ট্রেন যাত্রীকে ইয়াবা দিয়ে ফাসানোর হুমকি দিল রাজবাড়ী জিআরপি পুলিশ আকসাদুর
প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ ,২১ নভেম্বর, ২০১৮ | আপডেট: ৮:৩০ অপরাহ্ণ ,২১ নভেম্বর, ২০১৮
রাজবাড়ী প্রতিনিধি।। রাজবাড়ী রেলওয়ে পুলিশ কতৃক ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলার দৃশ্য মোবাইলে ধারন করায় এক যাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ ‘ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো’র হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়াগেছে রাজবাড়ী জি.আর.পি থানার এক এএসআই ( সহকারী উপপরিদর্শক ) আকসাদুরের বিরুদ্ধে।
ওই এএসআই অভিযোগ অস্বীকার করলেও ট্রেনের কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) জানিয়েছেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের হয়ে’ ভাড়া তুলছিলেন পুলিশ সদস্যরা। শুধু তাই নয় তারা প্রতিনিয়তই ভাড়া তোলেন।
ঘটনার বিবরনে জানা যায় যে, ২১ নভেম্বর-১৮ বুধবার সকাল পৌনে ১০.টার দিকে ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ভাটিয়াপাড়াগামী ‘ফরিদপুর এক্সপ্রেস’ মেইল ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত রাজবাড়ী জিআরপি থানায় কর্মরত এএসআই আকসাদুরের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বড় ভবানীপুর গ্রামের রাফেজুর রহমান রানা। রাজবাড়ী জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে খলিফা পট্টিতে ‘রানা ইলেকট্রনিক্স’ নামে একটি দোকান রয়েছে তার।
লাঞ্ছিত যাত্রী রাফেজুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী শহরে যাওয়ার জন্য বসন্তপুর রেলস্টেশন থেকে ফরিদপুর-ভাটিয়াপাড়াগামী ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করি। বসন্তপুর স্টেশনে টিকিট কাটার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের ট্রেনে উঠে ভেতরে ভাড়া দিতে হয়। প্রতিদিনই দেখি জিআরপি পুলিশ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা তুলে থাকে। আজও ভাড়া তুলছিল, এ সময় আমি মোবাইলে পুলিশের ভাড়ার টাকা তোলার দৃশ্য ধারণ করি। ভিডিও করার একপর্যায়ে এএসআই আকসাদুর ও তার সঙ্গে থাকা একজন কনস্টেবল আমার মোবাইলটি কেড়ে নেন। আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং আকসাদুর আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, ‘ভিডিও ডিলিট কর, নইলে তোকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেবো।’ পরে অন্য যাত্রীদের তোপের মুখে ওই ট্রেনের অন্য বগিতে থাকা টিটিই এসে আমাকে দিয়ে ভিডিওটি ডিলিট করিয়ে মোবাইলটি ফেরত দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন যাত্রীরাও প্রায় একই অভিযোগ জানান। তারা বলেন, পুলিশের টাকা তোলার ভিডিও করলে ওই যাত্রীকে পুলিশ চড়-থাপ্পড় দেওয়াসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও দেয় এক পুলিশ। পরে সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে অন্য বগি থেকে টিটিই আসেন আমাদের বগিতে। তিনিই ওই যাত্রীর মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করান এবং মোবাইলটি ফেরত দেন ওই যাত্রীকে।
এ প্রসঙ্গে, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আকসাদুর বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলার এখতিয়ার আমাদের নেই, সেটা ঠিক আছে। তবে টিকিট চেকিংয়ের সময় আমরা টিটিই’র সঙ্গে থাকি। যিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি মিথ্যা বলেছেন। তবে একটা কথা ঠিক- তিনি ট্রেনের মধ্যে আমাদের একটি ভিডিও ধারণ করেছিলেন। সেটি টিটিই ডিলিট করে তার মোবাইলটি দিয়ে দেন। আর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ প্রসঙ্গেটা মিথ্যা বলে দাবি করেন এএসআই আকসাদুর।
এ প্রসঙ্গে, ট্রেনে কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে পুলিশের টাকা তোলার কোনো নিয়ম নেই। এই ট্রেনে টিকিট বিক্রি করে ভাড়ার টাকা উঠানোর দায়িত্ব একমাত্র আমার। তবে একার পক্ষে সব যত্রীর ভাড়া আদায় সম্ভব হয় না। তাই পুলিশ কিছু বগিতে ভাড়ার টাকা ওঠায়। তারা কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা আমার কাছে জমা দেয়। তিনি আরো জানান, আজকে বগিতে যে ঘটনাটি ঘটেছে, ওই বগিতে আমি ছিলাম না। পরে আমি গিয়ে ঘটনা জানতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশের ভাড়ার টাকা তোলার বিষয়ে অনেকে যাত্রীই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আপনারা বিষয়টি রেলওয়ে থানার ওসি সাহেবকে জানান।’
এ প্রসঙ্গে, রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রেনের মধ্যে যাত্রীদের টিকিট আছে কি নেই, সেটি দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। যদি পুলিশ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার নামে টাকা তুলে থাকে, তাহলে তারা অন্যায় করেছে। ওই যাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করে থাকলে সেটাও ঠিক হয়নি। তদন্তপূর্বক যদি ঘটনার সত্যতা মেলে, তাহলে এএসআই আকসাদুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।