গোয়ালন্দে চিটিংবাজী করে কোটি পতি-নাম বদলানোর চেষ্টা
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ ,২৪ এপ্রিল, ২০১৮ | আপডেট: ১:০০ পূর্বাহ্ণ ,২৪ এপ্রিল, ২০১৮
বিশেষ প্রতিনিধি ।। রানা প্লাজার মিথ্যে উদ্ধারকর্মি সেজে সরকারী/বে-সরকারী অনুদান হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকারও বেশী । বিগত দিনে বিভিন্ন সময় একাধিক গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেও হয়নাই কোন তদন্ত ।
২০১৩ সালে ২৪শে এপ্রিল দেশের সবচেযে বড় আলোচিত দূর্ঘটনা ঘটে রানা প্লাজায় । আর এই রানা প্লাজার ভবন ধসে সহস্রাধিক ব্যাক্তি প্রান হারান, পঙ্গুতবরন করেন অগনিত মানুষ, এতে নাড়া দেয় বিশ্ব বিবেক । ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ান দেশ বিদেশের বিত্তবানরা ।
ঘটনাক্রমে একদিন রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলৎদিয়া ধল্লাপাড়া গ্রামের মাইন উদ্দিন মাষ্টারের বাড়ির সামনে পাকুড় গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মো. ইউনুছ আলী সরদার ওরফে ইউনুছ মেম্বর । চিকিৎসা দিতে প্রথমে তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালের সন্ধ্যা ৬.টায় ভর্তি করা হয়, যার রেজি নং-২৮৫০/২৮ । পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনকয়েক চিকিৎসা দেওয়ার পর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয । ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) তখন ‘রানা প্লাজায়’ দূর্ঘটনায় আহত রোগিদের চরম আর্তনাদ চলছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে আহতদের ভিরে নিজেকে রানা প্লাজার উদ্ধার কর্মি পরিচয়ে ঢামেকে ৩ দিন চিকিৎসা নেন । পরে বিজিএমই এর তত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনুছ সরদারকে ঢাকা এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেখানে ২৫/২৬ দিন চিকিৎসার পর তাকে সাভার সিআরপি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানে তার চিকিৎসা চলে টানা ১৭ মাস । তার চিকিৎসা বাবদ বিজিএমই এর খরচ হয় ৯/১০ লাখ টাকা । ইউনুছ এতে প্রানে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত বরন করেন সারা জীবনের জন্য । রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় আহত হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদান করেন ১০ লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাক্তি সংগঠন থেকে পান ১৮ লাখ টাকা, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থা থেকে সাহায্য গ্রহন করেন (প্রায় ৯০ লাখ টাকা) বিপুল পরিমান অর্থ । ঢাকা ছেড়ে বাড়ি ফিরে এসে অনেক টাকা ব্যায়ে নির্মান করেন বসত বাড়ী । ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে নিজের নাম বদলানোর জন্য ব্যার্থ চেষ্টা করেন । যৌতুক ও আনুষঙ্গিক মিলে অন্তত ১৩-১৪ লাখ টাকা খরচ করে পর্যায়ক্রমে দুই মেয়ের বিবাহ দেন । সুদে টাকার কারবার শুরু করেন, মাঠে অনেক জমি ক্রয় করেন এবং কট (গিরপি) হিসেবেও জমি রাখেন অনেক, গড়ে তোলেন গরুর খামার । বর্তমানে গোয়ালন্দ উপজেলা সংলগ্ন তিন তালার ফাউন্ডেশন দিয়ে ৩০লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ভবন নির্মান করছে ।
প্রতারনার মাধ্যমে দরিদ্র ইউনুছের জীবনে ফিরে আসে স্বচ্ছলতা, সেই সাথে পরিচিতি লাভ করেন এলাকার সবচেয়ে ধনি ব্যাক্তি হিসেবে । টাকার গরমে দেবগ্রাম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তার স্ত্রী ঝর্না বেগম । প্রতারক ইউনুছ সরদার বর্তমানে বিছানায় শুয়ে ও হুইল চেয়ারে বসেই সালিস বিচার করে থাকেন গ্রামের মাতুব্বর হিসেবে । তার দেখভাল করার জন্য ১০/১২ হাজার টাকা সরকারী বেতনে একজন লোক নিয়োগ দেওয়া ছিল । সত্য ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে সে লোকটিকে দেখভাল করার চাকরি হতে তাড়িয়ে (অব্যাহতি) দিয়ে নিজের আপন ভাইকে রেখে দেন ।
