আজ : রবিবার, ১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকা মার্কার হাইব্রিড প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে উত্তাল গোয়ালন্দ! দুই গ্রুপে সংঘাত, আহত ১


প্রতিবেদক
জনতার মেইল.ডটকম

প্রকাশিত: ৫:২৬ অপরাহ্ণ ,৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | আপডেট: ১:০০ পূর্বাহ্ণ ,২ অক্টোবর, ২০২০
নৌকা মার্কার হাইব্রিড প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে উত্তাল গোয়ালন্দ! দুই গ্রুপে সংঘাত, আহত ১

বিশেষ প্রতিনিধি।।  হাইব্রিড হঠাও ও হাইব্রিড রক্ষা কর নিয়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দুই গ্রুপে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর জের ধরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনের নৌকা’র হাইব্রিড প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে- “হাইব্রিড হটাও, ‘আওয়ামীলীগ বাঁচাও,, শ্লোগানে শ্লোগানে মূখরিত করে তোলে গোয়ালন্দ উপজেলার তৃনমূল আওয়ামীলীগ তথা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক বর্তমানের সহ-সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর সমর্থকবৃন্দ।

সম্প্রতি, বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে সদ্য যোগদানকারী ১০/১২/১৯ তারিখে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা আ’লীগের নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তফা মুন্সীকে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে ও নৌকা মার্কা বাতিলের দাবিতে- ৩০শে সেপ্টেম্বর-২০ বুধবার বেলা ১১.টায় গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।  হাইব্রিড হটাও কর্মসূচিতে, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে তৃনমূল আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মি অংশগ্রহন করেন। জানাগেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদ্যপ্রয়াত নুরুল ইসলাম মণ্ডলের হঠাৎ মৃত্যুতে তফসিল বাতিল হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তারা মাঠে নামায় এ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

মানববন্ধনে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন- মোস্তফা মুন্সি বিএনপি-জামায়াত থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে এসেছেন। তার মতো একজন হাইব্রিড নেতাকে নৌকা প্রতীক দেয়া আমরা মানি না। এ বিষয়ে স্থানীয় দলীয় এমপির সাথে কোনোরূপ আলোচনা না করেই কাজী ইরাদত আলী অপকৌশলে এ মনোনয়ন বাগিয়ে এনে দিয়েছেন। আমরা দলের মধ্যে থেকে পরীক্ষিত ও ত্যাগী কোনো নেতাকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

আপরদিকে, মানববন্ধনের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাইব্রিড রক্ষা করার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে শতশত নেতাকর্মী সকাল থেকে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন। উপস্থিত হন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তফা মুন্সি। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ৭-৮ কিলোমিটার যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে এবং যাত্রী ও চালকরা দুর্ভোগ পোহান। এসময় পুলিশ সবাইকে মহাসড়ক থেকে সড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এ অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী। তিনি সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর আপন ছোট ভাই।

হাইব্রিড রক্ষা কর্মসূচি শেষে উজানচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ দুপুর ১.টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি ব্রিজ এলাকায় পৌছালে সুজন ও নয়ন নামের দুই যুবক তার গতিরোধ করে তাকে মারধর করে এবং মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে। এঘটনায় তাকে প্রথমে গোয়ালন্দ হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিকাল ৫.টায় আবারো  বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।

এ বিষয়ে, মোস্তফা মুন্সি বলেন- আমি কোনোকালেই বিএনপি-জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে এটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাছাড়া দলীয় এমপি কাজী কেরামত আলী এবং তার ভাই কাজী ইরাদত আলীর অনুপ্রেরণায় আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছি বেশ কয়েক বছর হল। বিগত জাতীয় নির্বাচনে কাজী কেরামত আলীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার বিজয়ে অবদান রাখি। সেই সাথে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে থেকে দীর্ঘদিন ধরে জনসেবামূলক কাজ করে আসছি। এর মূল্যায়ন হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে আমাকে এখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা এর বিরুদ্ধে যাচ্ছেন তারা আওয়ামী লীগ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরিফুজ্জামান বলেন, আমরা উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে এবং শান্তি বজায় রাখতে মহাসড়কে অবস্থান নেই। কোনো গ্রুপকে বাধা দিতে বা কোনো সুবিধা করে দেয়া আমাদের লক্ষ্য ছিল না। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কালামের ওপর হামলার বিষয়ে শুনেছি, হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, রাজবাড়ীর গণমানুষের নেতা ৫ম বার নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ও ৪বার রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীকে আসন্ন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সন্মেলনে সভাপতি হিসাবে দেখতে চাই দাবিতে বিভিন্ন ফেস্টুন ও ব্যানার বানিয়ে গত ১০/৯/২০ইং তারিখে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জনগুরুত্বপূর্ন এলাকায় গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়সহ আশ-পাশের এলাকাকায় আমরা টনিয়ে দেয়। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, গত ১৪/৯/২০ তারিখ রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিরা প্রতিহিংসামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত সাইনবোর্ড ও ফেষ্টুনগুলো, ভাংচুর করে। যাহা রাষ্ট্রীয় আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।

এ ন্যাক্কার জনক ঘটনায় গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে ১৭ সেপ্টেম্বর-২০ বৃহস্পতিবার বেলা ১১.টায় গোয়ালন্দ রেলওয়ে স্টেশন এলাকার শহীদ মিনার চত্ত্বরে সাংবাদ সম্মেলন করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করে। এ ব্যাপারে, গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ইমরানুর রহমান সজল বাদী হয়ে গোয়লন্দঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

Comments

comments