বিশেষ প্রতিনিধি॥ স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও এক মাদ্রাসা সুপারকে মধুখালী পৌরসভা এলাকার জন্য সরকারীভাবে নিকাহ রেজিষ্ট্রার (কাজী) নিয়োগের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য। তথ্য প্রমাণস্বরূপ ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় পৌরসভাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
লিখিত অভিযোগ মতে, পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ পেতে আবেদনকারী মীর খবিরুল ইসলাম কোরকদি ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রার। শ্রীরামপুর জামে মসজিদের পাঞ্জেগানা ইমাম। খবিরুল ইসলাম এমপিও ভূক্ত ব্যাসদী দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার পদে কর্মরত। উক্ত খবিরুল ইসলাম মধুখালী উপজেলা ১১নং কোরকদি ইউনিয়ন মোল্লাডাঙ্গী গ্রামের মৃত মোতালেব মীরের ছোট ছেলে। তিনি কোরকদি ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, পৌরসভায় স্থায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের প্যানেল তৈরীর জন্য ১৯/০৮/২০১৮ইং তারিখে আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব বুলবুল আহম্মেদ স্বাক্ষরিত একটি চিটি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রেরণ করে। যার প্রেক্ষিতে মধুখালী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিস গত ০৯/০২/২১ইং তারিখে মধুখালী পৌরসভা এলাকার জন্য ০২ জন নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সরকারীভাবে নিয়োগের সার্কুলার জারী করেন।
এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ, যাচাই-বাছাই ও প্যানেল তৈরীর জন্য গঠিত ০৫ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য। যে সকল পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগ সংক্রান্ত কোন প্রকার ঝামেলা কিংবা মামলা নেই শুধুমাত্র পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার নিয়ম বা বিধান রয়েছে। কিন্ত স্থানীয় এমপি মোঃ মঞ্জুর হোসেন বুলবুল সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভূঁয়া তথ্য প্রদানকারী ওই খবিরুল ইসলামকে অন্তরভূক্ত করেই প্যানেল তৈরী করেন। এ ব্যাপারে গত ২৯/০৩/২১ইং তারিখে শতাধিক পৌরবাসী সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মোটা অংকের অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে এই কারসাজি হচ্ছে বলে অভিযোগকারীরা মনে করেন।
অভিযোগকারীরা তথ্য প্রমানসহ জানায়, সম্প্রতি মধুখালী সাব-রেজিস্ট্রার পৌরসভায় সরকারীভাবে স্থায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্য আইন পরিপন্থিভাবে কোরকদি ইউনিয়নের মোল্লাডাঙ্গী শ্রীরামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা মৃত মোতালেব মীরের ছেলে খবিরুর ইসলামকে মধুখালী পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গন্য করেন এবং প্যানেল তৈরীর সুপারিশ করেন। যা সরেজমিনে যে কেউ তদন্ত করলেই প্রামন মিলবে। পৌরসভার বাসিন্দা না হওয়া সত্তেও এই খবিরুল ইসলাম মীরকে মধুখালী পৌরসভার ০৬ নং শ্রীপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য একটি প্যানেল তৈরী করা হয়েছে বলে অভিযোগকারীরা দাবী করেন।
ঘটনাটি জানাজানি হলে পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৬নং ওর্য়াডের ওর্য়াড কমিশনার জাহিদুল ইসলাম জিন্নাহ ক্ষোভের সঙ্গে জানায়, খবিরুল ইসলাম মীরকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি ও জানি। তিনি ৬নং ওর্য়াডের মধ্যে একটু জায়গা ক্রয় করেছেন কিন্ত এখনো সেখানে কোন বাড়ী-ঘর নির্মাণ করেন নাই। সে পৌরসভার মধ্যে কোথায় বসবাস করেন না। তিনি জন্ম সূত্রে তার স্ত্রী-পুত্রসহ মোল্লাডাঙ্গীর শ্রীরামপুর গ্রামে বসবাস করেন বলে কমিশনার লিখিত প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন।
১১নং কোরকদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন জানায়, মীর মোঃ খবিরুল ইসলামকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি ও জানি, তিনি প্রায় ৮ বছর যাবত আমার কোরকদি ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন, তিনি ব্যাসদী দাখিল মাদ্রাসার সহ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন, খবিরুল ইসলাম কোরকদি ইউনিয়ন মোল্লাডাঙ্গী শ্রীরামপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা জানিয়ে চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র প্রেরন করেন।
এলাকাবাসী বলেন, তারা আশ্চর্য হচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রারের কার্মকান্ড দেখে। মাদ্রাসা সুপার আব্দুল হাই বলেন, খবিরুল ইসলাম মধুখালী পৌরসভার কোন বাসিন্দা নয়, তিনি কোরকদি ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা এবং কোরকদি ইউনিয়নের একজন ভূয়াঁ কাজী। খবিরুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটিকে ম্যানেজ করেই তার নাম প্যানেল ভূক্ত করেছেন, এই অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে মধুখালী সাব-রেজিস্ট্রার অফিস জড়িত। তিনি এ ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানোসহ এমপির সুপারিশ বাতিলের দাবী জানান।
এ বিষয়ে মধুখালী সাব-রেজিস্ট্রারকে তার মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন দিয়েও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নী।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ এস.এম. রিয়াজুল করিম
ফোনঃ০১৭৫১-৭৫৭৮৯২,০১৫৫৮-৫১৬৩৮২
কার্যালয়ঃ
পৌর নিউ মার্কেট, আই ভবন (২য় তলা, রুম নং-১২৫) ( জেলা স্কুলের সামনে), প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী।