রাজবাড়ীতে সিন্ডিকেট করে বেশি মূল্যে সিগারেট বিক্রি;লংঘন হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন
প্রকাশিত: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ ,৮ জুন, ২০১৮ | আপডেট: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ ,৮ জুন, ২০১৮
বিশেষ প্রতিনিধি ।। সরকারের ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও রাজবাড়ীতে তামাকজাতদ্রব্য বিভিন্ন ধরনের সিগারেট প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করে পরিবেশক ও পাইকারী কয়েকজন ব্যাসায়ী (দোকনদার) জনসাধারনের নিকট থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
অপরদিকে, নিত্য প্রয়োজনিয় দ্রব্যমূলল্যের উর্দ্ধগতি ঠেকাতে, কখনও খারাপ দ্রব্য বাজারে বিক্রি ঠেকাতে বিভিন্ন সময় প্রশাসন বাজারে নেমে করছে অর্থ দন্ড। অথচ ভোক্তাদেরকে ঠকিয়ে জিম্বি করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা সেদিকে প্রশাসনসহ কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
প্রকাশ্যে ধুমপান যদি অপরাধ হয়, তাহলে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করা কেন অপরাধ নয়? এটাতো ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় দন্ডনীয় অপরাধ?
সিগারেট পরিবেশকরা ও হাতে গোনা ৩/৪টি পাইকারী দোকানের ব্যাবসায়ীরা জনসাধারনকে জিম্বি করে প্রতিবছর বাজট ঘোষনার এই সময়টাতে প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে বার বার একই ধরনের অপরাধ করবে/করে চেলেছে বিষয়টি জন-সাধারনের বোধগম্য নয়।
প্রতিবছর বাজেট পেশ হয়ে থকে জুন মাসের দিকে, আর তা কার্যকরিতা হয় অন্তত তার ১ মাস পর । অথচ দেখা যায় সংসদিয় অধিবেশনে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখার পরদিন হতেই রাজবাড়ীতে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কেন?
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এবার তামাকজাত দ্রব্য সিগারেটের ওপর একাধিক মূল্যস্তরভিত্তিক কর বৃদ্ধি করা হয়েছে কিনা তাহা জনসাধারন এখনও অবগত নয়। যার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি এখনও ।
ব্রিটিশ টোবাকো লিমিটেডের একাধিক সিগারেটের মধ্যে রাজবাড়ীতে বেশি চলে ডাবরি, স্টার, গোল্ডলিফ ও ব্যানসন সিগারেট । অপরদিকে, আকিজ কর্পোরেশন লিমিটেডের একাধিক সিগারেটের মধ্যে রাজবাড়ীতে সব চাইতে বেশী বিক্রি হয় রয়েল ও নেভী সিগারেট।
ডাবরি সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা ২৭ টাকা সেটা বিক্রি করছে ৩২ টাকা। রয়েল সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ২৭ টাকা আর বিক্রি করছে ৩২ টাকা। স্টার সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা ৪৫ টাকা সেটা বিক্রি করছে ৫৪ টাকা। নেভী সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ৪৫ টাকা আর বিক্রি করছে ৫৪ টাকা। গোল্ডলিফ সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা ১৪০ টাকা সেটা বিক্রি করছে ১৪৩ টাকা। ব্যানসন সিগারেট প্যাকেটের গায়ে মূল্য লেখা রয়েছে ২০২ টাকা আর বিক্রি করছে ২০৫ টাকা।
অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, নতুন মূল্যের সিগারেট বাজারে আসার আগেইে এখন থেকেই প্রকার ভেদে প্রতি প্যাকেট ৩ টাকা থেকে ১০ বেশী মূল্যে বিক্রি করছে রাজবাড়ীর পরিবেশকরা ও হাতে গোনা ৩/৪টি পাইকারী দোকানের ব্যাবসায়ীরা ।
