সদর থানা এলাকায় নিয়মিত টহল ডিউটি করা অবস্থায় রোবিবার দিবাগত ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০২০ সোমবার রাত্র ৩.টা ৪০ মিনিটের দিকে হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করেন এসআই আরিফ। এসময় সহকর্মীরা দ্রুত তাকে রাজবাড়ী আধুনিকৃত সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থার অবনতি দেখে সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিতস্যক (সেকমো) আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুর রেফার্ড করেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে গোয়ালন্দমোড় পর্যন্ত গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।একইদিন সকাল ১০.টায় রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্স মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পরিবার পরি-জনের নিকট লাশ হস্তান্তর করে গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার আশাপুর গ্রামে পাঠানো হয়েছে। তার বাবার নাম তারা মিয়ার।
মৃত এসআই আরিফ ২০১৮ সালের ১০ জুলাই রাজবাড়ী সদর থানায় যোগদান করেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ছোট দুই’টি কন্যা সন্তান সহ আত্নীয় স্বজন রেখেগেছেন। তার এ অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সদর থানা পুলিশ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।