স্টাফ রিপোর্টার।। অফিসে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন। বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাতে কিংবা আইনি পরামর্শের জন্য। এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আইন শৃঙ্খলাসংক্রান্ত নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করে।
সে হিসেবে সবাইকে সব বিষয়ে সহায়তা করা সম্ভবপর হয় না। তবে আজকে খুব সকালে একজন বয়স্ক মহিলা অফিসে এসেছিলেন অন্য সকলের মতই ‘ন্যায় বিচারের’ প্রত্যাশায়।
তাকে চাচি বলে সম্বোধন করে আমার সামনের চেয়ারে বসতে দিলাম। তার অভিযোগ খুব মনযোগ দিয়ে শুনে যা বুঝলাম তা হলো- এই চাচির বাড়ি শরীয়তপুর জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে।
তার ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছে অনেক আগেই। মেঝ ছেলে- যার বিরুদ্ধে ১০টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। প্রায় নয় মাস আগে গাজীপুরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ মারা যায়।
এই কিন্তু এই ‘বোকা মা’ কোনো কিছুতেই মানতে নারাজ যে তার ‘নামাজি’ ‘কোরান পাঠ’ জানা ‘সোনা জাদু’ এইভাবে মারা যেতে পারে। তার মত, নিশ্চয়ই স্থানীয় কেউ ‘ষড়যন্ত্র’ করে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে।
যারা তার ‘বুক খালি’ করেছে, তিনি সেই স্থানীয় ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চান।
আমার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু অন্য জায়গায়- তা হলো একটা ছেলের নামে ১০টা ডাকাতি মামলা থাকলে আমরা সাধারণত তাকে ‘ভাল মানুষের’ তালিকায় রাখি না।
কিন্তু এই অবুঝ মা কোনভাবেই বুঝতে চায় না তার ছেলেটা ‘ভাল মানুষের’ তালিকার বাইরে।
হায় রে মায়ের জাত!!! সৃষ্টিকর্তা তোদের মনটা কি দিয়ে গড়েছে ? সন্তানদের তোরা এত বেশি ভালবেসে অসীম ঋণী করিস কেন? কোন স্বার্থে?
যাই হোক, এই ‘বোকা মা’ অনেক ভোর বেলা বাড়ি থেকে এসেছে না খেয়ে। তাই সাধ্যমতো ডালভাতের ব্যবস্থা করলাম। গতকাল একজন শুভাকাঙ্ক্ষী কিছু মিষ্টি দিয়েছিল, সেগুলো ফ্রিজে ছিল। মা চলে যাওয়ার সময় তার হাতে পুরা মিষ্টির প্যাকেটটি ধরিয়ে দিলাম। আচলে চোখ মুছতে মুছতে মা বললেন-ছেলে মারা যাওয়ার পর আর মিষ্টি খাওয়া হয়নি।
মা কে ‘কপট হাসিমুখে’ বিদায় দিয়ে নিজের চোখের কোনটা ভিজে যাওয়ার কারণ নির্ণয়ে মনযোগী হলাম- ‘হয়ত চোখে ময়লা পরেছে’।
লেখক: অধিনায়ক, মাদারীপুর ক্যাম্প, র্যাব-৮ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।