সকল পরিবেশক ও পাইকারী দোকানের ব্যাবসায়ীরা মিলে প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক প্যাকেট সিগারেট বিক্রি করে প্রায় ৮/১০ লাখ টাকা অবৈধবাবে হাতিয়ে নিচ্ছে জনসাধারনের (ভোক্তাদের) কাছ থেকে। মাসিক হিসাবে এর অংক দ্বারায় প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকারও বেশী ।
এই ‘ব্রিটিশ টোবাকো লিমিটেড’ এর রাজবাড়ী পরিবেশক হচ্ছে মেসার্স তারেক আহমেদ দীপু এবং ‘আকিজ কর্পোরেশন লিমিটেড’ এর রাজবাড়ী পরিবেশক হচ্ছে জনতা ষ্টোর।
বড় বড় কয়েকটি দোকানদাররা প্রতি বছর বাজেট ঘোষনার এই সময়ের দিকে পরিবেশকের নিকট লক্ষ লক্ষ টাকার সিগারেট কিনে নিয়ে গোডাউন জাত করে রাখে। পাইকারী ব্যাবসায়ীদের সাথে যোগসাযশে সিন্ডিগেটের মাধ্যমে পরিবেশক ক্রাইসেস দেখিয়ে লোক দেখানো নাম মাত্র সেল করে।
শত শত ছোট দোকানদাররা পেট বাঁচানোর দ্বায়ে পরিবেশকের কাছ থেকে মাল না পেয়ে বাধ্যতামূলক ওই ৩/৪ টা বড় দোকানদারের নিকট থেকে গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট কিনতে বাধ্য হয়।
পাইকারী দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে- পানবাজারের মধ্যে পরিমল শাহ, স্বপন শাহার তেলের ঘড়ের সাথে রয়েছে গোবিন্দ শাহা, ফল বাজারের মধ্যে রয়েছে মনরঞ্জন শাহা, খলিপা পট্টি রয়েছে শহিদ ষ্টোর ।
প্রতিবছরই পরিমল শাহর গোডাউনে লুকানো থাকে অন্তত এক/দেড় কোটি টাকার সিগারেট, থাকতেও বলে নাই, মার্কেট আউট। মনরঞ্জন শাহার গোডাউনে থাকে প্রায় ৪০/৫০ লাখ টাকার সিগারেট, গোবিন্দ শাহার কাছে থাকে প্রায় ২০/২৫ লাখ টাকার এবং শহীদ ষ্টোরের কাছে থাকে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকার সিগারেট। প্রতি বছরের এই সময়ে পরমল শাহ অবৈধ ভাবে অন্তত ৫০ লাখ টাকা আয় করে থাকে।
প্যাকেটজাতবিহিন (লুচ) যে কোন দ্রব্যের ক্ষেত্রে যে কোন মূহুর্তে দাম বাড়তেও পাড়ে আবার কমতেও পারে, কারন গায়ে তো আর মূল্য লেখা থাকেনা । কিন্তু প্যাকেটজাত দ্রব্যের গায়ে তো মূল্য লেখা রয়েছে, সেই গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে বিক্রি করা গুরুতর অপরাধ এবং ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থি ।
এই সিন্ডকেট কারো নজরে না পরলেও গত বছর এই প্রতিবেদক রিয়াজুল করিমের চোখে ধরা পড়ে। এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম, সংবাদটি প্রশাসনের নজরে আসার পর ভোক্তা অধিকার আইনে দুই পরিবেশকের জরিমানা হয়েছিল।
এ বিষয়টি এ বছরে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর নাও থাকতে পারে বলে জনসাধারন মনে করেন । এ সিন্ডিকেট ব্যাসার বিষয়ে প্রশাসন জানতে পরলে এই অবৈধ ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। সে কারনে ভোক্তাদের অনুরোধক্রমে প্রশাসনের দৃষ্টিগোচরের উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো ।
অপরদিকে- মেয়াদ উত্তির্ন ও উৎপাদন তাং নাই। মূল্য লেখা নাই। ভোক্তা অধিকার আইনের আওতাধীন অপরাধ। টুথ ব্রাস, ফেস ওয়াস, কাঠ পেন্সিল, পেন্সিল রাবার, পেন্সিল কাটার সহ আরো অনেক পন্যের গায়ে/প্যাকেটে কোন মূল্য নাই। খুজলে এমন পন্য আরো পাওয়া যাবে। চোখ-কান খোলা রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছে সচেতন জনসাধারন।