স্টাফ রিপোর্টার।। চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র নাহিদ হাসান মৃদুল(১৬) হত্যা মামলায় রায়ে ১ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৪ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ২ জনকে বেকসুর খালাসের আদেশ প্রদান করেছেন রাজবাড়ীর আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫শে আগস্ট-২২) দুপুরে রাজবাড়ীর জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমীন তার বিচারিক আদালতে এ আদেশ প্রদান করেছেন।
এছাড়াও রায়ে বিজ্ঞ আদালত মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর ৪ জনের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ের আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন।
মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী হলো- রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের ছালাম মন্ডলের ছেলে রুবেল মন্ডল(২৯)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৪ জন হলো- রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের কামালদিয়াকান্দি গ্রামের খলিল মন্ডলের ছেলে রাফিজুল মন্ডল(৩৪), রামকান্তপুর ইউনিয়নের বড় মুরারীপুর গ্রামের হান্নান সরদারের ছেলে পিয়ারুল সরদার(২৯), কালুখালী উপজেলার বাস্তখোলা গ্রামের মাছেমের ছেলে রায়হান(২৯) ও রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা গ্রামের (সদর হাসপাতালের পিছনে) রাজ্জাক উদ্দিন বিশ্বাস ওরফে টাবলু’র ছেলে রাহাত বিশ্বাস ওরফে পিয়াল(২৮)।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে রায়হান ও পিয়াল পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে রায়হান ঘটনার পর থেকেই পলাতক এবং পিয়াল গ্রেফতার হওয়ার পর কিছুদিন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছে।
খালাসপ্রাপ্ত ২ জন হচ্ছে- রাজবাড়ী শহরের ২ নং বেড়াডাঙ্গার গোলাপ আলী ফকিরের ছেলে ফরিদ(৩৫) এবং সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের রমজানের ছেলে এলেম(২৮)।
আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘অভিযুক্ত আসামী রুবেল মন্ডলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করতঃ উক্ত ধারায় বর্ণিত মৃত্যুদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হলো। এই আসামীর মৃত্যুদন্ডাদেশ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
অভিযুক্ত (১) পিয়ারুল, (২) রাহাত বিশ্বাস ওরফে পিয়াল (পলাতক), (৩) রাফিজুল মন্ডল এবং (৪) রায়হান (পলাতক) গণের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করতঃ উক্ত ধারায় বর্ণিত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডে অনাদায়ে আরো ০৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো।
অপর অভিযুক্ত আসামী (১) এলেম এবং (২) ফরিদ ফকির(পলাতক) দ্বয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের ২জনকে দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় গঠিত অভিযোগের দায় হতে খালাস প্রদান করা হলো।
মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী রুবেল মন্ডল এর মৃত্যুদন্ডাদেশ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম ঞযব ঈড়ফব ড়ভ ঈৎরসরহধষ চৎড়পরফঁৎব, ১৮৯৮ এর ৩৭৪ ধারার বিধান মতে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হোক। দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী (১) রাহাত বিশ্বাস @পিয়াল এবং (২) রায়হান পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার কিংবা স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার তারিখ হতে সাজা কার্যকর হবে। দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী (১) রাহাত বিশ্বাস @পিয়াল এবং (২) রায়হান দ্বয়কে গ্রেফতার পূর্বক সাজা ভোগের নিমিত্তে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করা হোক।
খালাসপ্রাপ্ত অভিযুক্ত আসামী এলেমকে অন্য কোনো মামলায় আবশ্যক না হলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। খালাসপ্রাপ্ত পলাতক আসামী ফরিদ ফকিরের বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা বিনা তামিলে ফেরত চাওয়া হোক।’
মামলা সূত্রে জানা গেছে, নিহত নাহিদ হাসান মৃদুল দাদশী ইউনিয়নের আগমাড়াই গ্রামের বাসিন্দা এবং ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোমিন মোল্লার ছেলে। ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজ করার সময় উল্লেখিতরা মেম্বার মোমিন মোল্লার কাছে অবৈধভাবে চাঁদা দাবী করায় তিনি দিতে অস্বীকার করলে আসামীরা ক্ষুদ্ধ হয়। ২০১৪ সালের ১৯শে জুন সকালে মোমিন মোল্লার ছেলে মৃদুল ইয়াছিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আসলে চাঁদা দাবীর জের ধরে আসামীরা স্কুলের গেট থেকে তাকে কথা আছে বলে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরে স্কুলের পাশে রেলওয়ের ক্যারেজ এলাকায় মৃদুলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নাভির নিচে ধারালো অস্ত্র ঠুকিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃদুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার ২দিন পরে ২১শে জুন মৃদুলের পিতা মোমিন মোল্লা বাদী হয়ে ৭জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। রাজবাড়ী থানার মামলা নং-৩১। ধারাঃ ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ।
এ হত্যা মামলা দায়েরের দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১৮ই জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ জহুরুল ইসলাম ও এসআই মিজানুর রহমান উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দীর্ঘ ৮ বছর বিচারাধীন থাকার পর বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা শেষে গতকাল ২৫শে আগস্ট উক্ত রায় ঘোষণা করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. নেকবর হোসেন মনি।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।