পাবনায় ভিক্ষুককে কুপিয়ে হত্যা করলো ভিক্ষুক! খুনে ব্যবহৃত চাকুসহ খুনি ভিক্ষুক গ্রেফতার
প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ ,৯ মে, ২০২১ | আপডেট: ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ ,১১ মে, ২০২১
স্টাফ রিপোর্টার।। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিশোধমূলকভাবে আলেয়া ওরফে আল্লাদি (৫৫) নামের ভিক্ষুককে ধারালো ক্রিস দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ভিক্ষুক কল্পনাকে গ্রেফতার করেছে পাবনা সদর থানা পুলিশ। কল্পনার দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।
গত ৮ মে-২১ শনিবার সকাল সোয়া ১০ ঘটিকায় কুষ্টিয়া হতে তাকে আটক করা হয়।
যাকাতের কাপড় নেওয়ার বিষয় নিয়া ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরিয়া- পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার চরমানিকদিয়া গ্রামের মৃত. শুকুর খন্দকারের ও বর্তমান হেলাল খানের স্ত্রী আলেয়া ওরফে আল্লাদি (৫৫) এবং তার মেয়ে লিপি বেগম (২৫) এর অজ্ঞাত মহিলার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উক্ত মহিলার পক্ষে অজ্ঞাত এক পুরুষ ও অন্যান্য মহিলা মিলে আল্লাদি ও তার মেয়ে লিপিকে চাকু দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় স্হানীয় একজন মহিলা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত পাবনা সদর হাসপাতাল অর্থোপেডিক্স সার্জারী ওয়ার্ডে আনুমানিক পৌনে ১১ ঘটিকায় ভর্তি করে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় আল্লাদি’র অবস্থা ভালো না, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফাড করার প্রয়োজন। এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক সোয়া ১১ ঘটিকায় আল্লদি মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনার পর পর সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে চিহ্নিত করা হয়। আসামী ভাসমান ভিক্ষুক, সে প্রায় সময় কুষ্টিয়ায় অবস্থান করে।
মামলাটি রুজুর পর সদর ফাড়ির ওসি মোঃ আবুল কালাম তথ্য পযুক্তির মাধ্যমে আসামি কল্পনা কে কুষ্টিয়া হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটক করিতে সক্ষম হন। আসামি কল্পনার দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয় এবং বিজ্ঞ আদালতে আজ ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গত শবে বরাতের রাতে ভিক্ষুক আল্লাদী ও ভিক্ষুক কল্পনা ভিক্ষা করতে আরিফপুর গোরস্থান মসজিদের যায়। সেখানে সকল ভিক্ষুক লাইন হয়ে বসে ভিক্ষা চাইতে থাকা কালে ভিক্ষুক আল্লাদী তার মেয়ে ও নাতনী সহ ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে থাকে। এতে ভিক্ষুক কল্পনা খুদ্ধ হয়ে আল্লাদীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয় এবং আল্লাদী লাঠি দ্বারা একটি আঘাত করলে কল্পনার বাম চোখের উপর লেগে চোখ ফুলে উঠে। এর পর কল্পনা তার বাড়ি চলে আসে। এর ২/৩ দিন পর কল্পনার স্বামী ভিক্ষুক বাবলু কুষ্টিয়া এলাকা হতে ভিক্ষা করিয়া বাড়ি এসে তার স্ত্রী কল্পনা’র চোখ ফোলা দেখিয়া এর কারন জানতে চায়। কল্পনা তার স্বামীকে সবে বরাতের রাতের ঘটনা খুলে বলে। বাবলু তার স্ত্রীর নিকট সব শুনে ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ব্যক্ত করে এবং সেই কারনে সব সময় তার কাছে একটি চাকু রাখে। যাতে আল্লাদীর সাথে দেখা হলে সে প্রতিশোধ নিতে পারে।
ঘটনাক্রমে গত ৮/৫/২০২১ তারিখে ভিক্ষুক বাবলু ও তার স্ত্রী কল্পনা সকালে সাহায্য নেওয়ার জন্য বড় বাজার পানির ট্যাংকির সামনে লাইজু হাজির বাড়ির সম্মুখে আসিয়া ভিক্ষুক আল্লাদী কে দেখতে পায়। কল্পনা তখন আঙ্গুল দিয়ে তার স্বামী কে দেখিয়ে বলে যে ঐ যে আল্লাদী। আল্লাদী ইহা দেখিয়া কল্পনার দিকে তেড়ে আসে এবং বলে, কি তুই আজকেও আমার সাথে মারামারি করবি? কল্পনাও এগিয়ে গেলে তাহাদের মধ্যে হাতাহাতি ও চুল টানা টানি শুরু হয়। একদিকে আল্লাদী ও তার মেয়ে, অন্যদিকে কল্পনা। এই দেখিয়া বাবলু তাহার ব্যাগ হতে চাকু বাহির করিয়া এগিয়ে যায় এবং আল্লাদীর পেটে চাকু ঢুকিয়ে দেয়। বাবলু আল্লাদীর শরীরে বেশ কয়েকটি স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করিলে আল্লাদী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অন্যান্য ভিক্ষুক আগাইয়া আসিলে তাহারা দৌড়ে তাদের বাড়ি চলে যায় এবং চাকুটি পরিষ্কার করে রান্না ঘরের চালে গুজে রেখে কিছু কাপড়-চোপড় নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্য পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামীকে চিহ্নিত করে একটি হত্যা মামলাটি রুজুর পর সদর ফাড়ির ওসি মোঃ আবুল কালাম তথ্য পযুক্তির মাধ্যমে কুষ্টিয়া থেকে ভিক্ষুক কল্পনাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, পলাতক অপর আসামী বাবলুকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।