স্থানীয়রা, হঠাৎ এই বাড়ী নির্মান, নিজের নাম বদলানোর চেষ্টা, ১৩-১৪ লাখ টাকা খরচ করে পরাপর দুই মেয়ের বিবাহ, সুদে টাকার কারবার, মাঠে অনেক জমি ক্রয়, গরুর খামার করা দেখে সবাই হতভম্ব । বর্তমানে গোয়ালন্দ উপজেলা সংলগ্ন তিন তালার ফাউন্ডেশন দিয়ে ৩০লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ভবন নির্মান করছে । টাকার গরমে আত্নিয়-স্বজনদের অবহেলা করায় প্রায় সকলের সাথেই সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে ।
কোটিপতি ইউনুছ আলী সরদার গাছ থেকে পরে আহত হওয়ার আগেও ছিলেন দেবগ গ্রাম ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ড সদস্য, ফৌজদারী ও একাধিক নারী নির্যাতন মামলার আসামী, পরকীয়া ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে বেড়াতেন, নিজ স্ত্রী ঝর্না বেগমকেও করতেন নির্যাতন ভাত-কাপড়ে অনেক কষ্ট দিয়েছেন । তখনকার সময় নুন আনতে পানতা ফুড়াতো, চালচুলো বলে তেমন কিছুই ছিলনা । ঘরের চাল দিয়ে ঢুকতো রোদ-বৃষ্টি । কিন্তু ৫ বছর পূর্বে গাছ থেকে পড়ে পঙ্গু হওয়ার পর হঠাৎ আমুল বদলে গেছে তার, সে এখন দৌলৎদিয়া ইউনিয়নের নুরু মন্ডল পাড়ার/গ্রামের একজ ধনি ব্যাক্তি । এ বিষয় নিয়ে এলাকায় তোলপাড় ও কানা ঘুসা শুরু হয় ।
যার দরুন এই ঘটনাটি, সর্ব প্রথম সাংবাদিক রিয়াজুল করিম এর নজরে আসে । বিষয়টি [২৪ এপ্রিল-১৩ কারও ভাগ্যের দূর্গতি-করও ভাগ্যের উন্নতি, গোয়ালন্দের ইউনুছ মেম্বার রানা প্লাজার ভুয়া উদ্ধার কর্মি] এ শিরেনামে ২ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে ”বাংলাদেশের পত্র ডট কম” নামে অনলাইন পত্রিকায় এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে খবরটি প্রথম প্রকাশ পায় । সাংবাদিক রিয়াজুল করিমের সহযোগিতায় পরবর্তিতে ঢাকা থেকে আগত চ্যানেল ২৪ এর ষ্টাপ রিপোর্টার মাকসুদুর রহমানের মাধ্যমে ২০শে এপ্রিল ২০১৬ তারিখে চ্যানেল ২৪ টিভিতে, পুনরায় খবরটি প্রকাশ হওয়ায় এলাকায নতুন করে তোলপার সৃষ্টি হয় । পরে ৭১সংবাদ.কম সহ আরো অনেক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ পায় ।
সরেজমিনে গেলে স্থনীয়দের মধ্যে দেবগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার বলেন, ইউনুছ সরদার (সাবেক ইউপি মেম্বার) । রানা প্লাজার দূর্ঘটনার দিন দৌলৎদিয়া মাইন উদ্দিন মাষ্টারের বাড়ির সামনে পাকুড় গাছ থেকে পড়ে, আমি তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে ভর্তি করি, পরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তাকে ফরিদপুর নিয়ে যায়, তার পর কি হয় আমার আর জানায় নাই, তিনি আরো বলেন ঘটনার সত্যতা বলায় আমার হুমকি ধামকি দিচ্ছে ।
জাফর শেখ, ছালাম ফকীরসহ আরও অনেকেই বলেন, আপনারা নতুন করে এ খবর লিখে কি করবেন ? এর আগে তো অনেক খবরের কাগজে ও টিভিতি দেখলাম এ পর্যন্ত কোন তদন্তই হলো না, মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারী সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিচারের দাবি জানাই ।
ইউনুছ সরদারে সাথে দেখা করলে তিনি কথা বলতে নারায । কিন্তু তার স্ত্রী ঝর্না বেগম বলেন, দয়া করে এই ঘটনা আর লিখবেন না, এক প্রশ্নের জবাবে বলেন টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হা করে, তদন্তে আসলে বা পুলিশ আসলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করবো, সরকারি টাকা খাইতে যোগ্যতা লাগে, আমরা সরকারি টাকা খাইছি তাতে মানুষের কি? সাংবাদিকরা আমার পেছনে লেগেছে, এ নিয়ে যদি কিছু হয় তাহলে টাকা চাওয়ার অভিযোগ এনে সাংবাদিকরে নামে মামলা করবো ।
কে এই মো. ইউনুছ আলী সরদার ওরফে ইউনুছ মেম্বর ?
রানা প্লাজার মিথ্যে উদ্ধারকর্মি সেজে সরকারী/বে-সরকারী কোটি টাকা অনুদান হাতিয়ে নিয়ে সে আজ রাজা বনেছে । এক সময় নুন আনতে পানতা ফুড়াতো, চালচুলো বলে ছিলনা কোন কিছু, আজ ধনে-বনে বনেছে । বর্তমানে গোয়ালন্দ উপজেলা সংলগ্ন তিন তালার ফাউন্ডেশন দিয়ে ৩০লাখ টাকা ব্যায়ে একটি ভবন নির্মান করছে । তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন, রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেথুরী গ্রামের আঃ লতিফ সরদারের ছেলে মোঃ ইউনুছ আলী সরদার (সাবেক মেম্বার) । বর্তমানে সে দৌলৎদিয়া ইউনিয়নে নুরু মন্ডলের পাড়া (ক্যানালঘাট)নিজ বাড়িতে বহাল তরিয়াতে বসবাস করছেন ।