বিধান কুমার।। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচরের বাহাদুরপুর গ্রামে মাগুরা জেলা থেকে গোয়ালন্দের দবিলা ফসলের মাঠ এখন কালিজিরা ও ধনিয়ার এবং সরিষা ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করছেন চার যুবক। ক্ষেতের পাশে বা ফাঁকা স্থানে মৌবাক্স স্থাপন করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা। ০২ জানুয়ারী বুধবার দুপুরে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মাঠে মাগুরা জেলার শালিকা থানার দেবিলা গ্রাম থেকে প্রবীর বিশ্বাস, হোসেন আলী, আবদুল্লাহ, রফিকুল নামের চার মৌচাষি মধু সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছে। মৌচাষিদের মৌবাক্সগুলো থেকে হাজার হাজার ইউরোপিয়ান মেলিফেরা জাতের মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে কালিজিরা ও ধনিয়া এবং সরিষা ফুলের মাঠে। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সের ভেতরে চাকে জমা করছে মৌমাছিরা। আর কৃত্রিম পদ্ধতিতে এ সব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌচাষিরা।
মৌচাষি আকবর আলী বলেন, বাহাদুরপুর গ্রামের মাঠে ১৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছি। প্রতিটি বক্সে ৭টি থেকে ৮টি ফ্রেম সাজানো আছে। সাত দিন পর পর মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। কালোজিরা ফুলের ও সরিষা ফুলের মধু পাইকারি ৭শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ মধু আমরা সংগ্রহ করি। তবে আমরা এই মাঠে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এসেছি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করবো। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী আহমেদ খান বলেন, মৌচাষিরা আমাদের জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপন করেছে। আগে শুনতাম মৌমাছি সরিষা, কালিজিরা ও ধনিয়া ফুলে পড়লে ফুল নষ্ট হয় ও ফলন কম হয়। আর এখন জানি, মৌমাছি ফসলের জন্য অনেক উপকারী। মৌমাছি ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করে। এতে ফুলের পরাগায়ন হয়। এটি ফসলের জন্য খুবই উপকারী এবং ফলন বৃদ্ধি করে। মৌচাষি রেজাউল করিম বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এ বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো হয়। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাত থেকে আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বিশেষ কায়দায় লাগানো হয় এক ধরনের সিট। পরবর্তীতে বাক্সগুলো সরিষা কালিজিরা ও ধনিয়া ক্ষেতের পাশে বা ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। আমরা গত বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে এ মধু সংগ্রহ করছি। প্রথমদিকে বাক্সের পরিমাণ ছিল ৮০টি বর্তমানে খামারে ১৫০টি মৌবাক্স আছে। এক সময় কৃষকদের মাঝে ভুল ধারণা ছিল সরিষা কালিজিরা ও ধনিয়া ফুলে মৌমাছি পড়লে ফুল নষ্ট হবে এবং ফলন কম হবে। কৃষকদের মাঝে সে ধারণা এখন পরিবর্তন হয়েছে। এই মৌসুমে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে এ মধু সংগ্রহ করা হয়। আমরা মূলত ৬ মাস মধু সংগ্রহ করি সরিষা, কালিজিরা, ধনিয়া, লিচু ফুল ও সুন্দরবন থেকে। আর বাকি সময় মৌমাছিকে চিনি খায়িয়ে খামারে রাখা হয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খোকন উজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভায় ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা, কালিজিরা ৩০০ হেক্টর ও ধনিয়া ৩১৯ হেক্টর চাষাবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। প্রশিক্ষিত কিছু মৌ চাষি আছে যারা প্রতি বছর উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রবি মৌসুমে এ সকল জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে। ক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করায় ফুলে পরাগায়নের ফলে এ সকল ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়। মধু উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ফলনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে কৃষকেরা নিজেরাই মৌবাক্স স্থাপন করায় উৎসাহিত হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।