আজ : বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৌলতদিয়া ঘাটে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ ,১২ মার্চ, ২০১৯ | আপডেট: ১০:১৪ অপরাহ্ণ ,১৩ মার্চ, ২০১৯
দৌলতদিয়া ঘাটে হিজড়াদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি

গোয়ালন্দ সংবাদদাতা।। দেশের ব্যাস্ততম গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একদল হিজড়া। এরা সিরিয়ালে আটকে থাকা দুরপাল্লার যানবাহনের যাত্রীদের নাজেহাল করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে আসছে। এছাড়া হিজড়ার দল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী চলন্ত ফেরিতেও প্রতিনিয়ত দিচ্ছে হানা।

চাঁদার দাবীতে তারা চিৎকার-চেঁচামেচি ও অশ্লীল গালিগালাজ করতে থাকে। কোন কোন সময় তাদের কেউ কেউ নিজেরা বিবস্ত্র হয়ে মানুষকে লজ্জারমুখে ফেলে নাজেহাল করে টাকা আদায় করে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায় না। যে কারণে তারা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অনেকেই বলেন, হিজড়াদের টাকা তোলার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করে থাকেন। এ সুযোগে হিজড়াদের টাকা তোলা এখন জোড়পূর্বক চাঁদা আদায়ে পরিণত হয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে দুরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহন প্রায়ই দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থাকে। এসকল পরিবহনের যাত্রীরা হিজরাদের দ্বারা নাজেহালের শিকার হন। অনেকেই তাদের হাতে অপমানিত হওয়ার ভয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য হন। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলেও হতে হয় অপমানিত। এদের চাঁদাবাজির ছবি তুলতে গিয়ে ইতিমধ্যে এক সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এছাড়া ফেরিতে নদী পারাপারের সময় প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, তিনি তার প্রাইভেট কারে ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে ফিরছিলেন। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে উঠে তিনি তার গাড়ীতেই বসে ছিলেন। এসময় একদল হিজড়া তাদের হাতে থাকা আংটি দিয়ে বিশেষ কায়দায় গাড়ির গ্লাসে আঘাত করে। দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসা তার এক আত্মীয় মান রক্ষার্তে তাদের হাতে ১শ টাকা দিয়ে তাদের বিদায় করে। এরপর তারা ঘুরে এসে তার পাশের জানালার কাঁচে একই ভাবে আঘাত করতে থাকে। তখন মনে হচ্ছিল হয়ত কাঁচটি ভেঙেই যাবে। এসময় তিনি বিরক্ত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে ধমক দিলে তারা চিনতে পেরে কিছুটা চেপে যায়। এভাবে দুর-দুরান্তের সাধারন মানুষকে হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে হিজড়ারা বলে তিনি জানান।

সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা সাকুরা পরিবহনের একটি বাস ৩/৪ ঘন্টা সিরিয়ালে আটকে থেকে দৌলতদিয়া ২নং ঘাট জিরো পয়েন্টে সিরিয়ালে থাকা বাসটিতে হানা দেয় একদল হিজড়া। বাসের প্রায় সকল যাত্রী অপমানিত হওয়ার ভয়ে দ্রুত তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে থাকে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসের সিটে বসে ছিলেন মেহেদী হাসান নামের এক যাত্রী। কোলে তার শিশু সন্তান। তার টাকা বের করতে একটু দেরি হওয়াতে তাকে আজেবাজে কথা বলতে শুরু করে হিজড়া। দীর্ঘ সময় গরমের মধ্যে বসে থাকায় বিরক্ত হয়ে তিনিও তাদের দুএকটি কথার জবাব দেন। এতে হিজড়ারা তাকে শারীরিক ভাবে লঞ্চিত করতে উদ্যেত হয়। এসময় পাশে থাকা তার স্ত্রী দ্রুত তাদের চাহিদামত টাকা দিয়ে স্বামীকে হিজড়াদের হাত থেকে রক্ষা করে। এ ধরনের ঘটনা দৌলতদিয়া ঘাটে অহরহ ঘটে থাকে। একই ভাবে পাটুরিয়া ঘাটেও সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে হিজড়ার দল টাকা আদায় করে থাকে।

পরিচয় গোপন রেখে হিজড়াদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, তাদের অস্থায়ী বসবাস দৌলতদিয়া পোড়াভিটায়। বেশীর ভাগেরই বাড়ি নাটোর ও ঝিনাইদহ জেলায়। মাহিয়া মাহি নামের স্থানীয় একজন হিজড়া তাদেরকে দৌলতদিয়া ঘাটে এনেছেন। এর বিনিময়ে তাকে প্রতিদিন জনপ্রতি দিতে হয় ৫শ টাকা। এর বেশী প্রশ্ন করলে তারা আর কোন উত্তর দিতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার চন্দন কুমার মিত্র বলেন, গোয়ালন্দে নিবন্ধিত কোন হিজড়া নেই। তবে জেলায় হিজড়াদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় এটা চাঁদাবাজি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তবে তা অত্যাচারের পর্যায়ে গেলে অবশ্যই এই তৎপরতা বন্ধ করা হবে।

Comments

comments