জনতার মেইল ডেস্ক।। যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। সব পাঁচ তারকা হোটেলেই ছিল পাপিয়ার এসকর্ট ব্যবসা। আলোচিত এই নারী হচ্ছেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ প্রচার করতেন সংরক্ষিত এমপি পদ পাচ্ছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিরও অপব্যবহার করতেন তার সব খারাপ কাজে। শুধু গত এক মাসেই এই নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনি।
সম্প্রতি- প্রতারণা, অবৈধ অর্থপাচার, জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ২২ ফেব্রুয়ারি-২০২০ শনিবার সকালে পালিয়ে দেশত্যাগের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামিমা নূর পাপিয়া (২৮) এবং তার স্বামী ও অপরাধের সহযোগী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯), ও শেখ তায়্যিবাকে (২২) আটক করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের জালনোট, ৬০০ ভারতীয় রুপি ৩১০, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ইউএস ডলার এবং সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
শুরুতে পাপিয়া প্রথমে নিজের দাপুটে অবস্থানের পরিচয় দেন। তবে কোনো কিছুতে গুরুত্ব না দিয়ে পাপিয়ার কাছ থেকে র্যাব কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে থাকেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘২০১৯ সালের নভেম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি ভাড়া নেন পাপিয়া। গত ৩ মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায় গত ৩ মাসে তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষকে।’ - কথাগুলো বলছিলেন র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। গতকাল শনিবার বিকেল ৫.টায় কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ সব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
২৩ ফেব্রুয়ারি-২০২০ রবিবার র্যাব-১-এর একটি বিশেষ দল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় পাপিয়া-সুমন দম্পতির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের বাসা থেকে বিদেশি অস্ত্র, ম্যাগজিন, গুলি, বিদেশি মদ ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ কথা জানান- র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম।
জানা গেছে, এই পাপিয়া হেন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে জড়িত নন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এরই মধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন র্যাব কর্মকর্তারা। গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত একটি হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটে তার নামে পাওয়া গেছে। এই পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন মেয়েকে পাপিয়া নিজেই নিয়ে যেতেন। তাদেরকে দিয়ে করাতেন অবৈধ দেহব্যবসা। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছুই কবুল করেছেন পাপিয়া।
নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী যারা তার অনুসারী তারা ‘কিউ অ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। মাস্টারমাইন্ড সুমনের সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।